বিশ্বব্যাপী হৃদরোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বিভিন্ন সমীক্ষার তথ্য অনুসারে, প্রতিবছর সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যান হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে। অত্যধিক মানসিক চাপ, কর্মব্যস্ত জীবন ও অনিয়মিত জীবনযাপনের কারণে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
বিভিন্ন গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, পুরুষের তুলনায় নারীদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। সেন্টার্স অব ডিজিজেস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের তথ্য অনুসারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি পাঁচজন নারীর মধ্যে একজন মারা যান হার্ট অ্যাটাকে।
২০২১ সালে ‘দ্য ল্যানসেট’ জার্নালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনেও তুলে ধরা হয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নারীদের মধ্যে কার্ডিয়োভাসকুলার রোগ বাড়ছে। যদিও পুরুষ ও নারীদের মধ্যে হৃদরোগের উপসর্গ ভিন্নভাবে প্রকাশ পায়।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, নারীদের ক্ষেত্রে হৃদরোগে আক্রান্ত হলে বুকে ব্যথার মতো উপসর্গ দেখা যায় না। এ ক্ষেত্রে মূলত ক্লান্তি, শ্বাসকষ্ট, কাঁধ ও ঘাড়ে ব্যথার মতো লক্ষণ দেখা দেয়।
নারীদের মধ্যে হৃদরোগের লক্ষণ কী কী?
>> ঘাড়, চোয়াল, কাঁধ, উপরের পিঠ বা উপরের পেটে (পেটে) অস্বস্তি
>> নিশ্বাসের দুর্বলতা
>> এক বা উভয় বাহুতেই ব্যথা
>> বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
>> অতিরিক্ত ঘাম
>> হালকা মাথাব্যথা বা মাথা ঘোরা
>> অস্বাভাবিক ক্লান্তি
>> গ্যাস্ট্রিক বা বদহজম।
কেন নারীদের মধ্যে বাড়ছে হৃদরোগের ঝুঁকি?
>> ঋতুবন্ধ বা মেনোপসের পর নারীর শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের ক্ষরণ কমে যায়। এ কারণে তখন তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
>> গর্ভাবস্থায় অনেক নারীই উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভোগেন। এ সময় রক্তচাপ বাড়লে রক্তনালীগুলো দিয়ে রক্ত ও অক্সিজেন পর্যাপ্ত মাত্রায় মস্তিষ্কে পৌঁছাতে পারে না। সে ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
>> নারীদের মধ্যে যারা ধূমপানে আসক্ত, তাদেরও হৃদরোগের ঝুঁকি বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, ধূমপান বন্ধ করলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায় ৮০ ভাগ। আবার মদপানও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
>> ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও উচ্চ কোলেস্টেরলের সমস্যা হৃদরোগের জন্য দায়ী। এসব রোগের কারণে রক্তনালী সংকীর্ণ হয়ে পড়ে। ফলে রক্ত প্রবাহে বাঁধা সৃষ্টি করে ও হৃদযন্ত্রে বেশি চাপ পড়ে। কার্ডিওভাসকুলার রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
>> মানসিক চাপ ও পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব হৃদরোগের ঝুঁকি বেশি বাড়ায়। তাই শরীরকে সুস্থ রাখতে দৈনিক ৬-৮ ঘণ্টা ঘুম জরুরি।
হৃদরোগ প্রতিরোধে করণীয়
এ বিষয়ে সিডিসির পরামর্শ হলো, নিয়মিত শরীরচর্চা হার্টকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এ জন্য সপ্তাহে অন্তত ৫ দিন ৩০ মিনিটের মাঝারি ব্যায়ামই যথেষ্ট। এ ক্ষেত্রে দ্রুতগতিতে হাঁটা বেশ কার্যকরী। এর পাশাপাশি লিফটের পরিবর্তে সিঁড়ি ব্যবহার করুন।
বিভিন্ন স্থানে হেঁটে চলাচল করুন। টেলিভিশন দেখা বা ফোনে কথা বলার সময় হাঁটাহাঁটি করার অভ্যাস গড়ুন। এসবের পাশাপাশি মেডিটেশন করুন নিয়মিত। স্বাস্থ্যকর খাবার নিন। ধূমপান ও মদপান ত্যাগ করুন। সঠিকভাবে জীবন পরিচালনা করুন।bs