ডিম বলে, প্রতিটি মুহূর্তই তো আমি সবার সঙ্গে থাকি। নাস্তায় ডিম সিদ্ধ, পোচ অথবা মামলেট থাকে। হঠাৎ অন্য খাবার ফুরিয়ে গেলে এই ডিমের কদর বাড়ে, তখন রান্না করে ভাতের সঙ্গে খাওয়া হয়। এছাড়া পুডিং, কেক, নানা রকম পিঠা তৈরিতে ডিম ব্যবহার করা হয়। তাই অনেকেই ডিম পছন্দ করেন। তবে ডিম নিয়ে সমাজে কিছু ভুল ধারণাও রয়েছে। তা একেবারেই ঠিক নয়।
পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, ডিমের প্রোটিন অত্যন্ত উচ্চমানের। এই প্রোটিন আমাদের মস্তিষ্ক আর পেশি গঠনে এবং রোজকার ক্ষয়ক্ষতি সামলাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়। ডিমে আছে এমন কিছু অ্যামিনো অ্যাসিড যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানসিক স্থিরতা বাড়ায়। ডিম নিয়ে দীর্ঘ গবেষণার পর জানা গেছে, একটা মাত্র কোষ থেকে একটা গোটা প্রাণী তৈরির জন্য যেসব উপাদান দরকার হয়, তার সবটাই আছে ডিমের মধ্যে।
এবার জেনে নেওয়া যাক ডিম নিয়ে ভুল ধারণা সম্পর্কে-
কোলেস্টেরলের ভয়ে ডিমের কুসুম বর্জন করেন অনেকে। তাঁদের জন্য সুখবর, আধুনিক গবেষণাগুলোর মতে, কুসুম খেতে পারেন নিশ্চিন্তে। কোলেস্টেরলের মাত্রার কোনও হেরেফেরই হবে না।
কারও মতে ডিম খেলে হজমের সমস্যা হয়, কেউ ভাবেন হাঁসের ডিমে বাড়ে বাত আর সর্দি। কিন্তু পুষ্টিবিজ্ঞানীরা একেবারেই এর উল্টো কথা বলছেন। তাঁদের মতে, বিশ্বের সবচেয়ে জোরদার প্রোটিনের স্বাভাবিক উৎস হল ডিম।
হার্টের অসুখ বা কোলেস্টেরলের ভয়ে অনেকেই ডিম খেতে ইতস্তত করেন। তাঁদেরও আশ্বস্ত করেছেন পুষ্টিবিশেষজ্ঞরা। যদিও ডিমে অনেকটা কোলেস্টেরল আছে, কিন্তু তা আমাদের কোনও ক্ষতি করে না। বরং হার্টের উপকারী হাই এইচডিএল কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়িয়ে হার্ট ভাল রাখতে সাহায্য করে। এক সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা গিয়েছে, হার্ট অ্যাটাক বা ব্রেন স্ট্রোকের জন্য কোলেস্টেরলের ভূমিকা যথেষ্ট কম।
কেউ কেউ ভাবেন, পোলট্রির ডিমের চেয়ে দেশি মুরগি বা হাঁসের ডিমের মধ্যেই পুষ্টিগুণ বেশি। আবার অনেকে মনে করেন, ডিম খেলে সর্দি-কাশি হয় বা বাতের ব্যথা অবধারিত। যাদের ডিমে অ্যালার্জি তাদের ধারণা, ডিম খেলেই ত্বকে র্যাশ হবে অথবা পেট খারাপ হবেই। তবে এসব মিথ অমূলক বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন পুষ্টিবিদরা। তারা বলেছেন, ডিম খেলে এরকম হবার সম্ভাবনা নেই। ডিম একাধিক খাওয়া যায় না এমন ধারণাতেও সায় নেই তাঁদের। বরং তাঁদের মতে, সুস্থ শরীরে দিনে চারটে পর্যন্ত ডিম খাওয়াই যায়।
ডিমের রঙ নিয়ে আছে আরেক অমূলক ধারণা। পুষ্টি বেশি আছে মনে করে লাল ডিমকে প্রাধান্য দেন অনেকে। পুষ্টিবিদরা বলছেন, লাল ডিম ও সাদা ডিমে প্রোটিন ও পুষ্টিগুণের কোন তফাৎ নেই।
ডিম সেদ্ধ, রান্না বা ভাজাভাজি করলে পুষ্টি কমে যায় মনে করে অনেকে কাঁচা ডিম খান। পুষ্টিবিদদের মতে, কাঁচা ডিম খাওয়া একেবারেই নিরাপদ নয়, জীবাণুর সংক্রমণে অসুস্থ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। বরং সেদ্ধ বা রান্না করা ডিমই ভাল, তবে বেশি কড়া ভাজায় ডিমের কিছু গুণ নষ্ট হয়ে যায়।
পুষ্টিবিদরা বলছেন, ডিম হল এই গ্রহের সবচেয়ে বেশি পুষ্টিতে ঠাসা একটি খাবার। তাই একে ‘সুপার ফুড’-এর শিরোপা দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।bs