রেগে গেলেন তো মরলেন! অতিরিক্ত রাগ ডেকে আনে ভয়ঙ্কর সব রোগ

কথায় আছে, রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন। রাগ একটি শক্তিশালী আবেগ যা প্রায়শই মানুষকে ভুল সিদ্ধান্ত নিতে, খারাপ কথা বলতে বা অন্যদের সাথে খারাপ ব্যবহার করতে প্ররোচিত করে। শুধু তাই নয়, রাগ মানসিক চাপ বৃদ্ধি করে এবং শরীর ও মনের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

২০১৮ সালে গ্যালাপের গ্লোবাল ইমোশনস রিপোর্টের তথ্য অনুসারে, গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ১৪০টি দেশের ১ লাখ ৫১ হাজার মানুষের মধ্যে ২২ শতাংশই অতিরিক্ত রাগের সমস্যায় ভুগছিলেন। অন্যদিকে, ৩৯ শতাংশ অংশগ্রহণকারী রাগের কারণে অত্যন্ত চিন্তিত বোধ করতেন। রাগ আসলে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় একটি মানসিক অবস্থা হলেও, যখন আমাদের চাপের মাত্রা বেড়ে যায় তখন এটি প্রায়শই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

তবে যেকোনো পরিস্থিতিতেই রাগ নিয়ন্ত্রণ করা বুদ্ধিমানের কাজ। জেনে নিন অতিরিক্ত রাগ ও চিৎকার কোন কোন রোগের ঝুঁকি বাড়ায়:

হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি: রেগে চিৎকার করলে শরীরে পাঁচটি প্রধান জিনিস ঘটে, যার মধ্যে অন্যতম হলো হঠাৎ হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, রেগে কিছু বলতে গেলেই মানুষ তর্কে জড়িয়ে পড়েন এবং তখনই হৃদস্পন্দন দ্রুত হয়। এর অর্থ হলো, রাগ রক্তচাপও বৃদ্ধি করে। এর ফলে ত্বক ও মুখ লালচে হয়ে যায় এবং শিরাগুলো স্পষ্ট হয়ে ওঠে। রাগের সময় শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হয় এবং হাত-পা স্বাভাবিকের চেয়ে ঠান্ডা হয়ে যায়, যা কখনো কখনো মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস: গবেষকরা জানতে পেরেছেন যে, অতীতের কোনো উত্তপ্ত তর্কের কথা মনে করলে বা রেগে চিৎকার করলে প্রায় ৬ ঘণ্টার জন্য আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। যারা খুব সহজেই রেগে যান, তারা প্রায়শই অসুস্থ থাকেন কারণ তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল থাকে। অতিরিক্ত রাগী মানুষেরা অজান্তেই শারীরিক বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলেন।

মেটাবলিজম কমে যাওয়া: রেগে গেলে স্ট্রেস সৃষ্টিকারী রাসায়নিক মস্তিষ্ক ও শরীরে প্লাবিত হয়, যা একই সাথে মেটাবলিজমের পরিবর্তন ঘটায়। যারা অতিরিক্ত রাগের সমস্যা পুষে রাখেন, তারা নিয়মিত মাথাব্যথা, উদ্বেগ, অনিদ্রা ও হজমের সমস্যায় ভুগতে পারেন।

ত্বকের সমস্যা বৃদ্ধি: রাগের কারণে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা, যেমন অ্যাকজিমা ও নানা ধরনের চর্মরোগ শরীরে বাসা বাঁধতে পারে। এমন মানুষের স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও অনেক বেশি থাকে।

ব্যথা বৃদ্ধি: রেগে চিৎকার করার কারণে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার সমস্যায় ভুগতে পারেন! কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের সামনে বাবা-মা চিৎকার করলে শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয় এবং তাদের মানসিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। এমন শিশুরা বড় হলে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথায় ভুগতে পারে, যার মধ্যে পিঠে ও ঘাড়ে ব্যথা, মাথাব্যথা ও বাতের সমস্যা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, তর্কের সময় নিজেকে জয়ী প্রমাণ করতে বেশিরভাগ মানুষই অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন, যা তাদের ব্যক্তিত্বের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে।

রাগ প্রতিরোধের সহজ উপায় হলো গভীরভাবে শ্বাস নেওয়া, গান শোনা অথবা শান্ত স্থানে কিছুক্ষণ একা সময় কাটানো। অতিরিক্ত রাগের সমস্যা থেকে নিজেকে বাঁচাতে অবশ্যই মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। মনে রাখবেন, রাগ আপনার শরীর ও মন উভয়ের জন্যই নীরব ঘাতক।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy