হাঁটলে যেমন শরীর সুস্থ থাকে; ঠিক তেমনই দৌড়ানোর উপকারিতাও অনেক। জানলে অবাক হবেন, প্রতিদিন দৌঁড়ালে বাড়ে আয়ু এবং কঠিন সব রোগ থেকে সুস্থতা মেলে। এজন্য বেশিক্ষণ দৌড়ানোর প্রয়োজন নেই। দৈনিক মাত্রা আধা ঘণ্টা দৌড়ালেই সব উপকার পাবে আপনার শরীর।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দিনে মাত্র আধা ঘণ্টা দৌড়ালেই শরীরের রক্তসঞ্চালন বাড়বে। যা ফুসফুস ও হৃৎপিণ্ডের কার্যক্ষমতা বাড়াবে। এ ছাড়াও দূর হবে মানসিক চাপ এবং শরীরের কর্মক্ষমতা বাড়বে। জানেন কি, নিয়মিত দৌড়ালে এবং শরীরচর্চা করলে ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন হবে না! ক্যান্সারসহ বিভিন্ন কঠিন রোগের দাওয়াই হিসেবে কাজ করে নিয়মিত দৌড়ানোর অভ্যাস।
আমেরিকান কলেজ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে অনুসারে, নিয়মিত দৌড়াদৌড়ি করলে কার্ডিওভাসকুলারজনিত মৃত্যু ঝুঁকি অনেকাংশেই কমে। মার্কিন সরকার এবং ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের পরামর্শ অনুযায়ী, প্রতি সপ্তাহে ১৫০ মিনিট মাঝারি-তীব্র (দ্রুত হাঁটাচলা বা শরীরচর্চা করা) বা ৭৫ মিনিট এরোবিক অনুশীলন (চলমান, সাইকেল চালানো, সাঁতার বা প্রতিযোগিতামূলক ক্রীড়া) করার বিকল্প নেই।
এ্যারোবিক্স সেন্টার লম্বিটুডিনালের এক সমীক্ষায় গবেষকরা দেখেছেন, দৌড়ের সঙ্গে দীর্ঘায়ুর কোনো যোগসূত্রতা আছে কি-না। ১৫ বছর ধরে ১৮-১০০ বছর বয়সী ৫৫ হাজারেরও বেশি প্রাপ্তবয়স্কদের দৈনিক শরীরচর্চার বিষয়ে রেকর্ড সংরক্ষণ করেন গবেষকরা।
এরপর গবেষকরা সব তথ্যাদি পর্যবেক্ষণ করে দেখেন, লিঙ্গ, বয়স, ওজন, স্বাস্থ্য পরিস্থিতির উপর বিবেচনা করে দেখা যায় দৌড় সবার সুস্থতায় বিরাট অবদান রেখেছে। গবেষণায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে যারা নিয়মিত দৌড়াদৌড়ি করেছেন, পরীক্ষা করে দেখা যায় অন্যদের তুলনায় তাদের ৩০ শতাংশ মৃত্যুঝুঁকি কমেছে।
সেইসঙ্গে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকে মৃত্যুঝুঁকি কমেছে ৪৫ শতাংশ। গবেষণায় অংশ নেওয়া ৫৫ হাজারের মধ্যে ১,২১৭ জন হৃদরোগজনিত কারণে মারা যান। জানা যায়, তাদের মধ্যে ২৪ শতাংশই নিয়মিত শরীরচর্চা করতেন না।
গবেষণার প্রধান লেখক এবং আইওয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির কিয়নিওলজির সহকারী অধ্যাপক ড. ডিসি লি’র মতে, প্রতি সপ্তাহে এক ঘণ্টারও কম দৌড়ানো ব্যক্তিদের তুলনায় যারা ৬ বছরেরও বেশি সময়কাল ধরে নিয়মিত দৌড়াদৌড়ি করেছেন; তারা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হন।
এ ছাড়াও ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে দৌড়। ১৭০ টি গবেষণা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন বা দৌড়ান; তাদের বেশ কিছু ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। এ ছাড়াও আপনার যদি ক্যান্সার হয়; তাহলে কেমোথেরাপি দেওয়ার সময় ডাক্তারের অনুমতি নিয়ে দৌড়ালে বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতা থেকে মুক্তি মিলবে।
কানাডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা অনুসারে, নিয়মিত ব্যায়াম এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশেই কমে যায়। গবেষণা আরও দেখা যায়, নিয়মিত ব্যায়াম করলে ক্যান্সার রোগীদের ক্লান্তি এবং বমি বমি ভাবসহ ক্যান্সার চিকিত্সার পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া থেকে মুক্তি মেলে।
গবেষণ আরও প্রকাশ করে, নিয়মিত অনুশীলন করলে ক্যালোরেক্টাল ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ক্যান্সার পুনরাবৃত্তি বা মৃত্যুর ঝুঁকি ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়।
যারা অনিদ্রার সমস্যা ভুগছেন, তাদের জন্য দৌড় হতে পারে সবচেয়ে ভালো প্রতিকার। কারণ দৌড়ালে ভালো ঘুম হবে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি সপ্তাহে ১৫০ মিনিট দৌড়ালে ঘুমের মান ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।
আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, ১৬ সপ্তাহ দৌড়ানোর কারণে ইনসোমনিয়াতে আক্রান্ত মানুষের রাতে ভালো ঘুম হয়েছে এবং সারাদিন শরীরে ক্লান্তিবোধ হয়নি।
যেভাবে দৌড়ালে উপকার মিলবে
প্রাথমিক অবস্থায় ধীরে দৌড়াতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় এক মিনিট হাঁটা আবার তিন মিনিট দৌড়ানো। এভাবে ১০ থেকে ১৫ বার পর্যন্ত পুনরাবৃত্তি করুন। প্রতিদিন একটু একটু করে দৌড়ের সময়সীমা বাড়াতে হবে।
দৌড় থামানোর কয়েক মিনিট আগে গতি কমাতে হবে। যাতে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারে। দৌড় থামানোর পর মাংসপেশি টানটান করে ২০ সেকেন্ড ধরে রাখুন।
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের মতে, দিনে ২-৩বার ১০ থেকে ১৫ মিনিট দৌড়ালে, প্রতিবারই মিলবে একটানা আধা ঘণ্টা দৌড়ানোর সমান উপকার।