বুকে ব্যথা হলে প্রথমেই আমরা ধরে নেই হার্টের কোন সমস্যা। তবে বুকে ব্যথা মানেই যে হার্টের সমস্যা এমনটা কিন্তু মনে করার কোনও কারণ নেই। বর্তমান আধুনিক যুগে মানুষের ব্যস্ততা বেড়েছে। নানা কাজের চাপের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে চাপা টেনশনও। এই টেনশন বা মানসিক চাপের কারণেও হতে পারে বুকে ব্যথা।
অতিরিক্ত ভয় পেলে
প্রচণ্ড ভয় পাওয়ার পর বুকের ব্যথায় আক্রান্ত হওয়ার কারণটা নিঃসন্দেহে মানসিক। চিকিৎসকদের মতে, একজন রোগী প্রচণ্ড বুকে ব্যথা নিয়ে তাৎক্ষণিক চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের শরাণাপন্ন হলে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে তাঁর বুকে ব্যথার পেছনের হৃদযন্ত্রের কোন ভূমিকা নেই।
ভার্টিগো প্রবণতা থাকলে
মানসিক কারণ থেকে হওয়া বুক ব্যথার উপসর্গগুলো ভয় পাওয়ার উপসর্গের সঙ্গে মিলে যায়। যেমন – বুক ব্যথার সঙ্গে রোগীর প্রচণ্ড ঘাম হবে, শরীরে কাঁপুনি দেখা দেবে, দম আটকে যাওয়ার জোগার হবে। আর দেখা দিতে পারে পেটের গোলমাল, বমিভাব, শারীরিক ভারসাম্য হারানো ইত্যাদি।
মানসিক কারণের ব্যথা বুকেই অনুভূত হয়
ভয় বা মানসিক চাপ থেকে হওয়া ব্যথা বুকে শুরু হয় এবং তা যতক্ষণ স্থায়ী হয় ততক্ষণ একই স্থানে অনুভূত হয়। তবে হৃদরোগজনিত ব্যথা শুরু হয় বুকে এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। যেমন- চোয়াল, কাঁধ, হাত ইত্যাদি।
বুকের অনান্য জায়গায় ব্যথা
হৃদযন্ত্র থাকে শরীরের বাম পাশে। তাই হৃদরোগের উপসর্গ হিসেবে দেখা দেওয়া ব্যথা বাম পাশেই অনুভূত হয়। কালেভদ্রে বুকের মাঝখানেও ব্যথা হতে পারে। তবে বুকের অন্য যে কোনো অংশে ব্যথা হলে তার নেপথ্যের কারণটা মানসিক হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
গ্যাস্ট্রিক থেকে বুকে ব্যথা
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায়ও বুকে ব্যথা হতে পারে। এ ব্যথা সাধারণত বুকের মাঝ বরাবর নিচের দিকে অনুভূত হয়। রোগের তীব্রতায় অনেক সময় তা পুরো বুকে ছড়িয়ে পড়ে। ভাজাপোড়া খেলে, খালি পেটে থাকলে এ ধরনের ব্যথা আরো বেড়ে যায়। রেনিটিডিন বা ওমিপ্রাজল গ্রুপের ওষুধ খেলে এ জাতীয় বুক ব্যথা কমে যায়। হার্টের ব্যথা কখনো এসব ওষুধে ভাল হয় না।
শ্বাসনালীর সমস্যায় বুকে ব্যথা
অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগে শ্বাসনালীর স্পাজম হতে পারে। এ রোগে বুকে চাপ চাপ লাগে এবং বিশ্রাম নিলে কমে যায়। হার্টে রক্ত স্বল্পতাজনিত ব্যথার সঙ্গে এ ব্যথার অনেক মিল আছে। তবে এক্ষেত্রে ব্যথার পাশাপাশি কাশি, বুকে চি চি আওয়াজ হতে পারে। ফুসফুসের বিভিন্ন সমস্যা যেমন নিঊমোনিয়া,ফুসফুসে জল ঢোকা, ফুসফুসের যক্ষ্মা ও ক্যান্সার ইত্যাদি রোগেও বুকে ব্যথা হতে পারে।
হার্টে সমস্যাজনিত বুক ব্যথার ধরন
* হার্টে সমস্যাজনিত বুকে ব্যথা বুকের মাঝখানে হয় এবং বড় একটা অংশ জুড়ে তা ছড়িয়ে পড়ে। অন্যান্য কারণে বুকে ব্যথা হলে তা সাধারণত বুকের যেকোন একপাশে হয় এবং একটা নির্দিষ্ট অংশে সীমাবদ্ধ থাকে।
* হার্টের কারণে বুকে ব্যথা হলে তা ঘাড়, চোয়াল, বাহুতে ছড়িয়ে পড়ে। অন্য কারণে বুকে ব্যথা হলে তা ছড়ায় না।
* হার্টের ব্যথা চাপ চাপ ধরনের হয়। সঙ্গে দম বন্ধ হয়ে আসার অনুভূতি থাকে। অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যথা খুব তীব্র হয়। ছুরি দিয়ে খোচা মারার মতো একটা অনুভূতি থাকে।
* হার্টের ব্যথা পরিশ্রমের কারণে কিংবা টেনশনের মাধ্যমে বেড়ে যেতে পারে। অন্যান্য ব্যথা হঠাৎ করেই শুরু হয়। পরিশ্রমের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। নড়াচড়া বা চাপ দিলে এ ব্যথা বোঝা যায়।
* বিশ্রাম নিলে কিংবা নাইট্রেট জাতীয় ওষুধ গ্রহণ করলে হার্টের ব্যথা কমে যায়। অন্যান্য কারণের বুক ব্যথা বিশ্রামে কমে না।
* হার্টের কারণে বুকে ব্যথা হলে এতে সাধারণত শ্বাসকষ্ট হয়। অন্যান্য ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট হয় না।bs