চিনি খাওয়া ভালো নাকি খারাপ জানেন কি? না জানলে জেনেনিন

অনেকেই চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার খেতে ভালোবাসেন। তবে বিশেষজ্ঞরা সব সময়ই বলেন, অতিরিক্ত চিনি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়।

চিনি ক্ষুদ্র শিকলবিশিষ্ট দ্রবণীয় কার্বোহাইড্রেট। এর মধ্যে কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন থাকে। প্রাকৃতিক চিনি (আখ, বিভিন্ন ধরনের ফল) সুক্রোজ চিনি। এটা শরীরে গিয়ে সমপরিমাণ ফ্রুকটোজ ও গ্লুকোজে পরিণত হয়।

সাধারণত মানুষ স্বাভাবিক চিনি খেলে ভালো। তবে চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার বেশি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য সমস্যা তৈরি করে। যাদের পারিবারিকভাবে প্রবণতা রয়েছে ডায়াবেটিস হওয়ার, তাদের চিনি কম খাওয়া ভালো। এবং মাঝেমধ্যে শরীরের শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করা প্রয়োজন। এ ছাড়া চিনি ওজন বাড়িয়ে দেয়। যাদের ওজন বেশি, তারা চিনি খাওয়া এড়িয়ে যাবে। ওজনাধিক্য লোকদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপের প্রবণতা বেশি থাকে।

সাধারণত একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ প্রতিদিন তিন থেকে পাঁচ চামচ চিনি খেতে পারে।

চিনির অপকারিতা আমরা কমবেশি সকলেই জানি। চিনি খেলে দাঁত নষ্ট হয়, বাড়তি ক্যালোরির কারণে ওজন বাড়ে, ব্লাড প্রেসার বাড়ে ইত্যাদি তথ্য আমাদের অনেকেরই জানা। কিন্তু এসব কিছু বাইরেও চিনির যে মারাত্মক কিছু অপকারিতা রয়েছে, যেগুলো আমরা জানিনা। যেমন, চিনি ক্ষুধা বাড়ায়, দেহে পুষ্টির ভারসাম্যহীনতা তৈরি করে ইত্যাদি। জেনে নিন চিনির এমনই মারাত্মক কিছু অপকারিতা যা আপনি আগে জানতেন না!

চিনি ক্ষুধা বাড়ায়

বেশি চিনি বা মিষ্টি খাবার খেলে কী হয় জানেন? ক্ষুধা সহজে মেটে না। কারণ অতিরিক্ত চিনি লেপটিন প্রতিরোধক হিসাবে কাজ করে আর এই লেপটিনই আমাদের ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে। তাই অধিক চিনি খেলে ক্ষুধা বাড়তেই থাকে।

ইনসুলিন হরমোনের কার্যকারিতা নষ্ট করে

খাবারকে দেহের ব্যবহারযোগ্য এনার্জিতে রূপান্তর করতে সহায়তা করে ইনসুলিন হরমোন। অতিরিক্ত চিনি খাওয়া দেহে এই হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে। দেহে ইনসুলিনের মাত্রা কমে বা বেড়ে গেলে মারাত্মক সব শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।

লিভারের সর্বনাশ করে

মাত্রাতিরিক্ত চিনি খাওয়া অভ্যাস লিভারকে অতিরিক্ত কাজ করতে বাধ্য করে। বলাই বাহুল্য যে অতিরিক্ত কাজের ফলে লিভারের ফাংশনে জটিলতা তৈরি হয়। এতে লিভারের কার্যক্ষমতা নষ্ট পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে।

কিডনির রোগ বাড়ায়

অতিরিক্ত চিনি, বিশেষ করে কোমল পানীয়ের সাথে গ্রহণ করা বাড়তি চিনি কিডনির রোগের জন্য দায়ী।

তৈরি করে মিষ্টি আসক্তি ও পুষ্টির ভারসাম্যহীনতা

অতিরিক্ত চিনির খাওয়ার প্রবণতা থেকে চিনির প্রতি আসক্তি জন্মে যায়। আর এই আসক্তি অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার গ্রহনে বাঁধা প্রধান করে। বাড়তি চিনি দেহের পুষ্টি আহরণেও বাঁধা প্রদান করে।

বাতের ব্যথা বাড়ায়

চিনিতে আছে ইউরিক অ্যাসিড, যা যে কোন ধরণের বাতের ব্যথার সমস্যা বৃদ্ধি করতে ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে গেটে বাতের জন্য চিনি এক সর্বনাশের নাম।

প্যানক্রিয়েটিক ক্যান্সারের জন্য দায়ী

মাত্রাতিরিক্ত চিনি গ্রহণ করলে তার ফলে প্যানক্রিয়েটিক ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। সূত্র- বিজনেস ইনসাইডার

চিনির উপকারিতা

চিনির রয়েছে অনেক উপকারিতা। চিনির বিভিন্ন উপকারিতা হলো :

দ্রুত শক্তি দেয়

যখন শরীরে চিনির ঘাটতি হয়, তখন শক্তি কমে যায়। আর চিনি খেলে শরীর তাৎক্ষণিক শক্তি পায়।

ত্বকের টোন ঠিক রাখে

এর মধ্যে রয়েছে গ্লাইকোলিক এসিড, যা ত্বকের টোনকে ঠিক রাখে। ত্বকের তৈলাক্ততার ভারসাম্য রক্ষা করে, দাগ দূর করতে সাহায্য করে।

নিম্ন রক্তচাপ

চিনি নিম্ন রক্তচাপকে স্বাভাবিক হতে সাহায্য করে। নিম্ন রক্তচাপ হলে চিনির শরবত বা চিনি খাওয়া যেতে পারে।

কাটাছেঁড়া

চিনির দানা যেকোনো কাটাছেঁড়া ক্ষেত্রে প্রলেপ হিসেবে লাগালে অ্যান্টিবায়োটিকের মতো কাজ করে।

বিষণ্ণতা দূর করে

চিনি বিষণ্ণতা দূর করতেও সাহায্য করে।

অপকারিতা

চিনি খাওয়া শরীরের জন্য ভালো হলেও অতিরিক্ত চিনি গ্রহণ স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। চিনির বিভিন্ন অপকারিতা হলো:

লিভার

চিনির গ্লুকোজ শরীর শোষণ করে নেয়। তবে পরিশোধিত চিনিতে ফ্রুকটোজ বেশি থাকে। ফ্রুকটোজকে একমাত্র পরিশোধিত করতে পারে লিভার। লিভারে গিয়ে এই ফুকটোজ চর্বিতে পরিণত হয়। ফলে লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

বাজে কোলেস্টেরল বাড়ায়

বেশি চিনি খেলে শরীরে বাজে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে যায়। আর ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমে যায়।

চিনি ওজন বাড়িয়ে দেয় ও ডায়াবেটিস

চিনি ওজন বাড়িয়ে দেয়। তাই যাদের ওজন বেশি, তাদের চিনি খাওয়া এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। চিনি বেশি খেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

কিডনির রোগ

উচ্চমাত্রায় চিনি খেলে কিডনির নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষজ্ঞরা জানান, বেশি পরিমাণ চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়া কিডনির জন্য ক্ষতিকর। বেশি চিনি খাওয়া কয়েক বছর পর কিডনিকে দুর্বল করে ফেলে এবং এর কার্যক্ষমতাকে নষ্ট করতে পারে।

ক্ষুধা কমে না

পরিশোধিত চিনি থেকে শরীর প্রচুর ক্যালরি পায়। তবে এতে ক্ষুধা মেটে না। কারণ, ক্ষুধা নিবৃত করার হরমোন গ্রেলিন চিনির ফ্রুকটোজে কাজ করে না।

উচ্চ রক্তচাপ

বেশি চিনি খাওয়া দেহের রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ৭৩ অথবা ৭৪ গ্রাম বা তার বেশি পরিমাণে চিনি খেলে দেহের রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।bs

Related Posts

© 2024 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy