থাইরয়েড, গলার সামনের দিকে অবস্থিত একটি ছোট, প্রজাপতি-আকৃতির গ্রন্থি, যা শরীরের গুরুত্বপূর্ণ কার্যকারিতায় অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। এটি তিনটি প্রধান হরমোন নিঃসরণ করে যা আমাদের শরীরের বৃদ্ধি, কোষের মেরামত এবং বিপাক প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। তবে, এই হরমোন উৎপাদনে ভারসাম্যহীনতা দেখা দিলে থাইরয়েড রোগ বা থাইরয়েড ব্যাধি সৃষ্টি হতে পারে। ক্লান্তি, চুল পড়া, ওজন বৃদ্ধি এবং অতিরিক্ত ঠান্ডা লাগার মতো লক্ষণগুলি এই রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে দেখা যায়।
তবে উদ্বেগের বিষয় হলো, থাইরয়েডের সমস্যা গুরুতর রূপ নিলে এর প্রভাব চোখেও পড়তে পারে। চিকিৎসকদের মতে, রোগটি যখন জটিল পর্যায়ে পৌঁছায়, তখন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (ইমিউন সিস্টেম) চোখের চারপাশের পেশী এবং অন্যান্য টিস্যুতে আক্রমণ করতে শুরু করে। এর ফলস্বরূপ চোখে প্রদাহ সৃষ্টি হয় এবং এমনকি দৃষ্টিশক্তিও হারাতে পারে। এই অবস্থাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় থাইরয়েড চোখ বা থাইরয়েড আই বলা হয়।
থাইরয়েড চোখের সমস্যার কারণ:
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, থাইরয়েড সম্পর্কিত চোখের জটিলতা তখনই দেখা দেয় যখন শরীরের ইমিউন সিস্টেম ভুলবশত চোখের চারপাশের জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করতে শুরু করে। এই সময়, ইমিউন সিস্টেম অ্যান্টিবডি প্রেরণ করে, যা চোখের চারপাশে অবস্থিত চর্বি ও টিস্যুকে আক্রমণ করে। যদিও বিজ্ঞানীরা এখনও নিশ্চিত নন যে ঠিক কী কারণে ইমিউন সিস্টেম এই ধরনের অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দেখায়, তবে তারা এর মূল কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
থাইরয়েডে চোখের রোগের লক্ষণ:
থাইরয়েড চোখের সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি সাধারণত দেখা যায়:
চোখ ফুলে যাওয়া এবং চোখ পুরোপুরি বন্ধ করতে অসুবিধা হওয়া।
চোখ লাল হয়ে যাওয়া।
চোখে জ্বালাপোড়া অনুভব করা।
চোখে ব্যথা ও চাপ অনুভূত হওয়া।
চোখ অতিরিক্ত শুকনো লাগা অথবা অনবরত জল পড়া।
বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, যদি কোনও ব্যক্তি থাইরয়েডে আক্রান্ত হন, তবে চোখের যে কোনও সমস্যা দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা সম্ভব। এর পাশাপাশি, ধুলাবালি ও উজ্জ্বল আলো থেকে চোখকে সুরক্ষিত রাখা অপরিহার্য। সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু করলে থাইরয়েড চোখের সমস্যার জটিলতা অনেকাংশে এড়ানো সম্ভব।
