বিশ্বের অন্যতম প্রধান ফল পেঁপে। পেঁপে পরিচিত ও সহজলভ্য ফল। দেশের আনাচে-কানাচে সর্বত্র পাওয়া যায় এটি। দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি লোভনীয় ফল। অতি পুষ্টিকর ও ভেষজ গুণ সম্পন্ন পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন, প্রোটিন, পুষ্টি ও মিনারেল রয়েছে। পেঁপে পাকা খেতে যেমন সুস্বাধু তেমনি তরকারি হিসেবেও বেশ কদর রয়েছে। এ ছাড়া সালাদ, জেলী, হালুয়া, মোরব্বা ও জুস সহ উপাদেয় খাদ্য তৈরি হয় এই পেঁপে দিয়ে।
প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা পেঁপেতে রয়েছে
আমিষ ০.৬ গ্রাম, স্নেহ ০.১ গ্রাম, খনিজ পদার্থ ০.৫ গ্রাম, ফাইবার ০.৮ গ্রাম, শর্করা ৭.২ গ্রাম, ভিটামিন সি ৫৭ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ৬.০ মিলিগ্রাম, পটাসিয়াম ৬৯ মিলিগ্রাম, আয়রন ০.৫ মিলিগ্রাম, খাদ্যশক্তি ৩২ কিলোক্যালরি।
পেঁপের গুণাগুণ
ফলটিতে অনেক অনেক ভেষজ, প্রাকৃতিক ও খোদায়ী গুণ রয়েছে। বিভিন্ন রকম অসুখ সারাতে পেঁপে খুবই উপকারি বলেও মত দিয়েছেন ভেষজবিদগণ।
– প্রতিদিন দুপুরে ভাত খাওয়ার পর এবং রাতে ভাত বা রুটি খাওয়ার পর এক টুকরা কাঁচা পেঁপে ভালো করে চিবিয়ে এক গ্লাস জল পান করলে হজম সম্পর্কিত যে কোনো অসুখ দ্রুত নিরাময় হয়।
– আমাশা থেকে মুক্তি পাওয়ার অদ্ভুত শক্তি আছে পেঁপেতে। তাই নিয়মিত পেঁপের তরকারি খেলে উদরাময়ে উপকার পাওয়া যায়। প্রতিদিন সকালে কাঁচা পেঁপের আঠা ৫/৭ ফোঁটা ৫/৬ টি বাতাসার সঙ্গে মিশিয়ে খেলে রক্ত আমাশা সেরে যায়।
– পেঁপের আঠা ১৫ ফোঁটা ও মধু ১চা চামচ একসঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ার আধা ঘন্টা পরে আধ কাপ উঞ্চ জল খেতে হবে। এভাবে টানা ২ দিন খেলে যেকোনো ক্রিমির উপদ্রব কমে যাবে।
– দেড় চামচ পেঁপে পাতার রস এক কাপ জলে মিশিয়ে খেলে জ্বরের বেগ, বমি, মাথার যন্ত্রণা, শরীর ব্যথা কমে যাবে।
– কাঁচা পেঁপে বা গাছের আঠা যেকোনো দাদে ৩/৪ দিন লাগালে দাদ মিলিয়ে যাবে। এক্ষেত্রে এক দিন পর পর লাগাতে হবে। যে অ্যাকজিমা শুকনা অথবা রস গড়ায় না, সেখানে ১ দিন অথবা ২ দিন অন্তর পেঁপের আঠা লাগালে এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কাঁচা পেঁপের কষ যে কোন ঘা শুকাতে সাহায্য করে।
– ১ চামচ পেঁপের আঠা, তার সঙ্গে ৭/৮ চামচ জল মিশিয়ে ফেটিয়ে, ওই জল চুলের গোড়ায় লাগিয়ে কিছুক্ষণ রাখার পর মাথা ধুয়ে নিলে উকুন চলে যায়। এটা টানা ২/৩ দিন করতে হবে।
– কাঁচা পেপে রুচি বর্ধক হিসেবেও কার্যকরী। নিয়মিত কাঁচা পেঁপের তরকারি সদ্য বাচ্চা সন্তান জন্ম দেয়া নারীদের স্তনের দুধ বাড়ায়।
– পেঁপের রস খেলে জন্ডিস হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। এই ফল খেলে শরীর থেকে দূষিত বায়ু সহজেই বেরিয়ে যায়।
– পাকা পেঁপে অজীর্ণ কৃমি, আলসার, ডিপথেরিয়া ও ত্বকের ঘায়ে বিশেষভাবে কার্যকরী। চটকে মুখে লাগালে ত্বকের উজ্জলতা বৃদ্ধি পায়।
– পেঁপে গাছের আঠা পেটের অসুখ, কোষ্ঠকাঠিন্য প্রভৃতি রোগের জন্যও বিশেষ উপকারী। টুথপেস্ট, ক্রীম তৈরিতে পেঁপে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
