বেহিসেবি জীবনযাপন এবং কিটো ডায়েটের মারাত্মক পরিণতি

খাদ্যাভ্যাসে অনিয়ম, ঘুমের অভাব, আর যখন তখন বাইরের খাবার খাওয়ার প্রবণতা – এই যেন এখনকার প্রজন্মের অনেকেরই দৈনন্দিন চিত্র। এর ফলস্বরূপ শরীরে বাড়ছে মেদ, আর সেই কারণে আয়নার সামনে দাঁড়ালেই মন খারাপ হচ্ছে তন্বীদের। দ্রুত ওজন কমানোর আশায় অনেকেই ঝুঁকছেন সেলিব্রিটিদের পছন্দের কিটো ডায়েটের দিকে। শোনা যায়, এই ডায়েটের মাধ্যমে খুব কম সময়েই শরীরের বাড়তি মেদ ঝরে যায়। কিন্তু মেদ কমাতে গিয়ে অভিনেত্রী মিষ্টি মুখোপাধ্যায়ের মতো পরিণতিও তো হতে পারে! একটানা কিটো ডায়েটের ফলে সম্প্রতি তাঁর অকালমৃত্যু হয়েছে। তাই এই ডায়েটের উপকারিতা এবং অপকারিতা ভালোভাবে জেনে তবেই গ্রহণ করুন। অন্যথায়, বিপদ ঘনিয়ে আসতে বেশি সময় লাগবে না।

আধুনিক বিশ্বে কিটো ডায়েটের নাম শোনেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। বিশেষ করে তারকাদের মধ্যে এই ডায়েট অত্যন্ত জনপ্রিয়। কারণ, মাত্র দশ দিনের মধ্যেই মেদ কমে যাওয়ার বহু উদাহরণ রয়েছে। চলুন, প্রথমে জেনে নেওয়া যাক এই ডায়েটে কী কী খাওয়া যাবে এবং কোন খাবারগুলি একেবারেই বর্জন করতে হবে।

কী খাবেন: কিটো ডায়েটে মাছ, মাংস, ডিম খাওয়া যেতে পারে। পাশাপাশি পালং শাক, মেথি শাকের মতো সবুজ শাকসবজিও খাদ্যতালিকায় যোগ করা যায়। ব্রকোলি, লেটুস, ফুলকপি, স্যালাড, মাখন, আখরোট, চিজ এবং নারকেল তেলও এই ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

কী খাবেন না: এই ডায়েট অনুসরণ করলে আলু আপনার খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। গম, ভুট্টা, ডালিয়া, চা ও চিনিও খাওয়া যাবে না। এছাড়াও, কলা, আপেল, কমলালেবুর মতো ফলগুলিও সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।

এখন প্রশ্ন হল, কেন তারকারা কিটো ডায়েট এত পছন্দ করেন? কারণ, এই ডায়েট প্রক্রিয়ায় শরীর ৭০ শতাংশ ফ্যাট, ২৫ শতাংশ প্রোটিন এবং মাত্র ৫ শতাংশ কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করে। ট্রাইগ্লিসারাইড এবং কোলেস্টেরলের সমস্যা থাকলে অনেক সময় এই ডায়েটের পরামর্শ দেওয়া হয়। লো-ফ্যাট ডায়েটের তুলনায় এই ডায়েটে দ্রুত ওজন কমানো সম্ভব। এছাড়াও, এই ডায়েট শুরু করার কয়েক দিনের মধ্যেই ক্ষুধা কমে যায়। কিটো ডায়েট অনুসরণ করে সহজেই পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS), ডায়াবেটিস এবং স্থূলতার মতো সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় বলে মনে করা হয়।

ম্যাজিকের মতো এই ডায়েটে মেদ কমলেও, এর ক্ষতিকর দিকও যথেষ্ট। কিটো ডায়েটের ফলে শরীরের পেশি দুর্বল হয়ে যেতে পারে। হৃদযন্ত্রের উপরও এর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে। দীর্ঘ সময় ধরে কিটো ডায়েট করলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। এমনকি, ক্যান্সার ধরা পড়লে কিটো ডায়েট করা অনেক রোগী কেমোথেরাপির ধকল সহ্য করতে পারেন না, যার ফলে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। তাই সুস্থ থাকতে চাইলে অবশ্যই ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ ছাড়া ভুলেও কিটো ডায়েট শুরু করবেন না। মনে রাখবেন, অপরিকল্পিত ডায়েট আপনার জীবন কেড়ে নিতে পারে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy