দাঁত ও মুখগহ্বরের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর বদভ্যাসগুলোর অন্যতম ধূমপান। ধূমপায়ীরা দাঁত ও মুখের সঠিক যত্ন না নিলে তা দাঁতের রোগের ঝুঁকি বয়ে আনে।
ধূমপানে দাঁত ও মুখগহ্বরের যে ক্ষতি হয় : তামাকের নিকোটিনের প্রভাবে দাঁতে দাগ পড়ে। দাঁতে পাথর বা ক্যালকুলাস ও ডেন্টাল প্ল্যাক নামক জীবাণুর আস্তর জমার আশঙ্কা বাড়ে। ধূমপানে মাড়িতে রক্ত চলাচল কমে গিয়ে দাঁতের শেকড়ের চারপাশে পুষ্টি সরবরাহ কমে যায়। দেখা দেয় দুর্গন্ধ। ধূমপানে মুখের তালুতে দেখা দেয় প্রদাহ। ফলে ধূমপায়ীদের দাঁত তোলার পর ঘা শুকায় দেরিতে, যা ড্রাই সকেট নামে পরিচিত। শুধু কি তাই? ধূমপায়ীদের মুখগহ্বরের কোনো অস্ত্রোপচার হলে ক্ষতস্থান সহজে শুকায় না। মুখগহ্বরের ক্যানসারের জন্যও দায়ী এ ধূমপান। গবেষণায় দেখা গেছে, মুখগহ্বরের ক্যানসারের জন্য ৭৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই দায়ী ধূমপান। শুধু তা-ই নয়, যারা তামাক পাতা চিবান, তাদের ক্ষেত্রেও মুখগহ্বরের ক্যানসারের আশঙ্কা রয়েছে। যারা দীর্ঘদিন ধরে ধূমপান করেন, তাদের মাড়িরোগের চিকিৎসা এবং দাঁতের ইমপ্ল্যান্ট চিকিৎসার সাফল্যের হার কমে যায়। ধূমপায়ীদের কাছে খাবার বিস্বাদ মনে হতে পারে। জিহ্বায় কালো দাগ পড়তে পারে, যা ‘ব্ল্যাক হেয়ারি টাং’ নামে পরিচিত। ধূমপায়ীদের জিহ্বা ও মুখগহ্বরে ঘা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কাও বেশি থাকে।
দাঁত ও মুখগহ্বর যত্নে ধূমপায়ীদের করণীয় : সবার আগে ধূমপান ও তামাক চিবানোর অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। ৩ মাস অন্তর দাঁত ও মুখগহ্বর পরীক্ষা করাতে হবে। কোনো সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা করাতে হবে। ধূমপায়ীদের নিয়মিত দাঁতের স্কেলিং করিয়ে নেওয়া জরুরি। দিনে দুবার দাঁত মাজতে হবে। ব্যবহার করতে হবে ফোস। জীবাণুরোধী মাউথওয়াশও ব্যবহার করা যেতে পারে। ধূমপানের মুখগহ্বরে ক্যানসারের সূত্রপাত ঘটল কিনা, তা পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া জরুরি। ধূমপায়ীর মাড়ি থেকে নিয়মিতভাবে রক্ত পড়লে, মুখের ভেতরে লাল, সাদা বা গাঢ় রঙের কোনো দাগ দেখা দিলে, মাড়ি, ঠোঁট বা মুখগহ্বরের কোনো ফোলা বা গোটা দেখা দিলে, মুখের ভেতরে কোথাও ব্যথা, অসারতা বা অনুভূতিহীনতা সৃষ্টি হলে কিংবা মুখগহ্বর, মাড়ি বা ঠোঁটে দুসপ্তাহের বেশি সময় ধরেও শুকাচ্ছে না- এমন কোনো ঘা থাকলে ক্যানসার আশঙ্কার কথা বিবেচনা করে তা পরীক্ষা করাতে হবে। ধূমপানে মুখগহ্বর শুষ্ক হয়ে স্বাভাবিক লালা নিঃসরণ কমে যায়। ফলে দাঁতে জমা খাদ্যকণিকা সহজে পরিষ্কার হতে পারে না, বিস্তার লাভ করে ব্যাকটেরিয়া। ধূমপানে মুখগহ্বরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়, যা ব্যাকটেরিয়োর বিস্তারে সহায়ক। ফল হিসেবে দাঁতে দেখা দেয় ক্যারিজ বা দন্তক্ষয় রোগ, মাড়িরোগ, এমনকি মুখের দুর্গন্ধ।
ধূমপানজনিত মুখের দুর্গন্ধ দূর করার জন্য সবার আগে দরকার ধূমপান বন্ধ করা। নিয়মিত দাঁত ব্রাশ ও মাউথওয়াশ ব্যবহারে মুখগহ্বরে জমা হওয়া ধূমপানজনিত ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান পরিষ্কার হয়ে মুখের দুর্গন্ধ কমে আসতে পারে। দুর্গন্ধ দূর করতে চিবানো যেতে পারে চুইংগামও।
ধূমপানে দাঁতের অ্যানামেল নামক বাইরে আবরণে জমা হয় ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান, বিবর্ণ হয়ে পড়ে দাঁত। স্কেলিং করে দাঁতে জমে থাকা ক্ষতিকর উপাদান পরিষ্কার করে ফেলা যায়। দাঁত সাদা করার টুথপেস্ট বাজারে পাওয়া যায়। দাঁতের স্বল্পমাত্রার বিবর্ণতার ক্ষেত্রে এটি কাজে আসতে পারে। গুরুতর ক্ষেত্রে দাঁতের ব্লিচিং করানোর দরকার হতে পারে। ব্লিচিং উপাদানে রয়েছে হাউড্রোজেন পার-অক্সাইড বা কার্বামাইড পার অক্সাইড, যা বিবর্ণ দাঁত সাদা করতে পারে। ব্লিচিং করানোর জন্য যেতে হবে ডেন্টাল ক্লিনিকে। ঘরে ব্যবহারের জন্য ‘ব্লিচিং কিট’ও বাজারে কিনতে পাওয়া যায় আজকাল। ধূমপায়ীর ঠোঁট কালো হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই ঠোঁটের যত্নে কিছু উপদেশ মেনে চলা উচিত। প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ গ্লাস জল পান করা উচিত। এতে শরীর থেকে ধূমপানজনিত বিষাক্ত উপাদান বেরিয়ে যাবে। ‘লিপ বাম বা ‘ লিপ জেল’ ব্যবহার করে ঠোঁট আর্দ্র রাখতে হবে। লিপ বাম বা ‘লিপ জেলে থাকতে হবে সানস্ক্রিন, যা সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি প্রতিরোধ করতে পারে। সপ্তাহে একদিন ঠোঁটে লেবুর রস লাগালে তা ঠোঁটের কালো রঙ হালকা করতে সাহায্য করতে পারে। সপ্তাহে একদিন মধু ও বেকিং সোডা মিশিয়ে ঠোঁটে প্রলেপ দেওয়া যেতে পারে। কারণ মধুতে রয়েছে আর্দ্রতা রক্ষাকারী উপাদান। আর বেকিং সোডায় রয়েছে রঙ হালকা করার ব্লিচিং উপাদান। ধূমপায়ীরা ভিটামিন-সি এবং ভিটামিন-ই সমৃদ্ধ খাবার খেতে পারেন। এগুলো ধূমপানের কারণে ঠোঁটের ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলো পুণর্জীবিত করতে পারে।