দীর্ঘদিন ব্যথানাশক ঔষধ খেয়েও ব্যথা কমছে না? যা করা দরকার আপনার

পেন ম্যানেজমেন্ট’ করান। কোন ধরনের ব্যথায় এই পদ্ধতি সবচেয়ে বেশি কাজ দেয়, কীভাবে করা হয় এই চিকিৎসা।

ব্যথায় কষ্ট পাওয়ার চেয়ে মৃত্যু অনেক ভাল। যাঁরা এই কঠিন অবস্থার মধ্য দিয়ে যান, তাঁরাই বোঝেন কতটা অসহনীয় এই দিনগুলি। এক ৩৫ বছরের লিভার ক্যানসারে (Cancer) আক্রান্ত রোগী যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে চিকিৎসকের কাছে স্বেচ্ছা মৃত্যুর আবেদন জানান। পরিবারের লোকজনও রোগীর এই ছটফটানি চোখে দেখতে পারছিলেন না…তারপর শেষ চেষ্টায় ক্যানসারের চিকিৎসার পাশাপাশি ‘পেন ম্যানেজমেন্ট’ (Pain Management) করানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ফল খুব পজিটিভ। যে রোগী কিছুই করতে পারছিলেন না, খাবারও খেতে পারছিলেন না, ব্যথার চোটে প্রাণ যায় যায়, ‘পেন ম্যানেজমেন্ট’ শুরু হওয়ার পর সেই রোগী ঘরে হাঁটাচলা করতে শুরু করলেন। যদিও ক্যানসারকে পরবর্তীকালে জয় করতে পারেননি রোগী, তবুও যে ক’দিন বেঁচে ছিলেন, ক্যানসারের এই মরণাপন্ন রোগীকে ব্যথায় কাতরাতে হয়নি, এটাই বা কম কীসের!

আসলে শুধু ক্যানসার নয়, আমাদের শরীরে পা থেকে মাথা পর্যন্ত বিভিন্ন সমস্যায় ব্যথা তীব্র থেকে তীব্রতর হতে পারে। অসুখে রোগী যত না ভেঙে পড়েন, তারচেয়েও বেশি ব্যথায় কাতর হন। বাতের ব্যথা বা আর্থ্রাইটিস ঘরে ঘরে সকলের সমস্যা। সারাজীবন ওষুধ খেয়েও ব্যথা যায় না। ওষুধ খেলে ভাল, নাহলেই যে কে সেই। অন্যদিকে ব্যথার ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। পেন ম্যানেজমেন্ট করে বাতের ব্যথাকেও সহজে বশে রাখা যায়। অন্যদিকে কিছু ব্যথায় আবার সেরে গেলেও মনে তার রেশ থেকেই যায়। ব্যথা মাঝে মাঝেই চাগাড় দেয়। সমস্ত ক্ষেত্রেই ‘পেন ম্যানেজমেন্ট’ রোগীর কোয়ালিটি অফ লাইফ বা ব্যথাময় জীবনকে স্বস্তিদায়ক করে তুলতে পারে। তাই, কয়েক বছর আগে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল কাউন্সিল সমস্ত চিকিৎসার মতোই ‘পেন ম্যানেজমেন্ট’-কে স্বতন্ত্র একটি চিকিৎসার শাখা হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

অর্গানিক পেনঃ যে ব্যথার পিছনে কোনও না কোনও অঙ্গের সমস্যা লুকিয়ে থাকে। ডিস্ক কোলাপ্স, হাড়ের ক্ষয় কিংবা সায়াটিকা নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ইত্যাদি নানা কারণ হতে পারে। ক্যানসার, বাত, হাড়ের সমস্যা, নার্ভজনিত ব্যথা, হাড়ের ক্ষয়, সাইনাস, দাঁতে ব্যথা, এসব ক্রনিক ব্যথায় পেন ম্যানেজমেন্ট চিকিৎসা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুধু সমস্যা ঠিক করলেই ব্যথা কমে না। পেন ম্যানেজমেন্ট বিশেষজ্ঞ বিভিন্ন ওষুধ ও থেরাপির মাধ্যমে রোগীর ব্যথার কষ্টকে সম্পূর্ণরূপে নিরাময় করতে পারেন। তবে যে কোনও হাড় ভাঙলে আগে হাড় জোড়া লাগাতে হবে তারপর ব্যথা থাকলে পেন ম্যানেজমেন্ট করা যেতে পারে।

নন অর্গানিক পেনঃ এক্ষেত্রে আপাতদৃষ্টিতে ব্যথার নির্দিষ্ট কারণ চিহ্নিত করা যায় না। এগুলোই নন-অর্গানিক পেন। মাইগ্রেন, ফ্যান্টম লিম্ব সিনড্রোম (যেমন- পা কেটে বাদ গিয়েছে, কিন্তু রোগী মনে করছেন তাঁর সেই পায়েরই বুড়ো আঙুলে ব্যথা হচ্ছে), কমপ্লেক্স রিজিওনাল পেন সিনড্রোম (আগের আঘাত বা চোট থেকে পরবর্তী সময় ব্যথা বা যন্ত্রণা) হলে পেন ম্যানেজমেন্টই একমাত্র চিকিৎসা।

কীভাবে করা হয়ঃ সার্বিক পেন ম্যানেজমেন্টের তিনটি পর্যায়। প্রথমত, রোগীর ব্যথা বা যন্ত্রণা কমানো হয়, দ্বিতীয়ত, যে কারণে যন্ত্রণা হচ্ছে সেটা নিরাময় দরকার। প্রয়োজনে নির্দিষ্ট অসুখের স্পেশ্যালিস্ট চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরি হতে পারে, তৃতীয়ত, রোগীকে আগের মতো স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরিয়ে আনা। রোগীর অর্গানিক নাকি নন অর্গানিক কারণে ব্যথা হচ্ছে সেটাই চিকিৎসক চিহ্নিত করে, তারপর ওষুধ, থেরাপি, ব্যায়াম, জীবনযাপনের পরিবর্তন দ্বারা ব্যথা লাঘবের চেষ্টা করা হয়। এতে কাজ না হলে ইন্টারভেনশনের মাধ্যমে, অর্থাৎ ইনজেকশন দেওয়া, নার্ভ ব্লক করা কিংবা রিজেনারেটিভ থেরাপি প্রয়োগ (ক্ষয়ে যাওয়া হাড়ের পুনর্গঠন)করেও ‘পেন ম্যানেজমেন্ট’ করা হয়। তবে অপারেশনের ছাড়াই।

Related Posts

© 2024 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy