পায়ুপথ ও পায়খানার রাস্তার চারপাশের ত্বকে চুলকানি একটি বিব্রতকর সমস্যা। মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ২ থেকে ৫ শতাংশ লোকই এ অস্বস্তিকর রোগের মনোকষ্টে ভুগছেন। এ রোগের প্রকোপ অনেক ক্ষেত্রে ত্বকের সাধারণ রোগ যেমন একজিমা ও সরিয়াসিসের চেয়েও বেশি। কিন্তু দেখা গেছে, বেশিরভাগ রোগী সামাজিক ভয় বা বিড়ম্বনার কারণে এ রোগ গোপন রাখেন। এ রোগের কারণগুলো অনেক। গবেষণায় অনেক নতুন কারণ এখনো বের হচ্ছে। তবে চল্লিশের অধিক পুরুষদেরই এ রোগ বেশি। কিছু কারণ নিচেও উল্লেখ করা হলো
পায়ুপথের পরিচ্ছন্নতা: মলত্যাগের পর পায়ুপথ পরিষ্কারের পদ্ধতি দেশ ভেদে ভিন্ন। পশ্চিমা দেশ বা আধুনিক বিশ্বে পরিচ্ছন্নতার কাজে টয়লেট পেপার ও ভেজা টিস্যু ব্যবহৃত হয় । অনেকে আবার মেডিকেটেড ওয়াইপ জাতীয় ভেজা টিস্যু ব্যবহার করেন।
এ পদ্ধতি যে পুরোপুরি স্বাস্থ্যসম্মত তাও নয়। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য থাকে তাদেরকে অধিক টিস্যু ব্যবহার করতে হয় এবং উপর্যুপরি ঘর্ষণে পায়খানার রাস্তা অনেক সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরবর্তীতে যা প্রদাহ ও চুলকানির কারণ হয়ে থাকে। যারা স্যানিটাইজারযুক্ত ভেজা টিস্যু ব্যবহার করেন, তাদের সমস্যা আরও বেশি, কারণ স্যানিটাইজারের কেমিক্যালে অনেকেরই এলার্জি বা প্রদাহ তৈরি হয় আবার অনেকের পরিচ্ছন্নতা কাজের পরেও মলদ্বারে কিছু পরিমাণ মল লেগে থাকে। মলের মধ্যে অনেক ধরনের এলার্জিকণা থাকে, যা সরাসরি অ্যালার্জির কারণ হয়ে থাকে। পক্ষান্তরে, মুসলিম বিশ্বে পরিষ্কারজনিত কারণে পায়ুপথের সমস্যা কম। মুসলিমরা যেহেতু ধর্মীয় কারণেই পানি দিয়ে মলদ্বার পরিষ্কার করেন, তাই তাদের মলদ্বারের ত্বক তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি সুরক্ষিত থাকে।
পায়ুপথের মাংসপেশীর দুর্বলতা: চল্লিশের পর অনেকেরই মলদ্বারের মাংসপিণ্ড কিছুটা দুর্বল হয়ে যায়। এতে পায়খানা তরল বা একটু নরম হলে নিজের অজান্তেই মলরস ছুঁয়ে মলদ্বার অপরিচ্ছন্ন হয়ে যায়। এটাও চুলকানির অন্যতম কারণ। পশ্চিমা বিশ্বে এ সমস্যা আমাদের তুলনায় বেশি।
ত্বক রোগ : ত্বকের কিছু সাধারণ রোগ যেমন- একজিমা সরিয়াসিস ইত্যাদি মলদ্বার এবং আশেপাশের ত্বকে প্রায়ই বিদ্যমান থাকে। এ রোগগুলোর কারণে মলদ্বারে চুলকানির সৃষ্টি হয়। পায়ুপথের একটি খুব সাধারণ সংক্রমণ হচ্ছে ক্যান্ডিডিয়াসিস ও অন্যান্য ফাঙ্গাস সংক্রমণ। ডায়াবেটিস ও অন্যান্য যেসব রোগে শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হয়, সেখানে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। অনেক সময় অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের পরও এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। এ রোগে চুলকানি অনেক সময় দীর্ঘস্থায়ী হয়।
