শিশু-কিশোরদের লেখাপড়ার অনেক চাপ। প্রতিদিন ক্লাস, পরীক্ষা, কুইজ এসব চলতেই থাকে। তাদের অনেকেই আবার বহুবিধ সৃজনশীল কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বড়দের মতো তাদেরও কাজের চাপ অনেক। এই কাজের মাঝেই দাঁতের যত্নও নিতে হবে।
সুন্দর চেহারা বলতে সুস্থ সুন্দর চোখ, নাক, ঠোঁট ও একই সঙ্গে উজ্জ্বল মজবুত দাঁতকেও বোঝায়। সুন্দর হাসি ও আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের জন্য উজ্জ্বল, রোগমুক্ত দাঁতের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে যত্নের অভাবে দাঁতে আক্রমণ করে রোগ-জীবাণু ও বিভিন্ন রকমের অসুখ।
অযত্নে দাঁত ও দাঁতের মাড়ি হয়ে ওঠে কালচে, ভঙ্গুর ও হলদে রংয়ের। যা খুব খারাপ দেখায়। সামান্য সচেতনতা ও যত্ন আমাদেরকে বাঁচাবে দাঁতের বিভিন্ন সমস্যা থেকে। ছোটবেলা থেকেই দাঁতের যত্ন নিতে হবে। এজন্য যা করণীয়-
>> প্রতিদিন সকাল ও রাতে (ঘুমানোর আগে) ভালোভাবে দাঁত ব্রাশ করতে হবে।
>> খাবারে চর্বি, পনির বা ক্রিম থাকলে অবশ্যই ব্রাশ করে কয়েকবার কুলি করা উচিত। চর্বি ও শর্করাযুক্ত খাবার দাঁতের ফাঁকে জমে দাঁতকে দ্রুত ক্ষয় করে। দাঁতের উপরিভাগে খাদ্যকণা মিশ্রিত তেল জমে দাঁতের মসৃণতা নষ্ট করে।
>> খাবার জল ফুটিয়ে পান করা উচিত। ফুটানো সম্ভব না হলে নলকূপের জল সংগ্রহ করতে হবে।
>> একটা বস্তুকে মুক্ত বাতাসে যেভাবে ব্রাশ করা সম্ভব সেভাবে ব্রাশ দিয়ে জিকজ্যাক পদ্ধতিতে (উপরে, নিচে, ভেতরে, বাইরে) পরিষ্কার করতে হবে।
>> ব্রাশের সমান্তরাল স্টিকের পরিবর্তে বাঁকা হওয়া দরকার। এতে মুখের ভেতরের দাঁতগুলো ভালোভাবে পরিষ্কার হবে।
>> বাঁকা দাঁতে ময়লা জমে বেশি, তাই দীর্ঘসময় ধরে ব্রাশ করা উচিত। অনেক সময় একই স্থান থেকে দুটো দাঁত গজায়। অপারেশনের মাধ্যমে একটা দাঁত তুলে ফেলা যায় বা সমান্তরালহীন দাঁতগুলোকে সারিবদ্ধতায় আনা যায়। এক্ষেত্রে দাঁতের চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
>> দাঁতের ফাঁকের ময়লাগুলো দীর্ঘদিন ধরে জমে ক্ষুদ্র পাথর কণায় পরিণত হয়। তখন দাঁতের উপরিভাগে কালো দাগ পড়ে। এটা ভীষণ দৃষ্টিকটু দেখায়। এ জন্য প্রতি ৬ মাস পরপর দাঁতের স্কেলিং করানো উচিত।
>> প্রতি ৬ মাস পর ব্রাশ পরিবর্তন করবে। সম্ভব হলে একই সঙ্গে সমান্তরাল ও বাঁকা দণ্ডের ব্রাশ ব্যবহার করতে হবে। প্রতি মাসে দুটো ব্রাশকে এক ফোঁটা স্যাভলন বা ডেটল মিশ্রিত এক বাটি কুসুম গরম জলে ২০ মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হবে।
তারপর ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে। টুথপিক দিয়ে ব্রাশের গোড়া পরিষ্কার করা উচিত। ধুলোবালি, পোকা-মাকড় থেকে রক্ষার জন্য ঢাকনাযুক্ত ব্রাশ ব্যবহার করাই উত্তম।
>> অনেকের সারিবদ্ধ দাঁতের মধ্যে যে কোনো একটি বা দুটি দাঁত থাকে ত্রুটিযুক্ত হলুদ। এজন্য কোনো প্রসাধনীর পরিবর্তে দ্রুত চিকিৎসের পরামর্শ নিতে হবে।
>> দাঁতের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর জন্য অনেকেই খাবার সোডা ব্যবহার করেন। সোডা পরিহার করা উচিত। সোডায় ক্ষার থাকে। সেটা দাঁতের কোমল মাড়ির জন্য ক্ষতিকর।
