ওজন কমানোর জন্য কত নিয়ম মেনেই না ব্যায়াম করছেন। খাওয়া-দাওয়াতেও প্রচণ্ড ছাঁট-কাট। তবুও যেন ওজন কমছে না! কোনো কিছুতেই কমতি রাখেন নি।
তাহলে চলুন দেখে নেওয়া যাক কেন ওজন কমছে না-
১) মেটাবলিজম আগের অবস্থান ধরে রাখতে চাইছে
ওজন না কমার পেছনে এই কারণটা অনেকাংশে দায়ী। প্রতিদিন নিয়ম মেনে ঘন্টার পর ঘন্টা ব্যায়াম করে যাচ্ছেন কিন্তু ওজন কমছে না কিছুতেই। এর একটা কারণ হতে পারে আপনার বিপাকক্রিয়ার অভিযোজন অর্থাৎ মানবশরীরের যেকোন পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নেওয়ার সক্ষমতা। সহজ ভাবে বলতে গেলে আমাদের শরীর তার নিজস্ব কমফোর্ট লেভেল থেকে বের হতে সময় নেয়। এর আগে আপনি যে পরিমাণ খাবার গ্রহণ করতেন আপনার শরীর সেই পরিমাণ খাবার হজম করতেই অভ্যস্ত ছিল। এখন হুট করে ব্যায়ামের মাধ্যমে ক্যালরি ব্যয় বাড়ালেও খুব একটা কাজ হয়না। কারণ আমাদের আভ্যন্তরীণ মেটাবলিজম প্রক্রিয়া তখন চর্বি ধরে রেখে শরীরের আগের অবস্থান ধরে রাখতে চেষ্টা করে। এর ফলে সহজে ওজন কমতে চায়না।
এর থেকে মুক্তি পেতে ব্যায়ামের পাশাপাশি ক্যালির গ্রহণ করাও কমাতে পারেন। ধীরে ধীরে নতুন নিয়মে অভ্যস্ত হবে আমাদের শরীর। কিন্তু ভয় পেয়ে একবারে খাবার দাবার ছেড়ে দিলেও সেটা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই ওজন কমাতে ধৈর্য ধরে দীর্ঘসময় ধরে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালরি গ্রহণ করতে হবে ও সেই অনুযায়ী এক্সাসাইজ করে ক্যালরি ব্যায় করতে হবে।
২) জলের ওজন ধরে রাখছে শরীর
এমনও হতে পারে যে আপনার শরীর জলের ওজন ধরে রাখছে তাই আপনার ওজন কমছে না কিছুতেই। সপ্তাহে প্রতিদিন বা অন্তত তিনদিন ওজন নিয়ে দেখুন ওজন একই দেখায় কিনা। কারণ শুধুমাত্র জলের কারণেই আমাদের শরীরে অতিরিক্ত পাঁচ পাউন্ড ওজন বেশি হতে পারে। যদি একই সপ্তাহে এক একদিন এক রকম ওজন দেখায় তবে অতিরিক্ত ওজনটা ওয়াটার ওয়েট হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এমন হলে অর্থাৎ ব্লটিঙের জন্য ওজন বেশি হলে জল খাওয়া বাড়িয়ে দিন। একমাত্র জলই পারে শরীর থেকে অতিরিক্ত জল ফ্লাশ আউট বা নিঃসরণ করতে।
৩) ক্লিন ইটিং হ্যাবিট
এমন যদি হয় আপনি হুট করে ক্লিন বা অর্গ্যানিক খাদ্যাভ্যাস শুরু করেছেন তবে আপনার ওজনে হেরফের না ঘটার সম্ভাবনা আছে। প্রসেসড ফুড বাদ দিয়ে বেশি করে ন্যাচারাল খাবার খেলে ওজন বাড়বে না এই তত্ত্বকে অনেকে মিথ বলে থাকেন। খাবারের গুণগত মানের পাশাপাশি পরিমাণটাও গুরুত্বপূর্ণ। শুধুমাত্র ফল এবং শাকসবজি খেলেও ওজন বাড়তে পারে যদি ক্যালরির হিসেব না করে খান। ওজন কমাতে চাইলে আপনাকে প্রতিদিনের ক্যালরি গ্রহণ কমাতে হবে। সেটা যে খাবারই খান না কেন।
৪) চিট মিলে চিটিং
সারা সপ্তাহ কঠিন নিয়মের সাথে খাদ্যাভ্যাস মেনে চলে একদিন চিটিং ডে রেখে মনের মত খাবার খান। সারা সপ্তাহে যেসব খাবার খেতে ইচ্ছা করেছে সেসব খাবার খেতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে সারা সপ্তাহের ক্যালরি একদিনেই গ্রহণ করে ফেললেন। এতে ওজন তো কমবেই না উল্টো বেড়ে যেতে পারে। তাই চিট যদি করতেও হয় ক্যালরির হিসেব করেই খেতে হবে। অথবা অতিরিক্ত ক্যালরি বেশি ব্যায়াম করে ঝেরে ফেলতে হবে।
৫) খাদ্যাভ্যাসে বেশি কড়াকড়ি করে ফেলেন যদি
যেভাবে যেসব খাবার খেতে অভ্যস্ত আপনি হুট করে সব বাদ দিয়ে একদম আলাদা কোন খাদ্যাভ্যাস গ্রহণ করলেও ওজন দ্রুত কমার সম্ভাবনা কমে যায়। এতে করে দেখা যায় আমরা যেসব খাবারে অভ্যস্ত তা খাওয়ার ক্রেভিংস বেড়ে যায় আর চিট ডের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। এতে শরীর ও মন কেউই খুশি হয়না ফলের স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তাই যেসব খাবার খেয়ে অভ্যস্ত তা একদিনে বাদ না দিয়ে ধীরে ধীরে বাদ দিন। ওজন কমানোর জন্য ফ্লেক্সিবল ডায়েটিং অনুসরণ করতে পারেন। এতে করে আপনার পরিচিত আর প্রিয় খাবারগুলোই ক্যালরি কাউন্ট করে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে খেতে শুরু করুন। তাই বলে তেলে ভাঁজা কিংবা অতিরক্ত মসলাদার খাবার খেতে শুরু করবেন না। ওজন কমাতে প্রতিদিন ব্যায়াম করার পাশাপাশি যতটা সম্ভব স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে তৈরি করা খাবার খান। আর অবশ্যই পরিমাণ অর্থাৎ ক্যালরি হিসেব করে খান।bs