কৃমি: পিন ওয়ার্ম বা সুতা কৃমিতে বিশ্বের জনগোষ্ঠীর এক উল্লেখযোগ্য অংশ। সুতা কৃমি সব সময় অক্সিজেনের জন্য মলদ্বারের আশেপাশে অবস্থান নেয়। এ কৃমি মলদ্বারের চুলকানির অন্যতম কারণ। কিছু কিছু যৌন রোগ, যেমন গনোরিয়া, হারপিস, ঐচঠ ইত্যাদি রোগের প্রাদুর্ভাব মলদ্বারে প্রায়ই দেখা যায়। কিছু কিছু মানুষের মধ্যে এ রোগ বেশি দেখা যায়। বিশেষ করে সমকামী ব্যক্তিদের মধ্যে এ রোগের প্রকোপ অনেক বেশি। সঠিক চিকিৎসা না হলে এতে চুলকানির আধিক্য লক্ষ্য করা যায়।
শারীরিক অন্যান্য রোগ: কিছু শারীরিক রোগের কারণে পায়ুপথে তীব্র চুলকানি হয়, যেমন পায়ুপথের ক্যান্সার, রক্তের ক্যান্সার, লিভার ক্যান্সার, দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগ ইত্যাদি।
খাবার-দাবার: অধিক মসলাযুক্ত খাবার, বাদাম ইত্যাদি
মানসিক রোগ: প্রথমত দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ এ রোগের জন্য ক্ষতিকর। আবার কিছু রোগ রয়েছে যেমন-ডার্মাটেলো ম্যানিয়া: এ রোগের রোগীরা সময়ে অসময়ে অযথাই ত্বকে চুলকিয়ে আলসারের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন। এ রোগ থেকে পরিত্রাণ পেতে শুধু ওষুধ নয়, প্রয়োজন জীবন আচরণের পরিবর্তন। মলত্যাগের পর স্বাস্থ্যসম্মতভাবে মলদ্বার পরিষ্কার করতে হবে। ঢিলাঢালা অন্তর্বাস পরতে হবে। সুতি কাপড়ই সবসময় যুৎসই। অর্শ, এনাল ফিসার, একজিমা, যৌন রোগ ইত্যাদি রোগের চিকিৎসা সময়মত নিতে হবে। নির্দিষ্ট সময় পর পর কৃমিনাশক ওষুধ খেতে হবে। পায়ুপথে ছত্রাকের সংক্রমণ বর্তমান যুগে অনেক বেড়ে গেছে এবং একইসঙ্গে ওষুধের রেজিস্ট্যান্টের কারণে চিকিৎসাও কঠিন হয়ে গেছে। ত্বক বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে এ রোগের পরিপূর্ণ চিকিৎসা নিতে হবে। শরীরের অন্য যেসব রোগে এ সমস্যার উদ্ভব হয়, তার যথাযথ চিকিৎসা নিতে হবে। যেসব ওষুধের কারণে এ সমস্যা সৃষ্টি হয়, তা পরিহার করতে হবে। পায়ুপথে হালকা স্টেরয়েড ও ভালো মানের ময়েশ্চারাইজার ভালো কাজ করে। চুলকানির তীব্রতা বেশি হলে এনাস্তেটিকযুক্ত মলম ব্যবহার করা যেতে পারে। এন্টিহিস্টামিন যুক্ত ট্যাবলেট সেবন ভালো কাজ দেয়। সামাজিক ভদ্রতা বিচারে পায়ুপথে চুলকানি আসলেই একটি বিব্রতকর সমস্যা। যেসব রোগী দীর্ঘ মেয়াদে এ রোগে ভুগছেন, তাদের অনেককেই হতাশা গ্রাস করে। এমনকি অনেকের ক্ষেত্রে চাকরি ছেড়ে দেয়ার কারণও এটি। এ রোগের চিকিৎসায় প্রয়োজন এ রোগ সম্বন্ধে সম্যক ধারণা লাভ করা এবং প্রয়োজনে উপযুক্ত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া।