এক ঘণ্টায় ১০ বার বমি করে সম্প্রতি চাকরি হারিয়েছেন রায়ান লুইস নামে ২২ বছর বয়সী এক যুবক। ক্রমাগত বমির কারণে বিগত ৬ মাসে ৪টি চাকরি হারিয়েছেন তিনি। ইংল্যান্ডের শেফিল্ডের এই যুবক ‘সাইক্লিক ভমিটিং সিনড্রোম’ রোগে আক্রান্ত। এ রোগের কারণেই ঘন ঘন বমি হয় তার।
সাইক্লিক ভমিটিং সিনড্রোম আসলে কী?
কোনো কারণ ছাড়াই এক নাগাড়ে ঘণ্টায় ঘণ্টায় বা টানা কয়েকদিন পর্যন্ত বমি হওয়ার সমস্যাকে ‘সাইক্লিক ভমিটিং সিনড্রোম’ বলা হয়। যদিও এই সমস্যা সব বয়সীদের মধ্যেই দেখা যায়। তবে ৩-৭ বছর বয়সীদের মধ্যেই এ সমস্যা বেশি দেখা যায়।
সাইক্লিক ভমিটিং সিনড্রোমের লক্ষণ কী?
>> তিন বা তারও বেশিবার একনাগাড়ে বমি হওয়া।
>> বমির আগে বমি বমি ভাব ও তীব্র ঘাম।
>> পেটে ব্যথা
>> ডায়রিয়া
>> মাথা ঘোরা
>> আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা
>> মাথাব্যথা
কখন ডাক্তার দেখাবেন?
বমির সঙ্গে রক্ত দেখলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন দ্রুত। ক্রমাগত বমি হলে মারাত্মক ডিহাইড্রেশন হতে পারে। যা প্রাণনাশের ঝুঁকি বাড়ায়। বমির পাশপাশি ডিহাইড্রেশনের কয়েকটি লক্ষণ দেখলে সতর্ক থাকুন-
>> অতিরিক্ত তৃষ্ণা বা শুষ্ক মুখ
>> প্রস্রাব কম হওয়া
>> শুষ্ক ত্বক
>> চোখ ডুবে যাওয়া
>> কান্না আসলেও চোখ দিয়ে জল না পড়া
>> ক্লান্তি ইত্যাদি।
সাইক্লিক ভমিটিং সিনড্রোমের কারণ কী?
সাইক্লিক বমি সিনড্রোমের অন্তর্নিহিত কারণ অজানা। কিছু সম্ভাব্য কারণের মধ্যে আছে জিনগত, হজমের সমস্যা, স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা ও হরমোনের ভারসাম্যহীনতা। এছাড়া নির্দিষ্ট কিছু কারণে বমি হতে পারে যেমন-
>> সর্দি, অ্যালার্জি বা সাইনাসের সমস্যা
>> মানসিক চাপ বা উত্তেজনা
>> উদ্বেগ বা আতঙ্ক, বিশেষ করে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে
>> কিছু খাবার ও পানীয় যেমন- অ্যালকোহল, ক্যাফেইন, চকোলেট বা পনির
>> অতিরিক্ত খাওয়া কিংবা দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকার পর খাওয়া
>> গরম
>> শারীরিক ক্লান্তি
>> খুব বেশি ব্যায়াম করা
>> ঋতুস্রাব ইত্যাদি।
সাইক্লিক ভমিটিং সিনড্রোম যেসব জটিলতার কারণ হতে পারে-
>> অতিরিক্ত বমি হলে শরীরে দ্রুত জল কমে যায়। ডিহাইড্রেশনের গুরুতর ক্ষেত্রে হাসপাতালে চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।
>> বমির সঙ্গে যে পাকস্থলীর অ্যাসিড আসে তা মুখ ও পাকস্থলীর (অন্ননালী) সংযোগকারী নালিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। কখনো কখনো খাদ্যনালিতে আঘাত লাগায় রক্তপাত হয়।
>> বমির মধ্যে থাকা অ্যাসিড দাঁতের অ্যানামেলকে ক্ষয় করতে পারে।
প্রতিরোধ করণীয়
>> শিশুদেরকে সময়মতো খাওয়া ও ঘুমানোর অভ্যাস করতে হবে।
>> গরমে অতিরিক্ত খাওয়া এড়াতে হবে।
>> অ্যালকোহল, ক্যাফেইন, পনির ও চকোলেটের মতো খাবার এড়িয়ে চলুন
>> প্রতিদিন সময়মতো খাবার খান, তবে অল্প অল্প করে খাবার কয়েকবার ভাগ করে নিন ও কম চর্বিযুক্ত স্ন্যাকস খান।
>> নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে হবে। অতিরিক্ত ব্যায়াম করবেন না।