কিডনি রোগ হলো নীরব ঘাতক। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অনেকটা নীরবে একেবারে শেষ পর্যায়ে এসে কিডনি রোগ ধরা পড়ে।তাই,সাবধান থাকার কোন বিকল্প নেই। কিছু বিষয় এবং লক্ষণ কিন্তু আগে থেকেই প্রকাশ পায়,তবে গুরুত্ব না দেবার কারণে অবস্থা জটিল হয়ে যায়। সুতরাং,নীচের লক্ষণগুলো থেকে দেখে নিতে পারেন এমন কোন অস্বাভাবিকতায় আপনি ভুগছেন না তো? তবে,লক্ষণ গুলো জানার আগে জেনে নিন কিডিনি রোগের রিস্ক ফ্যাক্টর সমূহ-
যে যে কারণে একজন মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত হতে পারেন সেগুলো হল-
– উচ্চ রক্তচাপ
– দীর্ঘদিন পেইন কিলার জাতীয় মেডিসিন গ্রহণ করা
– অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস
– হৃদরোগ
– স্থুলতা
– কিডনি রোগের পারিবারিক ইতিহাস
– ধূমপান বা মদ্যপানের অভ্যাস
– অলস জীবন যাপন
– পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ না করা
– অতিরিক্ত কেমিক্যাল এক্সপোসার
– একুইট কিডনি ইনজুরির ইতিহাস থাকলে
কিডিনি রোগের আগাম লক্ষণ সমূহ –
নিয়মিত খুব ক্লান্ত এবং যেকোন কাজে মনোযোগে অসুবিধা
সুস্থ কিডনি ‘এরিথ্রোপোয়েটিন’ নামক একটি হরমোন তৈরি করে যা আমাদের দেহকে অক্সিজেন বহনকারী লোহিত রক্ত কনিকা তৈরি করতে বলে। যখন,কিডনির কার্যকারিতা কমে যায় তখন এরিথ্রোপোয়েটিনের পরিমাণ ও কমে যায়। ফলে, লোহিত রক্ত কনিকার উৎপাদনকমে যায়। এই অবস্থাকে এনিমিয়া বলে।ফলে,ক্লান্ত হওয়া এবং মনোযোগের অসুবিধা হওয়ারমত সমস্যা ঘটে।
ঠান্ডা অনুভুতি
গরমের মধ্যে সবাই যখন ঘামছে আপনার অবস্থা ঠিক উলটো হতে পারে।আপনার,শীতে যায় যায় অবস্থা হতে পারে।
এর কারণ হল কিডনির কার্যকারীতা কমে গেলে লোহিত রক্ত কনিকা তৈরি হতে পারেনা।ফলে,রক্তশূন্যতার কারণে এমন হয়।
শ্বাসকষ্ট
শ্বাসকষ্ট,দুই ভাবে কিডনির সমস্যার সাথে জড়িত থাকতে পারে।প্রথমত,শরীরের অতিরিক্ত তরল ‘লানে’ বিল্ড আপ হতে পারে এবং দ্বিতীয়ত অক্সিজেন বহনকারী লোহিত রক্ত কনিকার অভাব। শরীরে অক্সিজেনের সরবরাহ কম হলে এমন হতে পারে। সুতরাং,জীবনের যেকোন সময় হুট করে শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে কোন ভাবেই অবহেলা করার সুযোগ নেই।
অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
কিডনির কার্যকারীতার সাথে ‘এনিমিয়ার’ সম্পর্ক রয়েছে। মানে আপনার মস্তিষ্ক পর্যাপ্ত অক্সিজেন পাচ্ছেনা। ফলাফল,হতে পারে মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া। আপনি,যদি এনিমিয়াতে আক্রান্ত হন তবে ঠিক কি কারণে এনিমিয়াতে আক্রান্ত হয়েছেন সেটা বের করার চেষ্টা করুন।
শরীরে চুলকানি
সুস্থ কিডনি আমাদের দেহের সমস্ত বর্জ্য পদার্থ বের করে দেয়।কিন্তু কিডনি সঠিক ভাবে কাজ না করতে পারলে এই বর্জ্য পদার্থ রক্তে থেকে যায়।ফলাফল,প্রচণ্ড চুলকানির সৃষ্টি।তাই,চুলকানি হলে নিজে নিজে ডাক্তারি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
মুখ হাত পা এবং গোড়ালি ফুলে যাওয়া
কিডনি যখন সঠিক ভাবে কাজ করতে পারেনা তখন দেহ থেকে অতিরিক্ত তরল বের হতে পারেনা। এই অতরিক্ত তরল আমাদের দেহের বিভিন্ন স্থানে বিল্ড আপ হয়।ফলে,চোখের নীচে হাত বা পায়ের পাতায় জল জমার ফলে ফুলে যায় বা ইডিমা হয়।
ঘুমের সমস্যা
সাধারণ অবস্থায় সুস্থ কিডনি ইউরিনের মাধ্যমে অতিরিক্ত তরল এবং টক্সিক উপাদান সমূহ শরীর থেকে বের করে দেয়। কিন্তু কিডনির সমস্যা থাকলে এই টক্সিক উপাদান সমূহ রক্তে থেকে যায়। ফলে ঘুমের সমস্যা হয়। তবে,ওবিসিটি এবং ক্রনিক ডিজিসের ক্ষেত্রে ও ঘুমের সমস্যা থাকতে পারে। তবে,কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে স্লিপ অ্যাপনিয়া খুব বেশি দেখা যায়।
অতিরিক্ত ইউরিনেশনর চাপ এবং বুদ বুদ যুক্ত ইউরিন
যখন কিডনির ফিল্টারগুলো ড্যামেজ হয়ে যায় তখন বার বার মূত্র ত্যাগের চাপ অনুভূত হয় যা কিডনি রোগের কারণ হিসাবে বিবেচিত হতে পারে।এছাড়া,যদি ইউরিন ত্যাগের সময় বুদবুদ যুক্ত ইউরিন দেখা যায় অর্থাৎ ডিম ফেটানোর পর ডিমে যেমন ফেনা ফেনা একটা ভাব থাকে তেমন,তবে সেটিও আমলে নেয়া উচিত।মূল,কথা হল আপনার ইউরিন রুটিন এবং কালারে যেকোন ধরনের রুটিনে পরিবর্তন হলে বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া উচিত।
নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ এবং ক্ষুধা কমে যাওয়া
কিডনির কার্যকারিতা কমে গেলে ক্ষুধা কমে যাওয়া এবং রক্তে বর্জ্য পদার্থ থাকার কারণে কিডনি রোগীদের নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ হওয়া খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। বিশেষ করে,মেটালিক একটা গন্ধ থাকে।
ব্লাড প্রেসার বেড়ে যাওয়া
কিডনির সমস্যা হলে রক্তচাপ বেড়ে যায়। আবার,বলা যায় যাদের রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকে তাদের কিডনির জটিলতা হবার সম্ভাবনা বেশি। পাশাপাশি,কিডনি রোগ হলে ব্যাক পেইন ও হতে পারে। সুতরাং,নিজের শরীরের যেকোন পরিবর্তন ভাল ভাবে খেয়াল করা উচিত। বয়স বাড়ার সাথে সাথে বা কোন ধরণের অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ মত নিয়মিত লিপিড প্রোফাইল,সিরাম ক্রিয়েটিনিন,অ্যালবুমিন বা জরুরি সব মেডিকেল টেস্ট করা উচিত।
মনে রাখবেন,কিডনি রোগের চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল। সেটা ডায়ালাইসিস করা হোক কিংবা কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করা হোক।bs