পৃথিবীর সবচেয়ে পুষ্টিকর হার্ব সজিনা বা সাজনা গাছের পাতাকে বলা হয় অলৌকিক পাতা।
গবেষকরা সজিনা পাতাকে নিউট্রিশন্স সুপার ফুড বলেছেন। শাক হিসেবে ব্যবহৃত সজিনা পাতায় রয়েছে ভিটামিন-এ’র এক বিশাল উৎস। সজিনা পাতা এবং ফল উভয়ের মধ্যেই বিপুল পরিমাণে পুষ্টি থাকে।
এতসব পুষ্টিগুণ একসঙ্গে আছে বলেই এর মাধ্যমে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা এবং জীবনধারণের পুষ্টি দুটোই পাওয়া যায়। প্রতি গ্রাম সজিনা পাতায় একটি কমলার চেয়ে ৭ গুণ বেশি ভিটামিন-সি রয়েছে।
দুধের চেয়ে ৪ গুণ বেশি ক্যালসিয়াম ও দু’গুণ বেশি প্রোটিন রয়েছে। গাজরের চেয়ে ৪ গুণ বেশি ভিটামিন-এ এবং কলার চেয়ে ৩ গুণ বেশি পটাশিয়াম বিদ্যমান সজিনা পাতায়। ফলে এটি অন্ধত্ব ও রক্তস্বল্পতাসহ বিভিন্ন ভিটামিন ঘাটতিজনিত রোগের বিরুদ্ধে বিশেষ হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে।
সজিনায় প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক থাকে এবং পালং শাকের চেয়ে ৩ গুণ বেশি আয়রন বিদ্যমান, যা অ্যানেমিয়া দূরীকরণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সজিনা মানবদেহের কলেস্টেরল-এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণেও অন্যতম অবদান রাখে।
মানুষের শরীরের প্রায় ২০ শতাংশ প্রোটিন, যার গাঠনিক একক হলো অ্যামাইনো এসিড। শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মেটাবোলিজম এবং শরীরের অন্যান্য কার্যাবলী পরিপূর্ণরূপে সম্পাদনে অ্যামাইনো এসিড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
মানুষের শরীরের যে ৯টি অ্যামাইনো এসিড খাদ্যের মাধ্যমে সরবরাহ করতে হয়, তার সবই এ সজিনার মধ্যে বিদ্যমান। এটি শরীরের সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ডায়াবেটিসের মতো কঠিন রোগের বিরুদ্ধে কাজ করে থাকে।
নিয়মিত দৈনিক সেবনে শরীরের ডিফেন্স মেকানিজমকে আরো শক্তিশালী করে এবং ‘ইমিউনিটি স্টিমুল্যান্ট’ হওয়ার দরুন এটি ‘এইডস’ আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। শরীরের হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে পুষ্টিবর্ধক হিসেবেও কাজ করে সজিনা।
ওজন কমাতে ব্যায়ামের পাশাপাশি এটি বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই সজিনা মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
পাতা থেকে তৈরি এক টেবিল চামচ পাউডারে ১৪ শতাংশ প্রোটিন, ৪০ শতাংশ ক্যালসিয়াম, ২৩ শতাংশ আয়রন বিদ্যমান, যা এক থেকে তিন বছরের শিশুর সুষ্ঠু বিকাশে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় এবং বুকের দুধ খাওয়ানোকালীন ৬ টেবিল চামচ পাউডার একজন মায়ের প্রতিদিনের আয়রন এবং ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করে থাকে সজিনা।
এটিতে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। যকৃত ও কিডনি সুস্থ রাখতে এবং রূপের সৌন্দর্যবর্ধক হিসেবেও কাজ করে সজিনা।
সজিনায় প্রায় ৯০টিরও বেশি এবং ৪৬ রকমের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বিদ্যমান। এতে ৩৬টির মতো অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য আছে।
এছাড়াও এটি অকাল বার্ধক্যজনিত সমস্যা দূর করে এবং ক্যান্সারের বিরুদ্ধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। সজিনায় প্রতি ১০০ গ্রামে খাদ্য উপযোগী পুষ্টি উপাদানের মধ্যে জ্বলীয় অংশ ৮৩.৩ গ্রাম, খনিজ ১.৯ গ্রাম, আঁশ ৪.৮ গ্রাম, খাদ্যশক্তি ৬০ কিলো-ক্যালোরি, প্রোটিন ৩.২ গ্রাম, চর্বি ০.১ গ্রাম, শর্করা ১১.৪ গ্রাম, ক্যালশিয়াম ২১.০ মিলিগ্রাম, লোহা ৫.৩ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ৭৫০ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন-এ ১-০.০৪ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-বি ১-০.০২ মিলিগ্রাম ও ভিটামিন-সি ৪৫.০ মিলিগ্রাম বিদ্যমান।