মাঝেমধ্যে ছোটখাটো বিষয় ভুলে যাওয়া সব বয়সের মানুষের জন্যই স্বাভাবিক বিষয়। আমাদের প্রায় সবার সঙ্গেই কোনো কোনো দিন এমনটা ঘটে যে, হয়তো মানিব্যাগ বা চাবির গোছা খুঁজে পাই না, কখনো আবার প্রাক্তন কোনো সহকর্মীর সঙ্গে অনেকদিন পর দেখা হলে নাম মনে করতে পারি না। হয়তো আমাদের মন সেদিন অন্য কোনোকিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকে যে কারণে ছোট ছোট বিষয়গুলো মনে রাখতে পারে না। এটি যদি মারাত্মক আকার ধারণ করে তখনই সমস্যা দেখা দেয়।
ভুলে যাওয়ার সমস্যা দেখা দিলে তা আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাপনে প্রভাব ফেলতে শুরু করে। এটি অনেকের ক্ষেত্রে বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেখা দেয়। যা ডিমেনশিয়া নামে পরিচিত। এটি সুনির্দিষ্ট কোনো রোগ নয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে, ডিমেনশিয়া শুরু হওয়ার আগে কিছু সূক্ষ্ম লক্ষণ দেখা দেয়। যদিও এই মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থার কোনো নিরাময় নেই বা এটি প্রতিরোধ করা যায় না। তবে প্রাথমিক লক্ষণ চিহ্নিত করার পর চিকিত্সা শুরু করলে তা এই সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। জেনে নিন ডিমেনশিয়ার ৫টি প্রাথমিক লক্ষণ-
কথা বুঝতে না পারা
অক্সফোর্ড গবেষকদের দ্বারা পরিচালিত একটি নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, চারপাশের কোলাহলে নির্দিষ্ট কারও বক্তব্য বুঝতে না পারাও ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বোঝাতে পারে। এ ধরনের অক্ষমতা সাধারণত শ্রবণশক্তির সমস্যা হিসেবে মনে হতে পারে, কিন্তু অক্সফোর্ড গবেষকরা এটিকে ডিমেনশিয়ার লক্ষণ হিসেবেও উল্লেখ করেছেন। গবেষকদের মতে, যারা উচ্চ শব্দযুক্ত পরিবেশে শোনার জন্য চেষ্টা করে তাদের ডিমেনশিয়া হওয়ার সম্ভাবনা দ্বিগুণ হয়।
স্মৃতিশক্তি হ্রাস
স্মৃতিশক্তি হ্রাস ডিমেনশিয়ার প্রাথমিক লক্ষণগুলির মধ্যে একটি। এই সমস্যার শুরুর দিকে আক্রান্ত ব্যক্তি বিভিন্ন জরুরি কথা বা স্মৃতি মনে করতে পারেন না। তারা এই ধরনের বিশদ বিবরণ মনে রাখার জন্য পরিবার এবং বন্ধুদের ওপর নির্ভর করে। তবে যদি কেউ মাঝে মাঝে কোনো ঘটনা ভুলে যান এবং পরে স্মরণ করেন সেটি স্মৃতিভ্রংশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় না। এটি কেবল একটি বয়স-সম্পর্কিত সমস্যা।
প্রতিদিনের পরিচিত কাজগুলো কঠিন মনে হওয়া
ডিমেনশিয়ার লক্ষণ দেখা দিলে এককাপ চা তৈরি করা কিংবা কম্পিউটার চালানো এমন পরিচিত কাজগুলোও করা কঠিন হয়ে পড়ে। এগুলো এমন কাজ যা আপনি বেশ কয়েক বছর ধরে করেছেন কিন্তু এই পর্যায়ে এসে তা সম্পন্ন করা চ্যালেঞ্জিং বলে মনে হতে পারে। আপনি কর্মক্ষেত্রে বা বাড়িতে এই সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন।
কথোপকথন চালিয়ে যেতে না পারা বা সঠিক শব্দ খুঁজে না পাওয়া
ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি কথোপকথনে বা তার চিন্তাভাবনাকে কথায় প্রকাশ করাও কঠিন মনে করতে পারেন। তারা ভুলে যেতে পারেন যে তারা কী কথা বলছিলেন বা অপরজন কী বলছিলেন। এই অবস্থায় কথোপকথন চালিয়ে যাওয়া কঠিন হতে পারে এবং শেষ করতে আরও বেশি সময় লাগতে পারে। এমনকি অনেকে ভুল বানান শুরু করে বা ব্যাকরণগত ভুল করে, তাদের হাতের লেখা বোঝাও কঠিন হয়ে পড়ে।
মেজাজ পরিবর্তন
ঘন ঘন মেজাজ পরিবর্তন হলে তা সহজেই ডিমেনশিয়ার লক্ষণ হিসেবে সনাক্ত করা যেতে পারে। কখনও কখনও আপনি হাসিখুশি এবং জীবন পূর্ণ অনুভব করতে পারেন। কখনো আবার সবকিছু বিষাদ লাগতে শুরু করতে পারে। ব্যক্তিত্বের মধ্যে ধীরে ধীরে পরিবর্তন আসবে, যা বেশ স্পষ্ট হবে। হতাশায় আক্রান্ত ব্যক্তিরাও এই ঝুঁকিতে থাকেন।