ঝালের ভয়? লঙ্কা দেখলেই আঁতকে ওঠেন? ভয় ছেড়ে নিয়মিত খান ঝাল কাঁচালঙ্কা। ক্যানসার থেকে ডায়াবেটিস। ব্যথা থেকে জীবাণু সংক্রমণ। এক কামড়েই ম্যাজিক। অব্যর্থ লঙ্কার গুণ।
কাঁচা লাল লঙ্কা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। তাই একে বলে শরীরের সুরক্ষাকর্মী। ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুরুষদের বেশি কাঁচা লঙ্কা খাওয়া উচিত। কারণ, পুরুষরাই বেশি প্রস্টেট ক্যানসারে ভোগেন। প্রস্টেট ক্যানসারের যম কাঁচা লঙ্কা। যাঁরা নিয়মিত ধূমপান করেন, তাঁদের বেশি করে কাঁচা লঙ্কা খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। কাঁচা লঙ্কার রয়েছে ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধক ক্ষমতা। ফুসফুসকে সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে। লাং ক্যানসারের সম্ভাবনা কমায় কাঁচা লঙ্কা। গবেষণা বলছে, যাঁরা লাল লঙ্কা খান, তাঁদের শরীরে এই ধরনের রোগের সম্ভাবনা কমে যায়।
গবেষকরা জানাচ্ছেন, লঙ্কার ক্যাপসাইসিনের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান খাবারে স্পাইসি ফ্লেভার অ্যাড করে। আর এই অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদানই শরীরে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করে। এটি শরীরের মধ্যে থাকা কোনও টিউমারের বৃদ্ধি রোধ করে। এর পাশাপাশি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। বিষয়টি সুনিশ্চিত করার জন্য বিশ্বের নানা প্রান্তের প্রায় ৫,৭০,০০০ জন মানুষের স্বাস্থ্য ও ডায়েটসংক্রান্ত একাধিক দিক খতিয়ে দেখা হয়। চলে দীর্ঘ পরীক্ষা-নিরীক্ষাও। আর সেই গবেষণা থেকেই জানা গিয়েছে যে, যথাযথ পরিমাণ লাল লঙ্কার একটা গুরুত্ব রয়েছে শরীরে।
একজন সুস্থ মানুষের দিনে ঠিক কতটা পরিমাণ লাল লঙ্কা খাওয়া দরকার। সম্প্রতি এক সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে এই বিষয়টি সম্পর্কে জল্পনা আরও কয়েক ধাপ বাড়িয়েছে। প্রতিবেদন সূত্রে জানা গিয়েছে, সাধারণত এই ধরনের সবজি খুব একটা খান না ব্রিটিশরা, তবে এই লকডাউনে তাঁদের লঙ্কা খাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। বেশিরভাগ মানুষজনই এই সময়টায় বাড়িতে রান্না করছেন। খাবার নিয়ে নানা ধরনের এক্সপেরিমেন্ট করছেন। চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের মতে, এই লকডাউন পিরিয়ড নিজেদের ডায়েট বা খাদ্যতালিকাকে আরও সমৃদ্ধ করা, লঙ্কা বা অন্যান্য কার্যকরী ও পুষ্টিকর সবজি খাওয়ার উপযুক্ত সময়।
কাঁচা লাল লঙ্কায় ভরপুর ভিটামিন সি ও বেটা ক্যারোটিন। জিরো ক্যালোরি কাঁচা লঙ্কা। ওজন কমায়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ত্বক ও চোখকে সুস্থ রাখে। রক্তে চিনি বা ব্লাড সুগার কমাতে সাহায্য করে। কাঁচা লঙ্কায় রয়েছে প্রচুর ফাইবার। খাবার হজম করতে সাহায্য করে। মস্তিষ্কে এন্ডরফিন ক্ষরণ হয়। যা মুড ভাল রাখে। ব্যথা কমায়। বন্ধ নাক খুলে যায়। সর্দি বা সাইনাস সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। অধিকাংশ ভারতীয় মহিলা লোহার অভাবজনিত সমস্যায় ভোগেন। তাঁদের জন্য কাঁচা লঙ্কা খুব উপকারি। কারণ, এতে রয়েছে প্রচুর প্রাকৃতিক লোহা।কাঁচা লঙ্কার রয়েছে প্রচুর ভিটামিন কে। ফলে, অস্টিওপোরোসিসের সম্ভাবনা কমায়। কেটে গেলে প্রচুর রক্তক্ষরণও হয় না।
গবেষকরা জানাচ্ছেন, কাঁচা লঙ্কা, শুকনো লঙ্কা এমনকি গোলমরিচ খাবারে ফ্লেভার বাড়ানোর পাশাপাশি শরীরে নুনের চাহিদাও কমায়। প্রচুর পরিমাণে নুন খেলে ব্লাড প্রেসার বা হৃদরোগের সমস্যা হয়। এ ক্ষেত্রে লাল লঙ্কা বা অন্য যে কোনও লঙ্কা কিন্তু নুনের চাহিদা কমিয়ে রোগের সম্ভাবনা কমায়। তবে চিলি স্যস বা এই জাতীয় প্যাকেটজাত মশলা থেকে দূরে থাকতে হবে। কারণ এগুলিতে উচ্চমাত্রায় সোডিয়াম থাকে। যা শরীরের ক্ষতি করতে পারে। এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন ওহিয়োর ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের বো জু। তিনিও একই কথা জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, নিয়মিত পরিমিত মাত্রায় লাল লঙ্কা খেলে হৃদরোগ, ক্যানসার-সহ একাধিক রোগের ঝুঁকি কমে যায়। তাই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজন মতো লঙ্কা খাওয়া যেতে পারে। তাতে শরীরের প্রয়োজনীয় উপাদানগুলির চাহিদা পূরণ হবে ও শরীর ভালো থাকবে। এই সমীক্ষার মাধ্যমে শুধুমাত্র লঙ্কার ভালো গুণকে তুলে ধরা হয়েছে। তার মানে এটা নয়, যে বেশি পরিমাণে লঙ্কা খেলে মৃত্যুর হার কমে যাবে।