খাওয়াদাওয়া বা ডায়েট প্ল্যান সঠিক না হলে যে শরীর-স্বাস্থ্য মোটেই ভালো থাকবে না, সেটা আমরা সবাই জানি। ইন্টারনেটে বা সংবাদমাধ্যমে আজকাল স্বাস্থ্য সম্পর্কিত নানা তথ্য মেলে, সেগুলোও আমাদের প্রভাবিত করে নিশ্চিতভাবেই। সব মিলিয়ে স্বাস্থ্য সচেতনতা নিয়ে বেশ হইচই শুরু হয়েছে চারদিকে। আর তখনই যে অমোঘ প্রশ্নটা এসে পড়ছে তা হল, আমরা না জেনে-বুঝে বোকার মতো কিছু ভুল পদক্ষেপ নিয়ে ফেলছি না তো? কোন কোন ব্যাপারে আরও অনেক বেশি সচতেন হওয়া প্রয়োজন জানতে চান?
অরগ্যানিক বলে আপনি যা কিনছেন, তা কতটা বিশ্বাসযোগ্য?
ইদানীং অরগ্যানিক খাবার খাওয়ার হিড়িক পড়ে গিয়েছে চারদিকে। কাকে আমরা অরগ্যানিক বলছি? না যে সব শস্য-ফল-সবজি চাষের সময় রায়াসনিক সার ব্যবহার হচ্ছে না সেগুলিকেই মূলত অরগ্যানিক বা জৈব ফসলের মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তার পরিবর্তে যে সারগুলি ব্যবহার করা হচ্ছে, তা কতটা নিরাপদ সে বিষয়ে আপনার কোনও ধারণা আছে কী? তাছাড়া সেই খাবারগুলি থেকেই যে আপনি যথাযথ পুষ্টিগুণ পাচ্ছেন, তার নিশ্চয়তাই বা কে দিচ্ছে? অরগ্যানিক বা নন-অরগ্যানিক যে কোনও খাবারই ভালো করে ধুয়ে নিয়ে তার পর খান। সবচেয়ে ভালো হয় যদি নিজের জন্য প্রয়োজনীয় সবজিটুকু নিজেই ফলিয়ে নিতে পারেন।
‘লো ফ্যাট’ যে কোনও খাবারের মধ্যে চিনি আছে
যে কোনও প্রাকৃতিক খাবারের একটা ব্যালেন্স থাকে, দুধের সর বাদ দিয়ে তাকে ‘লো ফ্যাট’ করার চেষ্টা করছেন মানে আপনি প্রকৃতির সামঞ্জস্য নষ্ট করছেন। প্যাকেটজাত যে সব লো ফ্যাট ঘি, মাখন, দুধ, দই মেলে, তার প্রত্যেকটিই প্রসেসিংয়ের মধ্যে দিয়ে যায়। ফ্যাট বাদ দেওয়ার পর স্বাদ বাড়ানোর জন্য বাড়তি চিনি মেশানো হয়। তাই এই সব ফ্যান্সি লেবেলের চক্করে না পড়ে এমন জিনিস কেনার চেষ্টা করুন যা খাঁটি। যদি এমন কোনও দুধওয়ালার সন্ধান পান যিনি গোরু বা মহিষের দুধ তাজা দুয়ে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে যাবেন, তা হলে বরং তাঁর উপর আস্থা রাখতে পারেন।
প্যাকেটবন্দি ফ্যাট ফ্রি, সুগার ফ্রি সিরিয়াল খাওয়া অর্থহীন
প্যাকেটবন্দি সিরিয়াল বাটিতে ঢালছেন আর দুধ বা দই মিশিয়ে ঝটপট খেয়েই অফিস দৌড়োচ্ছেন বা বাচ্চাকে স্কুলে পাঠাচ্ছেন? বিজ্ঞাপনের মোহে ভুলে এই চক্করে পা দেওয়াটা নেহাতই মূর্খামি। যে কোনও প্যাকেটবন্দি রেডি টু ইট ব্রেকফাস্ট সিরিয়ালের মধ্যেই চিনি বা কর্ন সিরাপ থাকে, বেশিদিন তাজা রাখার জন্য নানা ধরনের রাসায়নিকও মেশানো হয়। রোলড ওটস সবচেয়ে কম প্রসেসড এবং তা রান্না করে তবেই খাওয়া যায়। বাকি যে কোনও কর্ন বা হুইট ফ্লেক্স বা মিউজ়লি খাওয়া আর মিষ্টি খাওয়ার মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই।
এনার্জি ড্রিঙ্ক বা এনার্জি বার খাচ্ছেন ব্যায়াম করার পর?
তার চেয়ে বরং ব্যায়াম না করে বিশ্রাম নিন! এনার্জি বারে চিনি ভরা… যে ক্যালোরি খরচ করার জন্য এতক্ষণ ঘাম ঝরালেন, তা মুহূর্তে ফের শরীরে ঢুকে গেল! যদি তাৎক্ষণিক এনার্জির প্রয়োজন অনুভব করেন, তা হলে বরং কলা খান।
রিফাইন্ড চিনির চেয়ে গুড় বা মধু ভালো
পরিষ্কার হিসেব হচ্ছে, চিনি, গুড় বা মধু সব ক’টিই আসলে গ্লুকোজ় হিসেবে রক্তস্রোতে মেশে। প্রতিটিই শরীর খুব তাড়াতাড়ি শোষণ করে। তাই সবগুলিই সমান ক্ষতিকর, বিশেষ করে যদি প্রয়োজনের অতিরিক্ত সেবন করেন। যে কোনও মিষ্টদ্রব্য থেকেই সাবধান থাকা উচিত।