আপনার শরীরকে পুনরায় কর্মক্ষম করার সর্বোত্তম উপায় হলো ঘুম। এটি সমস্ত শারীরিক এবং মানসিক চাপকে দূর করে এবং কার্ডিওভাসকুলার জটিলতাসহ বিভিন্ন অসুস্থতার ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। গবেষণা বলছে যে, একটি নির্দিষ্ট সময় রয়েছে যখন ঘুমাতে যাওয়া হার্ট ভালো রাখার জন্য কার্যকরী।
যুক্তরাজ্যের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, রাত ১০টা থেকে ১১.৩০টার মধ্যে ঘুমানো হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য সেরা সময়। ইউরোপীয় হার্ট জার্নালে প্রকাশিত নতুন গবেষণাটি প্রকাশ করা হয়। ইউ.কে. বায়োব্যাঙ্ক গবেষণায় ৪৩ থেকে ৭৯ বছর বয়সী ৮৮,০০০ জনেরও বেশি অংশগ্রহণকারীর কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছে, যারা একটি অ্যাক্সিলোমিটার ব্যবহার করে ৭ দিন তাদের ঘুমানোর সময় এবং ঘুম থেকে ওঠার সময় নিরীক্ষণ করতে সম্মত হয়েছিল। পাশাপাশি তাদের শারীরিক, জীবনযাপন এবং স্বাস্থ্যও মূল্যায়ন করা হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা রাত ১০টার আগে এবং যারা রাত ১১টার পরে ঘুমাতে যান, দুই দলের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। যারা ১০টার সময় ঘুমাতে গিয়েছিল তাদের তুলনায় যারা ১১টায় ঘুমাতে গিয়েছিল তাদের কার্ডিওভাসকুলার রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশি ছিল। এছাড়া ঘুমানোর সময় এবং হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকির সঙ্গে নারীদের সম্পর্ক বেশি ছিল।
নিদ্রাহীনতা বা ঘুমে অনিয়ম উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা এবং ডায়াবেটিসের মতো স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে। তাই অতীতে গবেষকরা দৈনিক অন্তত সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমের ওপর জোর দিয়েছেন। একইভাবে, সাম্প্রতিক গবেষণাগুলো ঘুমাতে যাওয়ার সময় এবং কার্ডিওভাসকুলার ঝুঁকির মধ্যে একটি সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে।
গবেষণার লেখক এবং এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংগঠনিক নিউরোসায়েন্সের একজন সিনিয়র লেকচারার ড. ডেভিড প্ল্যানস বলেছেন, “আমাদের গবেষণা ইঙ্গিত দেয় যে, ঘুমাতে যাওয়ার সর্বোত্তম সময় হলো শরীরের ২৪ ঘণ্টা চক্র এবং বিচ্যুতিগুলোর একটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে। সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সময় হলো মধ্যরাতের পরে, এর সম্ভাব্য কারণ এটি ভোরের আলো দেখার সম্ভাবনা কমিয়ে দিতে পারে। সকালের প্রথম আলো আমাদের শরীরের ঘড়ি পুনরায় সেট করে।’’
ড. ডেভিড প্ল্যানস ব্যাখ্যা করেন যে কীভাবে ঘুমাতে যাওয়ার সঠিক সময় সার্কাডিয়ান রিদম এবং দিনের আলোর সাথে ভালোভাবে ফিট করে। তিনি বলেন, যদিও আমরা আমাদের গবেষণা থেকে কার্যকারণ সম্পর্কে উপসংহারে পৌঁছাতে পারি না, তবে ফলাফলগুলো পরামর্শ দেয় যে তাড়াতাড়ি বা দেরিতে ঘুমাতে গেলে তা কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের ক্ষতির কারণ হতে পারে। সেইসঙ্গে শরীরের ঘড়িকে ব্যাহত করার সম্ভাবনা বেশি হতে পারে। তবে রাত ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে ঘুমাতে যাওয়া সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য নাও হতে পারে। সেজন্য আরও গবেষণার প্রয়োজন
বেঙ্গালুরু এস্টার সিএমআই হাসপাতালের ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজির সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. সঞ্জয় ভাটের মতে, ঘুমানোর সঠিক সময় বলে কিছু নেই। তিনি বলেন, ৮ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন ঘুম একটি সুস্থ হার্ট এবং শরীরের সুস্থ কার্যকারিতার জন্য অত্যাবশ্যক। তিনি আরও বলেন, ভালো ঘুমের জন্য অ্যালকোহল বা ঘুমের ওষুধ খাওয়া উচিত নয়। যদি কেউ অনিদ্রা অনুভব করে, রাতের বেলা ঘন ঘন ঘুম থেকে উঠতে হয় বা শ্বাস নিতে সমস্যা হয়, তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসা সহায়তা বা পরামর্শ নিতে হবে।bs