OMG! সাধারণ এই একটি মসলার গুণেই বশে থাকবে আপনার ইউরিক অ্যাসিড, বলছে নতুন গবেষণা

বর্তমানে ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যাওয়ার সমস্যায় অনেকেই ভুগছেন। বয়স্কদের পাশাপাশি কমবয়সীরাও অনিয়মিয়ত জীবনযাপনের কারণে এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ও অত্যধিক প্রোটিনযুক্ত খাবার খাওয়ার কারণে রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যায়।

যারা শাকসবজি কিংবা ফলমূলের চেয়ে বেশি মাছ-মাংস খান, তাদের ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি বেশি। অত্যধিক মদ্যপানও ইউরিক অ্যাসিডের কারণ হতে পারে।

সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড হাঁটু ও বিভিন্ন অস্থিসন্ধিতে জমা হয়। ফলে হাঁটু ফুলে যায়। আবার কারও কারও ক্ষেত্রে গোড়ালি, পায়ের আঙুল ফুলে ব্যথার সৃষ্টি হয়। ফলে হাঁটতে কষ্ট হয়। এই সমস্যায় যারা ভোগেন তারা দীর্ঘক্ষণ বসতেও পারেন না, এতেও ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যায়।

ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ও ব্যথা কমাতে চিকিৎসকরা রোগীকে পথ্য দেন, তবে এই সমস্যার দ্রুত সমাধান করা যায় সঠিক ডায়েট ও শরীরচর্চার মাধ্যমে। এর পাশাপাশি কিছু ভেষজ আছে যা খাদ্যতালিকায় রাখলে এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তেমনই এক উপাদান হলো হলুদ।

কীভাবে ইউরিক অ্যাসিড বশে রাখে হলুদ?

সবার রান্নাঘরেই এই মসলা থাকে। শুধু খাবার রঙিন করতেই নয়, বরং স্বাস্থ্যের জন্যও অনেক উপকারী এই ভেষজ। ওষুধি গুণ থাকায় হলুদ যুগ যুগ ধরে আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এছাড়া বৈজ্ঞানিকভাবেও প্রমাণিত যে, গাউট, আর্থ্রাইটিসের চিকিৎসায় দারুন কার্যকরী এক উপাদান হলো হলুদ।

‘কারকিউমিন’ হলো হলুদের সবচেয়ে সক্রিয় রাসায়নিক। এটি হলুদের শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ক্ষমতার জন্য বিবেচিত। ২০১৯ সালের প্রাণী গবেষণা ‘আর্থ্রাইটিস অ্যান্ড থেরাপি’ অনুসারে, কারকিউমিন নিউক্লিয়ার ফ্যাক্টর-কাপ্পা বি (এনএফ-কাপ্পা বি) নামক একটি প্রোটিনকে দমন করতে পারে। এনএফ-কাপ্পা বি গাউটসহ বিভিন্ন প্রদাহের জন্য দায়ী।

২০১৩ সালে ওপেন জার্নাল অব রিউমাটোলজি অ্যান্ড অটোইমিউন ডিজিজেস’এ প্রকাশিত একটি মানব গবেষণায় কারকিউমিনের প্রদাহ-বিরোধী প্রভাবও উল্লেখ করা হয়েছে।

গাউটে আক্রান্ত ব্যক্তিরা হলুদের নির্যাস গ্রহণ করার পরে স্বস্তি অনুভব করেন। কারকিউমিনের ক্ষমতার বলে এনএফ-কাপ্পা বি ব্লক করার মাধ্যমেই দ্রুত প্রদাহ কমে যায় বলে জানান গবেষকরা।

২০১৮ সালে ‘বিএমসি কমপ্লিমেন্টরি অ্যান্ড অলটারনেটিভ মেডিসিন’ এর গবেষণায় দেখা গেছে, প্রদাহ কমাতে হলুদের কারকিউমিন খুবই কার্যকরী। যা আর্থ্রাইটিস সম্পর্কিত জয়েন্টেও ব্যথাও মুহূর্তেই সারাতে পারে।

গবেষণায় অংশ নেওয়া অস্টিওআর্থারাইটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা টানা তিন মাস ধরে কারকিউমিন নির্যাস গ্রহণ করেন ও তারা ফল পান হাতেনাতে। অংশগ্রহণকারীদের শারীরিক ক্রিয়াকলাপের উন্নতি ও জয়েন্টের ব্যথা খুব দ্রুত সেরে যায়।

এছাড়া হলুদে থাকা অ্যন্টি অক্সিডেন্ট শরীরের ফ্রি র্যাডিকেল (কোষের ক্ষতি করে যে অণু) ধ্বংস করে। যদি আপনার শরীরে ফ্রি র্যাডিক্যাল এও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ভারসাম্যহীনতা থাকে, তাহলে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস দেখা দেয়। আর অক্সিডেটিভ স্ট্রেসই শরীরে বিভিন্ন প্রদাহের সৃষ্টি করে।

জার্নাল অব ফুড কোয়ালিটির ২০১৭ সালের এক নিবন্ধ অনুসারে, হলুদে থাকে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য কারকিউমিনসহ ফ্ল্যাভোনয়েড, অ্যাসকরবিক অ্যাসিড ও পলিফেনল থেকে আসে। এর মানে হলো হলুদ অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমিয়ে গাউটের প্রদাহ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।

তাই ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যার সমাধানে নিয়মিত খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন হলুদ। বিভিন্ন খাবারে মিশিয়ে কিংবা হলুদের চা, হলুদের গুঁড়ার মিশ্রণ পান করুন নিয়মিত।

এমনকি সকালে এক টুকরো কাঁচা হলুদ চিবিয়ে বা রস করে খেতে পারে। এর পাশাপাশি হাঁটু, গোড়ালি কিংবা পায়ের আঙুল যেখানেই ফুলে ব্যথা হোক না কেন হলুদের পেস্ট লাগালে মুহূর্তেই স্বস্তি মিলবে।

হলুদ কতটুকু খাবেন? আর্থ্রাইটিস ফাউন্ডেশনের পরামর্শ অনুযায়ী, অস্টিওআর্থারাইটিসের জন্য দিনে ৩ বার ৪০০-৬০০ মিলিগ্রাম ক্যাপসুল খেতে পারবেন।

অন্যদিকে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের রোগীরা দিনে ২ বার ৫০০ মিলিগ্রাম হলুদের সাপ্লিমেন্ট ক্যাপসুল খেতে পারেন। তবে জটিল কোনো রোগ বা দীর্ঘস্থায়ী কোনো সমস্যায় ভুগলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তবেই হলুদ গ্রহণ করুন।

ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ডায়েট ও শরীরচর্চার বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন, প্রতি আধা ঘণ্টা মিনিট বসার পর অন্তত ৩ মিনিট করে দাঁড়াতে। হাঁটাহাঁটি করলে আরও ভালো।

এর পাশাপাশি মসুর ডাল, মটর ডাল, খাসির মাংস, কলিজা, সামুদ্রিক মাছ, অ্যালকোহলসহ ভাজাপোড়া বিভিন্ন ধরনের খাবার এড়িয়ে যেতে হবে। সব ধরনের নিয়ম মেনে চললে ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা থেকে দ্রুত মিলবে মুক্তি।bs

Related Posts

© 2024 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy