দৈনন্দিন কিছু বদঅভ্যাসেই বাড়ছে ব্রেইন স্ট্রোকের ঝুঁকি! জেনে নিন সুরক্ষার উপায়

ব্রেইন স্ট্রোক একটি জটিল রোগ যা মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশে রক্ত সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হলে ঘটে। এর ফলে মস্তিষ্কের টিস্যু অক্সিজেন ও পুষ্টির অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এমন কিছু অভ্যাস রয়েছে যা নীরবে ব্রেইন স্ট্রোকের ঝুঁকি বহুগুণে বাড়িয়ে তোলে। অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এই ঝুঁকির প্রধান কারণ। তাই, নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে এবং সচেতন থাকতে আসুন জেনে নেওয়া যাক সেই অভ্যাসগুলি সম্পর্কে যা ব্রেইন স্ট্রোকের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে।

১. ধূমপান:

আমাদের দেশে ধূমপানের অভ্যাস অত্যন্ত পরিচিত এবং ক্ষতিকর। এটি কেবল ফুসফুস বা হৃদরোগের জন্যই খারাপ নয়, ব্রেইন স্ট্রোকের ঝুঁকিও মারাত্মকভাবে বাড়িয়ে তোলে। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ জন হপকিন্সের মতে, ধূমপান ব্রেইন স্ট্রোকের ঝুঁকি প্রায় দ্বিগুণ করে দিতে পারে। সিগারেটের ধোঁয়ায় থাকা রাসায়নিক পদার্থ রক্তনালীগুলিকে সংকুচিত করে এবং রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা বৃদ্ধি করে, যা স্ট্রোকের মূল কারণ।

২. কায়িক শ্রমের অভাব:

শারীরিক কার্যকলাপের অভাব বা নিষ্ক্রিয় জীবনযাপন শুধু ওজন বৃদ্ধিই করে না, এটি অনেক গুরুতর রোগেরও জন্ম দিতে পারে। এর মধ্যে অন্যতম হলো ব্রেইন স্ট্রোকের ঝুঁকি বৃদ্ধি। নিয়মিত ব্যায়াম না করা এবং অলস জীবনযাপন রক্ত সঞ্চালনকে ব্যাহত করে এবং হৃদরোগের সম্ভাবনা বাড়ায়, যা পরবর্তীতে স্ট্রোকের কারণ হতে পারে। তাই, এই ঝুঁকি এড়াতে নিয়মিত ব্যায়াম করা, স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করা এবং অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার অভ্যাস পরিবর্তন করা জরুরি।

৩. অ্যালকোহল গ্রহণ:

অনেকেই জানেন যে মদ্যপান বা অ্যালকোহল গ্রহণ স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দেয়। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ জন হপকিন্স আরও বলেন, মদ্যপান রক্তচাপ দ্রুত বৃদ্ধি করে, যা মস্তিষ্কের রক্তনালীগুলির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর এবং স্ট্রোকের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে। পরিমিত মদ্যপানও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, তাই এই অভ্যাস ত্যাগ করাই বুদ্ধিমানের কাজ।

৪. অন্যান্য কারণসমূহ:

উপরের তিনটি প্রধান কারণ ছাড়াও আরও কিছু বিষয় রয়েছে যা ব্রেইন স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ (হাইপারটেনশন), রক্তে উচ্চ কোলেস্টেরলের মাত্রা, ডায়াবেটিস (বহুমূত্র রোগ) এবং অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন বা অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের মতো স্বাস্থ্য সমস্যাগুলিও ব্রেইন স্ট্রোকের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করে। যাদের এই ধরনের রোগ রয়েছে, তাদের নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া এবং রোগের সঠিক চিকিৎসা করানো অত্যন্ত জরুরি।

পরিশেষে বলা যায়, সচেতনতা এবং সঠিক জীবনযাপন পদ্ধতির মাধ্যমেই ব্রেইন স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব। ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করা, নিয়মিত শরীরচর্চা করা এবং স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের পাশাপাশি বিদ্যমান রোগগুলির সঠিক চিকিৎসা করানোই ব্রেইন স্ট্রোক থেকে সুরক্ষিত থাকার প্রধান উপায়।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy