আধুনিক কর্মব্যস্ততা ও অনিয়মিত জীবনযাত্রার কারণে আমাদের শরীরে বাসা বাঁধছে নানা ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব। এর মধ্যে অন্যতম হলো ডিপ্রেশন বা বিষণ্নতা। সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, পুরুষদের তুলনায় নারীরা এই মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। নারীদের মধ্যে বিষণ্নতার লক্ষণগুলো পুরুষদের মতোই হতে পারে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো – ক্রমাগত দুঃখবোধ, ঘুমের সমস্যা, ক্ষুধামন্দা বা অতিরিক্ত ক্ষুধা, ক্লান্তি এবং আকস্মিক ওজন হ্রাস।
নারীদের বিষণ্নতার নেপথ্যে কারণ:
বিশেষজ্ঞদের মতে, নারীদের শারীরিক গঠন ও হরমোনের ওঠানামা বিষণ্নতার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, মাসিক চক্রের সমস্যা, গর্ভাবস্থা, অনিয়মিত পিরিয়ড, বন্ধ্যাত্ব এবং মেনোপজের মতো শারীরিক পর্যায়গুলো নারীদের মধ্যে বিষণ্নতাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
শুধু শারীরিক কারণই নয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক চাপও নারীদের বিষণ্নতার জন্য বিশেষভাবে দায়ী। জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে নারীরা বিভিন্ন ধরনের মানসিক চাপের সম্মুখীন হন, যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে দুর্বল করে তোলে।
কীভাবে বুঝবেন ও মোকাবিলা করবেন:
মনে রাখা জরুরি, বিষণ্নতার প্রাথমিক পর্যায়ে আক্রান্ত ব্যক্তি দৈনন্দিন কাজকর্মে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন এবং একটি হতাশাজনক অনুভূতিতে ভোগেন। রোগের প্রকোপ বৃদ্ধির সাথে সাথে দুঃখবোধ, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, রাগ, বিরক্তি, কান্না এবং যৌন সম্পর্কের প্রতি অনীহার মতো লক্ষণগুলো ক্রমশ বাড়তে থাকে।
সঠিক চিকিৎসা না করালে, এই বিষণ্নতা তীব্র বা দীর্ঘস্থায়ী রূপ নিতে পারে এবং এর ফলে স্বাস্থ্যব্যাধি দেখা দিতে পারে। পরিচ্ছন্নতার অভাব, অনিদ্রা, ক্ষুধামন্দা এবং আত্মহত্যার চিন্তাভাবনার মতো গুরুতর সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নারীদের শরীরে হরমোন তাদের মানসিক ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই বিষণ্নতার চিকিৎসার সময় রোগীর দৈনন্দিন রুটিন ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন আনা অপরিহার্য, যা কোনোভাবেই অবহেলা করা উচিত নয়।
এই সমস্যা মোকাবিলায় খাদ্যাভ্যাসের দিকে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া জরুরি। তাই দ্রুত ক্যাফেইন, অ্যালকোহল এবং ভারী ও ধীরে হজমকারী খাবার ত্যাগ করা উচিত। অনেক রোগী বিষণ্নতা কিছুটা কমলেই ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেন, যা রোগের পুনরাবৃত্তির কারণ হতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ বন্ধ করা উচিত নয়।
বিষণ্নতা জীবনের যেকোনো সময়ে, যেকোনো মানুষের মধ্যে দেখা দিতে পারে। এই সমস্যা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করলে খুব সহজেই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। মনে রাখবেন, নিয়মিত ব্যায়াম মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক। তাই প্রতিদিন অন্তত ৪৫ মিনিটের জন্য ব্যায়াম করা উচিত।