রান্নাঘরে ব্যাকটেরিয়া ছড়াতে পারে যেসব জিনিস থেকে, একনজরে দেখেনিন

রান্নাঘরে লুকিয়ে থাকতে পারে অসংখ্য ব্যাকটেরিয়া। এসব জীবাণুর কারণে পেটব্যথা, বমি, পাতলা পায়খানা, জ্বরসহ নানা অসুখ হতে পারে। অতএব, রান্নাঘরের পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে একটু বেশি যত্নবান হতে হবে।
রান্নাঘরের এমন কয়েকটি জিনিস আছে, যা নিয়মিত ব্যবহার করা হয় অথচ সে ভাবে পরিচ্ছন্ন রাখা হয় না। আর সেই সব জিনিস থেকেই সালমোনেল্লা, ই.কোলাইয়ের মতো মারাত্মক সংক্রামক ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়ছে। দীর্ঘ দিন রান্নাঘরের সেই সব অপরিচ্ছন্ন জিনিসপত্র ব্যবহার করতে থাকলে তা থেকে আন্ত্রিক ও পেটের গোলযোগ দেখা দিতে পারে। এমনকি খাবারে বিষক্রিয়া হওয়ার আশঙ্কা থাকবে।

রান্নাঘরের কোন ৭ জিনিস জীবাণুমুক্ত রাখবেন?

১. রান্নাঘরের তোয়ালে: সব রান্নাঘরেই হাত মোছার জন্য তোয়ালে রাখা হয়। সেটি রোজ পরিষ্কার করেন কি? বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় পুরনো কাপড়, অপরিষ্কার কিছু ছিঁড়ে তাই দিয়েই হাত মোছার কাপড় বানানো হয়। দীর্ঘ সময় ব্যবহারের ফলে তা তেল চিটচিটে হয়ে যায়। আর সেই তেলচিটে নোংরা, রংচটা রান্নাঘর পরিষ্কারের কাপড় বা তোয়ালেই দিনের পর দিন ব্যবহার করা হয়। ভিজে কাপড় বা তোয়ালেয় সবচেয়ে বেশি সালমোনেল্লা, ই.কোলাইয়ের মতো সংক্রামক ব্যাকটেরিয়া জন্মায়। আর সেগুলো রান্না করা খাবারে ছড়িয়ে পড়লে বিষক্রিয়া হতে দেরি হবে না।

কীভাবে পরিষ্কার করবেন? এক মাস অন্তর রান্নাঘরের কাপড় বা তোয়ালে বদলানো উচিত। প্রতিদিন ব্যবহারের পরে সেগুলো গরম জলে সাবান দিয়ে ফুটিয়ে নিতে হবে। কাচার পর রোদে ভালো করে শুকিয় নেয়া দরকার।

২. ইলেকট্রনিক যন্ত্র: আধুনিক রান্নাঘরে মাইক্রোওয়েভ, ব্লেন্ডার কিংবা চিমনি অত্যন্ত জরুরি সব সামগ্রী। কিন্তু এই সামগ্রীগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করাও জরুরি। বিশেষ করে যে মিক্সারে রোজ মসলা পেষা হচ্ছে বা যে জুসারে ফলের রস বানানো হচ্ছে, তা ভালো করে না ধুলে যে খাবারের কণা লেগে থাকবে তাতেই সংক্রামক ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক জন্মাবে। পরে সেটি ফের ব্যবহার করার সময়ে সেই জীবাণু খাবারের মাধ্যমে পেটে গিয়ে সংক্রামক রোগ ছড়াবে।

কীভাবে পরিষ্কার করবেন? হালকা গরম জলে তরল সাবান মিশিয়ে তা দিয়ে ভালো করে রোজ মিক্সার ও জুসারের বিভিন্ন অংশ পরিষ্কার করতে হবে। তারপর শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে নিতে হবে।