অনেক সময় দাঁতের অতি সংবেদনশীল মাড়ি পুড়ে লাল হয়ে যায়। স্বাভাবিক দৃষ্টিতে যা দেখতে জমাটবদ্ধ রক্তের মতো দেখায়।
>> দাঁতের উজ্জ্বলতা বাড়াতে মাঝেমধ্যেই মাউথ ওয়াশ দিয়ে কুলি করা দরকার। মাউথ ওয়াশ না থাকলে খাবার লবণ দিয়ে দাঁত ব্রাশ করতে পারো
প্রতিদিন লেবু বা কোনো টক ফল খাওয়া উচিত। ক্যালসিয়ামের অভাবেও দাঁতের উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়। এজন্য নিয়মিত শাক-সবজি, বাদাম, দুধ খেতে হবে।
>> অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরম পানীয় দাঁতের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। দুটো পানীয় একই সঙ্গে গ্রহণ করা অনুচিত। খুব গরম চা বা কফি পানের অন্তত ঘণ্টাখানেক পরে স্বাভাবিক জল পান করা ভালো।
>> অনেকেই বিভিন্ন গাছের মেসওয়াক ব্যবহার করেন। এক্ষেত্রে মনোযোগী হতে হবে যেন দাঁতনের আঁশ দাঁতের গোড়ায় আটকে না থাকে। টুথপিক ব্যবহারে মাড়িতে ফুটো হলে ইনফেকশন হয়। তাই সতর্কতার সঙ্গে টুথপিক ব্যবহার করতে হবে।
>> ভালো ব্র্যান্ডের টুথপেস্ট ব্যবহার করতে হবে। কয়লা, ছাই, মাটি বা বালু দিয়ে দাঁত মাজা ঠিক নয়। হারবাল বা নিম জাতীয় টুথ পাউডার ব্যবহার করাই উত্তম।
>> গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থাকলে মুখে দুর্গন্ধ হয়। ফলে দাঁত হলুদ হয়ে যায় ও ঠোঁটের দুই কোণা কালো হয়ে যায়। এজন্য প্রতিদিন এক থেকে দেড় লিটার জল পান করতে হবে।
>> অ্যালকোহল ও ধূমপানে দাঁত কালো হয়ে যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দাঁতের মাড়িও কালো হয়ে ফুলে যায়। মাড়ির রক্তবাহী শিরাগুলো মোটা দেখায়, যা দেখতে খাারাপ লাগে। অনেকে কিশোর বয়সে ধূমপান করে। তাই অ্যালকোহল ও ধূমপান এড়িয়ে চলতে হবে।
>> অনেকের দুটো দাঁতের মাঝে ফাঁকা স্থান বা ভাঙা দাঁত থাকে। কিশোর বয়স পার হওয়ার পর অনেকেরই ঠিক হয়ে যায়। এর জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
>> পান, সুপারি, জর্দা বা গুল পরিহার করতে হবে। এসবে আসক্তি থাকলে খাবার পরে দাঁত ব্রাশ করে ফেলতে হবে। পানে চুনের পরিমাণ যত কম হয় ততই ভালো। মাত্রাতিরিক্ত চুন দাঁতের এনামেল ক্ষয় করে।
>> ৬-৭ বছরে দুধ দাঁতগুলো ঝরে যাওয়ার পর যে দাঁতগুলো বের হয়, তাকে বলে স্থায়ী দাঁত। ৬-২০ বছরের মধ্যেই আমাদের ৩২টি দাঁত বের হয়। অধিকাংশ শিশু-কিশোরের ২০ বছরের মধ্যে সব দাঁত বের হয়, শুধু আক্কেলদাঁত ছাড়া।
শহরে বেড়ে ওঠা শিশু-কিশোররা গ্রামের শিশু-কিশোরদের তুলনায় বেশি ফাস্টফুড, কোমল পানীয়, চকলেট খায়। এই খাবারগুলোর মাত্রাধিক্য আমাদের জন্য দাঁত ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
>> বছরে অন্তত একবার পুরো দেহের চেকআপ করানো জরুরি। এতে লুকায়িত কোন রোগ-জীবাণু থাকলে ধরা পড়বে। দেহের প্রতিটি অঙ্গ পরস্পরের উপর নির্ভরশীল। তাই সুস্থ দাঁত ও সুস্থ দেহের জন্য সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ রোগমুক্ত থাকতে হবে। এই জন্য অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।bs