সোরিয়াসিস অটো ইমিউন ডিসঅর্ডার এবং অনেক ক্ষেত্রেই পরিবারের সদস্যরা জিনগতভাবে তা বহন করে চলেন নিজেদের অজান্তেই। সমস্যাটা অত্যন্ত বিরক্তিকর এবং যেহেতু ত্বকে অজস্র লাল ছোপ পড়ে এবং সমস্যাটা বাড়লে খুব চুলকোয়, তাই লোকজনের সামনে অপ্রীতিকর অবস্থায় পড়তে হয়। কারও কারও ক্ষেত্রে সমস্যাটা স্ক্যাল্পেও হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই লোকলজ্জার ভয়ে গুটিয়ে থাকেন সোরিয়াসিসের রোগীরা, প্রকাশ্যে বেরোতেও অস্বস্তিতে পড়ে যান। জানেন তো, সম্প্রতি কিম কার্দাশিয়ান ওয়েস্ট একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন যে তিনি 25 বছর বয়স থেকেই এই সমস্যায় ভুগছেন? তাঁর পায়ে পাকাপাকিভাবে সোরিয়াসিসের একটি বড়ো দাগই আছে! ইচ্ছে হলে তা ঢাকার জন্য বডি মেকআপ ব্যবহার করেন মাঝে মাঝে, না হলে এমনিই দৃশ্যমান থাকে। আর মাঝে-মাঝেই তা হানাও দেয় নিয়মিত। তাহলে বুঝতে পারছেন নিশ্চয়ই, সমস্যাটি নিয়ন্ত্রণ করার উপর বেশি নজর দেওয়া উচিত? মডেল-অভিনেত্রীরাও যদি প্রকাশ্যে এ ধরনের রোগের কথা বলেন, তা হলে আপনিই বা আড়ালে পড়ে থাকবেন কেন?
সোরিয়াসিস নিয়ন্ত্রণের কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি আছে। প্রথমে ভেবে বের করতে হবে যে ঠিক কোন কোন পরিস্থিতিতে আপনার সমস্যা বাড়ে। চড়া সুগন্ধি, গ্লিটারি মেকআপ, সিন্থেটিক মেটিরিয়ালের পোশাক ইত্যাদি নানা কারণে সোরিয়াসিস তীব্র হয়ে উঠতে পারে। ত্বক কখনওই শুকনো রাখা যাবে না, স্নানের পরে গা ভিজে থাকতে থাকতেই ভারী পেট্রোলিয়াম জেলি বা নারকেল তেলগোছের কোনও ময়েশ্চরাইজ়ার লাগিয়ে নিন ভালো করে। যখনই মনে হবে ত্বক শুকনো হয়ে যাচ্ছে, তখনই তা ফের রিপিট করুন। খুব গরম জলে স্নান করবেন না, রোজ গায়ে খানিকটা রোদও লাগাতে হবে। সাধারণত সোরিয়াসিসে ত্বকের কোষবিভাজনের হার বেড়ে যায়, সেই বাড়তি কোষগুলিই আঁশের মতো করে জমতে থাকে। অসহ্য চুলকানি হয়, আবার বেশি চুলকোলে রক্ত বেরিয়ে আসে। দিনে মিনিট কুড়ি রোদ লাগালে ত্বক বিভাজনের হার নিয়ন্ত্রণ করা যায় বলে অনেকেই মনে করেন। তবে তার চেয়ে বেশি রোদ থেকে আবার হিতে বিপরীত হবে। সানস্ক্রিন ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনও কার্পণ্য করবেন না, ডাক্তারের পরামর্শমতো সানস্ক্রিন লাগানো একান্ত প্রয়োজনীয়। অনেকের ক্ষেত্রে অ্যালো ভেরা জেলও খুব কাজে দেয়।
সবচেয়ে ভালো হয় যদি স্ট্রেস থেকে দূরে থাকতে পারেন। স্ট্রেস সোরিয়াসিস বাড়াতে পারে। কিছু কিছু ওষুধের কারণেও কিন্তু এই সমস্যা হঠাৎ করেই বেড়ে যেতে পারে, তাই ডাক্তারের কাছে গেলে অবশ্যই আপনার অটো ইমিউন সমস্যার কথা জানাবেন। খুব বেশি ভাজাভুজি বা তেল-মশলাদার খাবার থেকে দূরে থাকতে পারলেও ভালো হয়। বেশি-বেশি করে ফল-সবজি খান, ত্বক ভালো থাকবে। শরীরের তাপমাত্রা যাতে মাত্রাছাড়া বেড়ে না যায়, সে বিষয়টাও খেয়াল করতে হবে। এড়িয়ে চলুন খুব ঠান্ডা এবং শুষ্ক বাতাবরণ, যাঁরা সারাদিন এসির মধ্যে থাকেন, তাঁদের ক্ষেত্রে হিউমিডিফায়ার লাগানোর পরামর্শও দেওয়া হয়।