পিরিয়ডসের ব্যথা কমানোর অন্যতম প্রধান এবং সহজ উপায় হল গরম জলের সেঁক নেওয়া। অতিরিক্ত ব্যথা হলে গরম জলের সেঁক নিতে পার… এক্ষেত্রে হট ওয়াটার ব্যাগটিকে কোমর বা তলপেটের দিকে রাখার চেষ্টা করো। একই সঙ্গে খেয়াল রাখা প্রয়োজন, জল যাতে খুব বেশি গরম না হয়। আর মাঝে-মাঝে ছোট কাপে করে ঈষৎ-উষ্ণ গরম জলও খেতে পার, এতে ব্যথা অনেকখানি কমবে। তা না হলেও অন্তত সাময়িকভাবে রিলিফ পাবে।
পিরিয়ডসের দিনগুলোতে আদাযুক্ত খাবার বেশি করে খাওয়ার চেষ্টা করো। একই সঙ্গে গরম জলে আদাকুচি করে, তাতে মধু এবং লেবুর রস মিশিয়ে খেতে পার। পেটের ব্যথা তাতে অনেকখানি কমবে।
আদার পাশে-পাশে তুলসী পাতাও কিন্তু পেটের ব্যথাতে বিশেষ উপকারি। তুলসী পাতার রস করে, সেই রস গরম জলে মিশিয়ে দিনে দু’-তিনবার খেতে পার। মুখের অরুচি ভাব যেমন কাটবে, তেমনই পেটের ক্রাম্পও কমবে।
এই সময় আমাদের শরীরে প্রচুর পরিমাণে জলের প্রয়োজন পড়ে, কাজেই বেশি করে জল খাওয়ার চেষ্টা করা উচিত। পেটে ব্যথা হলেও জলের বোতল দেখলে মোটেই নাক সিঁটকানো উচিত নয়।
আদা, তুলসীর উপকারিতা তো বলাই হল, তা ছাড়া দারচিনি গুঁড়ো করে গরম জলে দিয়ে সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেতে পার, পেটের ব্যথাতেও উপকার পাবে। এটা দিনে দুই থেকে তিনবার খাওয়ার চেষ্টা করো।
অনেক সময়ে অনিয়মিত পিরিয়ড্সের কারণে ব্যথা বাড়তে পারে, সেক্ষেত্রে গাজর এবং গাজরের রস বিশেষ উপকারি। গাজরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালশিয়াম, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ভিটামিন এ, সি, বি-১২… যা ওইসব দিনে শরীরের পুষ্টির খামতি পূরণে বিশেষ সাহায্য করে থাকে। কাজেই ডায়েট চার্চে গাজর রাখতেই পারো।
পিরিয়ড্স চলাকালীন অবশ্যই দিনে দু’-তিনবার গ্রি-টি খাবার চেষ্টা করো, এটি খুব ভাল ইউটেরাইন টনিক এবং শরীরকে ডি-টক্সিফায়েড করে থাকে।
পিরিয়ড্স চলাকালীন ক্যালশিয়াম-ম্যাগনেশিয়াম-এর সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করতে পার, এতে শরীরের পুষ্টির ঘাটতি পূরণ হবে। একই সঙ্গে পেশির দুর্বলতা কাটাতে সাহায্য করবে।
পিরিয়ড্সের দিনগুলোতে শাক-সবজি বেশি পরিমাণে খাবার চেষ্টা করো, মাছ-মাংস ইত্যাদি এড়িয়ে চলাই ভাল। তবে, শরীরে প্রোটিনেরও প্রয়োজন, কাজেই চিন্তা-ভাবনা করে ডায়েট মেনে চলার চেষ্টা করো।
অ্যালকোহল কিংবা স্মোকিং ওইসব দিনগুলোতে না করাই ভাল, এতে হরমোনাল ডিসব্যালেন্স ঘটে পেটের ব্যথা আরও বাড়তে পারে।
ক্যাফিন জাতীয় জিনিস আমাদের শরীরের পেশিগুলোকে অধিক পরিমাণে সংকুচিত করে ফেলে, সেক্ষেত্রে ব্যথার তীব্রতা বাড়তে পারে। কাজেই কফির নেশা থাকলে ওইসব দিনে কফির বদলে গ্রিন-টি খেতে পার।
পেটের ব্যথার কারণে মুড সুইং খুব স্বাভাবিক বিষয়… বন্ধুদের সঙ্গে অকারণে ঝগড়াও হতে পারে। মুড ভাল রাখতে ওই ক’টা দিন ডায়েট ভুলে চকোলেট একটু-আধটু খেতেই পার।
পিরিয়ডের সময়ে ফুট মাসাজ কিন্তু বিশেষ উল্লেখযোগ্য। শরীরের ক্লান্তি মেটাটে গরম জলে পা ডুবিয়ে বসে থাকতে পার, আরাম পাবে। কিছু-কিছু আকুপাংচার পয়েন্ট তলপেটের যন্ত্রণা কমাতে বিশেষভাবে সাহায্য করে, ন্যাচরাল আকুপাংচার অনেক বেশি উপকারি ওষুধের থেকে।
পিরিয়ড্সের দিনগুলো ছাড়া মাসের অন্যান্য দিনগুলো হালকা কিছু যোগাসন, প্রাণায়ম করতে পার। শরীর যেমন একদিক থেকে সুস্থ এবং তরতাজা থাকবে, তেমনি ওইসব দিনে ব্যথা অনেকখানি কমবে।
পিরিয়ড্স চলাকালীন একজায়গায় বসে বা শুয়ে না থাকাটাই ভাল। ব্যথার কথা ভুলে অন্য কাজে নিজেকে ইনভল্ভ রাখার চেষ্টা করো। নিজেকে যত সক্রিয় রাখবে, ততই ব্যথা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
আজকের দিনে বা আমাদের যে রুটিনমাফিক জীবন তাতে পলিসিসস্টিক ওভারি-র কারণে ব্যথা অনেক বেশি পরিমাণে হয়ে থাকে। কাজেই সেক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ডায়েট চার্ট এবং ওষুধ খাওয়াটা প্রয়োজন।