এছাড়া, পেঁপের ফুলকে ডায়াবেটিস রোধের জন্য ব্যবহার করা হয়। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, পেঁপেতে উপস্থিত প্রাকৃতিক অ্যান্টি অক্সিডেন্টস ডায়াবেটিসের জন্য উপকারী। ডায়াবেটিস থেকে হার্টের রোগ, নার্ভের রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। পেঁপে কোষের ক্ষতি হওয়াকে আটকায়। কোলেস্টেরলের মাত্রা বজায় রাখে। কারণ এতে হাই ফাইবার রয়েছে। ফাইবার ভাঙতে ও হজম হতে অনেকটা সময় লাগে। ফলে গ্লুকোজ হুট করে বেরিয়ে যায় না। পেঁপের গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স ৫৫ -এর উপরে। ফলে ডায়েটে পেঁপে মাস্ট। এটি লো গ্লাইসেমিক ফলের অন্তর্গত।
পেঁপের তৈরি জুস খেলে :
ক্যালসিয়ামে পরিপূর্ণ
দুধ আর পেঁপে মিশ্রিত এই জুস উচ্চ মাত্রার ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ। যে ক্যালসিয়াম আমাদের হাড় ও দাঁতকে সুস্থ শক্তিশালী করে। ক্যালসিয়াম রক্তচাপ এবং দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে
এই জুস রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। পাশাপাশি হাইপারটেনশন কমায় অনেকখানি। শরীরে থাকা বিভিন্ন ক্ষতিকর কোলেস্টরলের মাত্রা কমিয়ে দেয় পেঁপে।
কৃমির চিকিৎসায়
এই জুসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যারোটিন। এই উপাদানটি যদি প্রতিদিন খাওয়া যায় তাহলে তা কৃমির চিকিৎসায় বেশ ভাল কাজ করে। পেঁপে-দুধের প্রদাহ বিরোধী গুণাগুণ থাকার ফলে তা ক্ষত সারানোর সঙ্গে সঙ্গে এর লাল দাগও দূর করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়
বিভিন্ন কারণে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই নানাবিধ রোগ শরীরে এসে বাসা বাঁধে। তাই সুস্থ থাকতে নিয়মিত পেঁপে ও দুধের জুস খেতে ভুলবেন না। কারণ
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়
পেঁপে ও দুধের তৈরি জুস ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। পেঁপেতে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরে উপস্থিত টক্সিক উপাদানদের বের করে দেয়। ফলে ক্যান্সার সেল জন্ম নেওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়। পেঁপেতে আরেকটি উপকারি উপাদান রয়েছে, যা লাইকোপেন নামে পরিচিত। এই উপাদানটিও ক্যান্সার রোগকে দূরে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়া এই জুসে ভিটামিন এ এবং ফসফরাসে পরিপূর্ণ।
ফুসফুসের রোগ অ্যাম্ফিসেমা প্রতিরোধে
যারা ধুমাপায়ী তারা অবশ্যই এই জুস পান করা খুবই জরুরী। পেঁপে-দুধে থাকা উচ্চ মাত্রার ভিটামিন এ অ্যাম্ফিসেমা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। যারা খুব বেশি ধূমপান করেন তাদের অবশ্যই খাওয়া উচিত।
পেশীর কোষ পুনর্গঠনে
পেঁপে-দুধ শুধুমাত্র আমাদের দেহের শক্তিকেই পুনরুজ্জীবিত করে না সেই সঙ্গে এটি পেশীর কোষ পুনর্গঠনেও সাহায্য করে। উচ্চ প্রোটিনযুক্ত দুধ তা পেশীর সুস্থতার ও গঠনের জন্য ভাল কাজ করে।
তবে বিশেষভাবে গর্ভবতী মহিলাদের বেশি পেঁপে খাওয়া উচিত নয়। এছাড়া পেঁপের ক্ষতিকর কিছু নেইbs