বছরের পর বছর গর্ভনিরোধক বড়ি খাচ্ছেন? কী কী নিয়মে ঠেকাবেন অসুখ?

জরায়ু মুখের ক্যান্সার নারীদের জন্য খুবই দুশ্চিন্তার কারণ। অনেকেই এই ক্যান্সারে আক্রান্ত! জানেন কি? নিয়মিত শারীরিক সম্পর্ক বজায় রাখেন এমন নারীদের শতকরা ৮০ জন ৫০ বছর বয়সের মধ্যে তার সঙ্গীর যৌনাঙ্গে থাকা এক ধরনের ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হন।

ভাইরাসটির নাম হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস বা ‘এইচপিভি’৷ তবে সবাই কিন্তু এই ভাইরাসে সংক্রমিত হন না। আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির সমীক্ষা অনুসারে, ৩০ থেকে ৩৪ বছর বয়স থেকে সে আশঙ্কা শুরু হয়। ৫৫ থেকে ৬৫ বছর বয়সে তা সবচেয়ে বাড়ে।

শরীরে ঢোকার পর এই ভাইরাস দীর্ঘ দিন চুপ করে থাকে। তারপর কোনো ইন্ধন পেলে বা কখনো হঠাৎই তা ক্ষত তৈরি করে জরায়ুমুখের ক্যান্সার ডেকে আনে। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ যত জন সংক্রমিত হন, তার মধ্যে খুব কম সংখ্যকই আক্রান্ত হন ক্যান্সার।

ক্যান্সারের ইন্ধন বলতে? বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, দীর্ঘ দিন গর্ভনিরোধক পিল খাওয়া, বেশি সংখ্যক বার নরমাল ডেলিভারি বা গর্ভপাত হয়ে জরায়ু–মুখে বার বার ঘষা লাগা, ১৭ বছর বয়সের আগে থেকে সহবাসের অভ্যাস, বেশি যৌন সঙ্গী থাকা, এইচআইভি জাতীয় যৌন সংক্রমণ, কোনো কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া, যৌনাঙ্গের পরিচ্ছন্নতার অভাব, অ্যান্টিক্সিড্যান্টযুক্ত খাবার ও রঙিন শাকসব্জি–ফল কম খাওয়া, ধূমপান করা ইত্যাদিই উস্কে দিতে পারে এই ক্যান্সার।

তবে কিছুটা সাবধান হলে ও সতর্ক থাকলে এই অসুখ থেকে অনেকটাই দূরে থাকা যায়। কী কী নিয়মে ঠেকাবেন অসুখ? চিকিৎসকরা বাতলালেন উপায়-

কন্ডোম ফুলপ্রুফ নয়। বিপদ এড়াতে ভ্যাকসিন নেয়া ভাল। তিনটি ইঞ্জেকশন নিতে হয়। প্রথমটি নেয়ার এক থেকে দু’মাসের মাথায় দ্বিতীয়টি, আর তৃতীয়টি দেয়া হয় প্রথমটি নেয়ার ৬ মাস পর। ৯ থেকে ১২ বছর বয়সে ভ্যাকসিন নিলে প্রায় ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে জরায়ুমুখের ক্যান্সার ঠেকানো যায়। ঠেকানো যায় ভালভা, ভ্যাজাইনা, অ্যানাল ক্যানসারও।

যৌন জীবন শুরু হয়ে গেলেও, যদি ওই সংক্রমণ না হয়ে থাকে, ২৬ বছর বয়সের মধ্যে ভ্যাকসিন দিলে কাজ হয়। ছেলেদের থেকে রোগ আসে বলে তাদেরও দেয়া উচিত। ভ্যাকসিন নিলেও সামান্য কিছু ক্ষেত্রে রোগ হতে পারে। কাজেই যৌন জীবন শুরু হওয়ার পর প্রতি বছর বা এক বছর অন্তর নিয়ম করে প্যাপ স্মিয়ার টেস্ট করতে হয়।

যে যে উপসর্গ হলে সতর্ক হতে হবে, তা হল, পিরিয়ডের সময় ও ধরনের পরিবর্তন বা পিরিয়ডের সময় ছাড়া অন্য সময় রক্তপাত, বেদনাদায়ক সহবাস বা সহবাসের পর রক্তপাত, ঋতুবন্ধের পর রক্তপাত হওয়া, সাদা স্রাবের সঙ্গে অল্প রক্তের ছিটে বা দুর্গন্ধযুক্ত সাদা স্রাব, রোগ বেড়ে গেলে এর পাশাপাশি তলপেট ও কোমরে খুব ব্যথা, প্রস্রাবের সময় অসুবিধা, প্রস্রাব আটকে যাওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি হতে পারে। ৯ থেকে ১২ বছর বয়সে ভ্যাকসিন নিলে প্রায় ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে জরায়ুমুখের ক্যানসার ঠেকানো যায়।

চিকিৎসা পদ্ধতি

কলপোস্কোপ দিয়ে জরায়ু-মুখ পরীক্ষা করে টিস্যু বায়োপসিতে পাঠানো হয়। রিপোর্ট পজিটিভ হলে সোনোগ্রাফি, রক্ত পরীক্ষা, বুকের এক্স রে ও স্ক্যান করতে হতে পারে। প্রথম পর্যায়ে অস্ত্রোপচার করে জরায়ু-মুখ বাদ দিলেই চলে। অনেক সময় রে দিলেও হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে জরায়ু, টিউব, ওভারি এবং কিছু গ্ল্যান্ড বাদ দিয়ে রে দেয়া হয়। পরের ধাপে লাগতে পারে কেমো-রেডিয়েশন। অ্যাডভান্স স্টেজে কেমোথেরাপি দিতে হয়৷ টার্গেটেড কেমোথেরাপিও দেয়া যেতে পারে।

ক্যান্সার হওয়ার আগের পর্যায়ে রোগ ধরা পড়লে ছোট সার্জারিতে কাজ হয়। স্টেজ ১ ও ২ তেও রোগ সারে। রোগ এগিয়ে গেলে চিকিৎসায় অনেক দিন ভালও থাকেন রোগী।

Related Posts

© 2024 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy