অ্যাকোয়ারিয়ামে জল একটি প্রধান গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জলের মানের উপর অ্যাকোয়ারিয়ামে বসবাসকারী জীবের সাস্থ্য ও ঐ কৃত্রিম বাস্তুতন্ত্রের পরিবেশ নির্ভরশীল। তাছাড়া অ্যাকোয়ারিয়ামের স্বচ্ছ কাঁচের মতো জলে রঙিন মাছের খেলা দেখতে কার না ভালো লাগে, তাই আজ আমারা আজ অ্যাকোয়ারিয়ামের জল পরিষ্কার ও পরিবর্তন করা সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করবো।
অ্যাকোয়ারিয়ামের জল পরিষ্কার ও পরিবর্তন করার প্রয়োজনীয়তা:
নাইট্রেট ও নাইট্রাইট এর পরিমান বৃদ্ধি: অ্যাকোয়ারিয়ামের জলে বসবাসকারী জীবদের রেচন পদার্থ সরাসরি ঐ জলেই জমে। ফলে দীর্ঘদিন ধরে জল না পাল্টালে জলে রেচন পদার্থ মিশতে মিশতে জলে নাইট্রেট ও নাইট্রাইট জাতীয় দূষিত পদার্থের মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পায়, যা মাছের পক্ষে প্রাণনাশী।
ঘনত্ব বৃদ্ধি: বিশুদ্ধ জলের আপেক্ষিক গুরুত্ব ১। কিন্তু জলে নানা ধরনের খনিজ ও জৈব-রাসায়নিক পদার্থ মিশতে থাকলে ঐ ঘনত্ব পরিবর্তিত হয়ে যায়। দীর্ঘদিন ধরে ঘনত্ব বৃদ্ধি পেলে তা মাছেদের জন্য চরম সমস্যার কারণ হতে পারে। তাই নিয়মিত জল পরিষ্কার করা দরকার।
রোগ সৃষ্টি: বিভিন্ন জৈব রাসায়নিক পদার্থ অ্যাকোয়ারিয়ামের জলে দীর্ঘদিন জমা হতে থাকলে তা বিভিন্ন ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়ার স্বর্গ হয়ে ওঠে, ফলে মাছে নানা রকম রোগ দেখা দেয় ও মৃত্যু ঘটে।
দুর্গন্ধ ও দৃশ্য দূষণ: দীর্ঘদিন ধরে অ্যাকোয়ারিয়ামে একই জল থাকলে তা ধীরে ধীরে দুর্গন্ধ যুক্ত হয়ে পড়ে , এবং ঘোলা হয়ে অ্যাকোয়ারিয়ামের সৌন্দর্য সম্পূর্ণ ভাবে নষ্ট করে। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে অবশ্যই নিয়মিত ভাবে অ্যাকোয়ারিয়ামের জল পরিষ্কার করা ও পরিবর্তন করা দরকার।
অ্যাকোয়ারিয়ামের জল তিন ভবে পরিষ্কার করা যায়ঃ-
ঘরোয়া পদ্ধতি: এই পদ্ধতিতে অ্যাকোয়ারিয়ামের জলে অল্প পরিমাণে চুন ও ফিটকারি মেশানো হয়, এতে জলে ভাসমান সুক্ষ পদার্থ গুলি থিতিয়ে পড়ে। তারপর থিতিয়ে পরা পদার্থ গুলিকে সাইফন করে বের করে দিতে হয়।
আধুনিক পদ্ধতি: এই পদ্ধতিতে বিভিন্ন ধরনের উন্নত প্রযুক্তির ফিল্টার ও সাইফন ব্যবহার করে মাছের বর্জ্য পদার্থ পরিস্কার করা হয়। এটিই বর্তমানে সবচেয়ে প্রচলিত ও কার্যকরী পদ্ধতি। বাজারে বিভিন্ন ধরনের দেশি বিদেশি ফিল্টার কিনতে পাওয়া যায়, যেমন – আন্ডার গ্রাভেল (বেস) ফিল্টার, কর্নার ফিল্টার, স্পঞ্জ ফিল্টার, টপ ফিল্টার, হ্যাং অন ফিল্টার ইত্যাদি। প্রয়োজন অনুযায়ী এগুলোর কোন একটা অ্যাকোয়ারিয়ামে লাগালেই যথেষ্ট ভালোভাবে জল পরিষ্কার করে।
জৈব-রাসায়নিক পদ্ধতি: বর্তমানে এই পদ্ধতির প্রচলন একটু একটু করে বাড়ছে। অ্যাক্টিভ কার্বন, কার্বন, বায়ো বল, সেরামিক রিং ইত্যাদি ব্যবহার করে অ্যাকোয়ারিয়ামের জল পরিষ্কার করা হচ্ছে , যদিও এটি খুব খরচ সাপেক্ষ তবুও যথেষ্ট কার্যকরী।
জল পরিবর্তনের পদ্ধতি:
ফিল্টার ব্যবহার করে জল পরিষ্কার করার সাথে সাথে অ্যাকোয়ারিয়ামের জল পরিবর্তন করাও একটি গুরুত্ব পূর্ণ কাজ। তবে মনে রাখতে হবে জল পরিবর্তন মানে কিন্তু সম্পূর্ণ জল পরিবর্তন নয় বরং আংশিক পরিবর্তন।
১৫ দিন অন্তর অন্তর অ্যাকোয়ারিয়ামের ১/৪ ভাগ জল পরিবর্তন করতে হবে, কারণ পুরোনো জলে নাইট্রেট সহ বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের মাত্রা বেড়ে যায়, নতুন জল প্রয়োগ করে তা কমানো জরুরি। এছাড়াও নতুন জল পেলে মাছেরা কিছুটা স্বস্তি বোধ করে। তবে মনে রাখবেন নতুন জলের তাপমাত্রা ও পুরোনো জলের তাপমাত্রা যেন একই হয়, না হলে থার্মাল শক্ লেগে মাছের মৃত্যু ঘটতে পারে।
এই দূর্ঘটনা এড়ানোর জন্য একটি পরিস্কার পাত্র নিয়ে তা জলপূর্ণ করে ৪৮ ঘন্টা ফেলে রাখুন। এতে জল যেমন ক্লোরিন মুক্ত হবে তেমনি জলের তাপমাত্রাও অ্যাকোয়ারিয়ামের তাপমাত্রার সমান হয়ে যাবে। এরপর একটি নলের সাহায্য অ্যাকোয়ারিয়ামে নীচের দিক থেকে (নীচের জলেই নোংরা বেশি থাকে) ১/৪ ভাগ জল তুলে ফেলে, ঐ শূন্যেস্থানে নতুন জল একটি গ্লাস বা মগের সাহায্য খুব ধীরে ধীরে প্রয়োগ করুন।