নাক ডাকা একটি অতি সাধারণ সমস্যা, যা কেবল ঘুমের গুণমানকেই ব্যাহত করে না, বরং সঙ্গীর ঘুমেরও ব্যাঘাত ঘটায়। অনেক সময় এটি অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ার প্রাথমিক লক্ষণও হতে পারে। তবে, কিছু সহজ ঘরোয়া প্রতিকার অনুসরণ করে এই বিরক্তিকর সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
আসুন, নাক ডাকা নিয়ন্ত্রণে আনার কয়েকটি কার্যকর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক—
১. আয়ুর্বেদিক ঘি ব্যবহার: ব্রাহ্মী ভেষজ দিয়ে সিদ্ধ করা সামান্য ঘি ঘুমের আগে নাকের ছিদ্রে কয়েক ফোঁটা করে প্রয়োগ করুন। আয়ুর্বেদ অনুসারে, ঘিয়ের ঔষধি গুণ রয়েছে যা নাক ডাকা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
২. জলপাই তেল সেবন: প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক চামচ জলপাই তেল পান করার অভ্যাস নাক ডাকার সমস্যা কমাতে পারে। জলপাই তেল গলার পেশীকে শক্তিশালী করে এবং শ্বাসনালীর পথ পরিষ্কার রাখে, যা নাক ডাকার শব্দ কমাতে সহায়ক।
৩. নাক পরিষ্কার রাখা: অনেক সময় নাকের ছিদ্র বন্ধ থাকার কারণেও নাক ডাকার সমস্যা হতে পারে। লবণাক্ত জল দিয়ে নাক ধুয়ে ফেলা অথবা ঘুমানোর আগে গরম জলের ভাপ নেওয়া নাকের পথ পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে, ফলে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক হয়।
৪. পাশ ফিরে ঘুমানো: চিৎ হয়ে ঘুমালে জিহ্বা পিছনের দিকে গিয়ে শ্বাসনালীতে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। পাশ ফিরে ঘুমালে এই সমস্যা অনেকাংশে কমে যায় এবং নাক ডাকার তীব্রতা হ্রাস পায়।
৫. বিছানার মাথা উঁচু রাখা: ঘুমের সময় মাথা ও গলা সামান্য উঁচু করে রাখলে শ্বাসনালী খোলা থাকে, যা নাক ডাকা কমাতে সাহায্য করে। এর জন্য অতিরিক্ত বালিশ ব্যবহার করা যেতে পারে।
৬. ওজন নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত ওজন গলার চারপাশে ফ্যাট জমা করে, যা শ্বাসনালীকে সংকুচিত করে এবং নাক ডাকার কারণ হতে পারে। একটি সুস্থ ও স্বাভাবিক ওজন বজায় রাখা নাক ডাকা কমাতে সহায়ক।
৭. অ্যালকোহল ও সেডেটিভ পরিহার: ঘুমের আগে অ্যালকোহল বা ঘুমের ওষুধ (সেডেটিভ) গ্রহণ করলে গলার পেশী শিথিল হয়ে যায়, যা নাক ডাকার প্রবণতা বাড়ায়। তাই ঘুমানোর আগে এগুলো এড়িয়ে চলা উচিত।
৮. ধূমপান বর্জন: ধূমপান শ্বাসনালীতে প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং নাক ডাকার সমস্যা আরও বাড়িয়ে তোলে। ধূমপান ছেড়ে দেওয়া এই সমস্যার সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে।
৯. পর্যাপ্ত জল পান: শরীরকে পর্যাপ্ত পরিমাণে হাইড্রেটেড রাখা গলার টিস্যুকে নরম রাখতে সাহায্য করে, যা নাক ডাকা কমাতে পারে। তাই সারাদিনে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করা জরুরি।
এই সহজ ঘরোয়া প্রতিকারগুলি অনুসরণ করে আপনি আপনার নাক ডাকার সমস্যা অনেকাংশে কমাতে পারেন। তবে, যদি আপনার নাক ডাকা গুরুতর হয় অথবা এর সাথে অন্য কোনো উপসর্গ দেখা দেয়, তাহলে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।