শরীরের অবাঞ্ছিত লোম দূর করার আকাঙ্ক্ষা অনেকের মধ্যেই দেখা যায়। বিশেষ করে নারীরা হাত, পা ও মুখের লোম অপসারণের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকেন। ওয়াক্সিং এবং শেভিংয়ের পাশাপাশি লোমনাশক ক্রিম ব্যবহার করাও একটি জনপ্রিয় উপায়। এর সহজ ব্যবহার পদ্ধতির জন্য অনেকেই এই ক্রিম ব্যবহার করতে আগ্রহী হন। তবে প্রশ্ন হলো, এই লোমনাশক ক্রিমগুলো কি সত্যিই ত্বকের জন্য নিরাপদ?
এখন পর্যন্ত এমন কোনো জোরালো প্রমাণ পাওয়া যায়নি যে লোম তোলার ক্রিম ব্যবহার করলে ত্বকের মারাত্মক ক্ষতি হয়। তবে এই ধরনের ক্রিম ব্যবহারের পূর্বে এর সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে অবগত থাকা জরুরি। লোম পরিষ্কারের জন্য ক্রিম ব্যবহার করলে কী কী ধরনের সমস্যা হতে পারে, তা জেনে নেওয়া যাক:
ত্বকের রং কালো হয়ে যাওয়া:
অনেকেই ত্বক পরিষ্কার ও উজ্জ্বল করার আশায় লোমনাশক ক্রিম ব্যবহার করেন। তবে এই ক্রিম ব্যবহারের ফলে ত্বকের রং কালো হয়ে যেতে পারে। এই ধরনের ক্রিমে ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড ও পটাসিয়াম হাইড্রোক্সাইডের মতো রাসায়নিক যৌগ থাকে। এই উপাদানগুলো লোমকে গলিয়ে দেয় ঠিকই, কিন্তু অতিরিক্ত বা ভুল প্রয়োগের কারণে ত্বকের নির্দিষ্ট অংশে কালো দাগ সৃষ্টি হতে পারে।
ত্বকে জ্বালাপোড়া:
লোম পরিষ্কার করার ক্রিম ত্বকে অস্বস্তি ও জ্বালাপোড়ার কারণ হতে পারে। অনেক ব্যবহারকারীর ত্বকেই এই ধরনের ক্রিম ব্যবহারের ফলে প্রদাহ দেখা দেওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে। এর প্রধান কারণ হলো ক্রিমে উপস্থিত ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড এবং পটাসিয়াম হাইড্রোক্সাইড। ত্বকের জ্বালাপোড়া এড়াতে এই ধরনের ক্রিম ব্যবহার না করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
ত্বকের পিএইচ মাত্রায় পরিবর্তন:
আমাদের ত্বকের স্বাভাবিক অম্লতার একটি নির্দিষ্ট মাত্রা থাকে। লোমনাশক ক্রিম ব্যবহারের ফলে ত্বকের ক্ষারের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এর ফলস্বরূপ, ত্বকের স্বাভাবিক পিএইচ মাত্রায় পরিবর্তন ঘটে। এই পরিবর্তনের কারণে ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যেতে পারে এবং ত্বকে ফাটার সমস্যা দেখা দিতে পারে। একইসাথে ত্বকে প্রদাহ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে।
অ্যালার্জির ঝুঁকি:
যাদের অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে, তাদের লোম পরিষ্কার করার জন্য ক্রিম ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ এই ধরনের ক্রিম অ্যালার্জির সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। এমনকি যাদের আগে থেকে অ্যালার্জি নেই, তারাও এই ক্রিম ব্যবহারের কারণে অ্যালার্জির শিকার হতে পারেন। তাই লোমনাশক ক্রিম ব্যবহারের আগে ত্বকের ছোট একটি অংশে লাগিয়ে পরীক্ষা করে দেখা উচিত। যদি কোনো অ্যালার্জির লক্ষণ না দেখা যায়, তবেই সম্পূর্ণভাবে ব্যবহার করা নিরাপদ।
তীব্র গন্ধের কারণে অস্বস্তি:
লোম পরিষ্কার করার ক্রিমে একটি শক্তিশালী গন্ধ মেশানো হয়ে থাকে। এই গন্ধ অনেকের কাছেই বেশ অস্বস্তিকর হতে পারে। বিশেষত যাদের ঘ্রাণশক্তি বেশি, তারা এই ধরনের ক্রিমের গন্ধের কারণে সমস্যায় পড়তে পারেন। গন্ধের কারণে অস্বস্তি বোধ হলে লোম পরিষ্কারের অন্য পদ্ধতি বেছে নেওয়াই শ্রেয়।
পরিশেষে বলা যায়, লোমনাশক ক্রিম ব্যবহারের কিছু সুবিধা থাকলেও এর সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে অবগত থাকা জরুরি। ত্বককে সুরক্ষিত রাখতে এবং অপ্রত্যাশিত সমস্যা এড়াতে এই ক্রিম ব্যবহারের পূর্বে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।