৩. সবজি কাটার ছুরি, বটি: বঁটি, চপার বা ছুরি দিয়ে সবজি বা মাছ-মাংস কাটাকাটি করার সময়ে জীবাণু লেগে যেতে পারে। তাই এগুলোকে নিয়মিত জীবাণুমুক্ত রাখাই বাঞ্ছনীয়। মাছ-মাংস কাটার সময় প্রাণীদেহ থেকে ছড়িয়ে পড়া রোগজীবাণু লেগে যেতে পারে বটিতে। তা ছাড়া সবজি কাটার তার থেকেও জীবাণু সংক্রমণ হতে পারে।

কী ভাবে পরিষ্কার করবেন? শাকসবজি কাটার পরে ছুরি বা বটি ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। ধুয়ে নেয়ার পর সব সময়ে পরিষ্কার একটি কাপড় দিয়ে মুছে তারপর রাখুন।

৪. কাটার বোর্ড: ছুরি দিয়ে সবজি কাটার ক্ষেত্রে অনেকেই চপিং বোর্ড ব্যবহার করেন। এতে বেশ সুবিধা হয়। শুধু ফল কিংবা সবজি নয়, মাছ বা মাংস কাটতেও চপিং বোর্ডের ব্যবহার হয় অনেক বাড়িতে। কিন্তু যে বোর্ডে মাছ-মাংস কাটা হয়, সেটায় শাকসবজি কিংবা ফল কাটা একেবারেই উচিত নয়। কাঁচা মাছ কিংবা মাংস কাটার পরেও বোর্ডে লেগে থাকতে পারে জীবাণু। তাই ভালো করে ধুয়ে নেয়া দরকার।

কী ভাবে পরিষ্কার করবেন? সপ্তাহে অন্তত এক দিন বোর্ডটি ভালো করে তেল মাখিয়ে পরিষ্কার করুন। কাঠের বোর্ড ব্যবহার করলে তবেই এই প্রক্রিয়াটি কাজে লাগবে। তেল লাগালে জীবাণু সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না। একটি বড় গামলায় জল, তরল সাবান ও লবণ দিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। তারপর এই মিশ্রণে বোর্ডটি মিনিট দশেক ভিজিয়ে রাখুন। হয়ে গেলে স্পঞ্জ দিয়ে ভালো করে ঘষে ঘষে পরিষ্কার করে নিন।

৫. রান্নাঘরের সিঙ্ক: রান্নাঘরের সিঙ্কে সবচেয়ে বেশি ময়লা জমে। সবজি বা শাক-পাতা পরিষ্কার করা থেকে মাছ-মাংস ধোয়া, নোংরা বাসন মাজার কাজ সিঙ্কেই হয়। ফলে সেটি রোজ পরিষ্কার না করলে সেখান থেকেই সবচেয়ে বেশি রোগ-জীবাণু ছড়াতে পারে। কেবল বেসিনটি নয়, সিঙ্কের মুখ এবং তার চারপাশের জায়গাও পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

কীভাবে পরিষ্কার করবেন

সিঙ্কের মুখে বেকিং সোডা ঢালুন। সোডার সমপরিমাণ ভিনিগার মিশিয়ে দিন। ভিনিগার দেওয়ার পর সিঙ্ক থেকে বুদ্‌বুদ বেরোনো শুরু হবে। তখন সিঙ্কের মুখ বন্ধ করে দিন ঢাকনা দিয়ে। ধীরে ধীরে পরিষ্কার করে হয়ে যাবে। সিঙ্কের মুখে জমে থাকা ময়লা পরিষ্কার করতে গরম জলের বিকল্প নেই। তবে গরম জলের সঙ্গে যদি এক চিমটি লবণ মিশিয়ে নেয়া যায় তা হলে আরও বেশি কার্যকর হবে। স্টিলের সিঙ্ক হলে স্ক্রাবারে ভিনিগার নিয়ে সিঙ্ক ভালো করে ঘষে নিন। ওই অবস্থায় রেখে দিন ঘণ্টাখানেক। তারপর বাসন মাজার তরল সাবান দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে।

Related Posts

© 2024 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy