আপনি কি কখনও লক্ষ্য করেছেন যে আপনার শরীর কীভাবে মানসিক চাপের প্রতিক্রিয়া জানায়? এটি বিভিন্ন উপায়ে লক্ষণ প্রকাশ করতে পারে। যার মধ্যে শারীরিক লক্ষণ যেমন মাথাব্যথা, ক্লান্তি, পেশীতে টান এবং হজমের সমস্যা বেশি দেখা যায়। মানসিক চাপ দীর্ঘস্থায়ী হয়ে গেলে শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই অতিরিক্ত মানসিক চাপের লক্ষণ বুঝে তা নিয়ন্ত্রণ ও প্রশমিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চলুন জেনে নেওয়া যাক মানসিক চাপের শারীরিক লক্ষণ-
১. মাথাব্যথা
মানসিক চাপের সবচেয়ে সাধারণ শারীরিক লক্ষণগুলোর মধ্যে একটি হলো মাথাব্যথা। ২০১৫ সালে এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণে প্রতি মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি দিন মাথাব্যথা ছিল। স্ট্রেস-সংক্রান্ত মাথাব্যথা হালকা টেনশনের মাথাব্যথা থেকে তীব্র মাইগ্রেনে পরিবর্তিত হতে পারে। ঘাড়, কাঁধ এবং মাথার ত্বকে পেশীর চাপ প্রায়শই এই মাথাব্যথার কারণ। অ্যাড্রেনালিন এবং কর্টিসলের মতো স্ট্রেস হরমোন নিঃসরণ এই ধরনের মাথাব্যথা বাড়িয়ে দেয়।
২. ক্লান্তি
দীর্ঘস্থায়ী স্ট্রেস ক্রমাগত ক্লান্তি সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে আপনি সারারাত ঘুমের পরেও ক্লান্ত বোধ করেন। স্ট্রেস ঘুমের গুণমানকে প্রভাবিত করে, যার ফলে অনিদ্রা বা অস্থির ঘুমের মতো সমস্যা হয়। মানসিক চাপের কারণে শক্তির রিজার্ভ কমতে থাকে, যার ফলে আপনি ক্লান্ত বোধ করেন এবং দৈনন্দিন কাজগুলো করতেও হিমশিম খেতে হয়। BMC সাইকিয়াট্রির সাত হাজারজনের ওপর করা এক সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, ক্লান্তি এবং কাজের সঙ্গে মানসিক চাপের ‘উল্লেখযোগ্য সম্পর্ক’ রয়েছে।
৩. হজমের সমস্যা
শরীরে চাপের মাত্রা বেড়ে গেলে হজমের সমস্যাও হতে পারে। এই সমস্যার লক্ষণগুলোর মধ্যে পেটব্যথা, পেট ফাঁপা, কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া এবং ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (IBS) থাকতে পারে। স্ট্রেস অন্ত্রের মাইক্রোবায়োটা পরিবর্তন করে এবং হজমকে প্রভাবিত করতে পারে, যার ফলে অস্বস্তি এবং ব্যথা হয়। ২০১৭ সালের এক গবেষণা স্ট্রেস এবং আইবিএস লক্ষণের মধ্যে সরাসরি যোগসূত্রের ওপরও জোর দেয়। গবেষণায় উল্লেখ করা হয় যে, স্ট্রেস হজম সংক্রান্ত সমস্যার সূচনা এবং বৃদ্ধিতে একটি প্রধান ভূমিকা পালন করে।
৪. বুকে ব্যথা এবং দ্রুত হার্টবিট
স্ট্রেস বুকে ব্যথা এবং দ্রুত হৃদস্পন্দনের কারণ হতে পারে, যা অনেকটা হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণের মতোই। এটি স্ট্রেস হরমোন নিঃসরণের কারণে হয় যা হৃদস্পন্দন এবং রক্তচাপ বাড়ায়। যদিও এই লক্ষণ সাধারণত ক্ষতিকারক নয়, তবে এটি ভীতিকর হতে পারে এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের কাছে যেতে হতে পারে।
৫. দুর্বল ইমিউন সিস্টেম
আপনি কি জানেন যে দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে, অবশেষে সংক্রমণ এবং অসুস্থতার ঝুঁকি তৈরি করে? কর্টিসলের মতো স্ট্রেস হরমোন ইমিউন প্রতিক্রিয়ার কার্যকারিতাকে দমন করে, ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য শরীরের ক্ষমতা হ্রাস করে।