‘শিশু একদম খেতে চায় না, তার খিদে বলতে কিছু নেই’, অধিকাংশ মায়ের এ অভিযোগ। শিশু খেতে চায় না বা শিশুর অরুচির ধারণা সাধারণভাবে দুটো মূল বিষয়ের ওপরে নির্ভরশীল।
১. মা বা শিশুর পরিচর্যাকারী যেভাবে শিশুকে খাওয়াচ্ছেন তা তার প্রয়োজন, পছন্দ-অপছন্দ বা তার শারীরিক বিকাশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে করা হচ্ছে না
২. হয়তো শিশু উদরাময় বা অন্য কোনো অসুখে ভুগছে, যার কারণে তার খিদে লোপ পেয়েছে এবং তা শোধরানো হলে শিশু খেতে চাইবে।
খিদে নেই কেন
শিশুরা যখন কোনো সংক্রমণে আক্রান্ত হয়, তখন স্বাভাবিকভাবেই তার খিদে কমে যায় বা ক্ষুধামান্দ্য দেখা দেয়। এটা বড়দেরও হয়, তবে ছোটদের প্রবলতর হয়ে থাকে। এ ছাড়া শিশু খেতে না চাওয়ার প্রধান কারণ হলো জোর করে খাবার খাওয়ানো। কিছু খারাপ অভ্যাস শিশুদের খাবারের প্রতি অনাগ্রহী করে তোলে।
● শিশুকে যদি চামচে করে খাওয়ানো হয়, আর প্রায়ই তা জোর করে মুখে ঢোকানো হয়।
● খাবার শেষ করার পরও খাওয়ার জন্য অনুরোধ-আদেশ-নির্দেশ করা হয়।
● না খাওয়ার জন্য শাস্তি প্রদান করা হয়
● যখন-তখন যদি চাহিদামতো চিপস, জুস, চকলেট খেতে দিয়ে বায়না মেটানো হয়।
● প্রধান খাবারের মাঝখানে যখন-তখন স্ন্যাক্স খাওয়ানো হয়।
● খাওয়ানোর সময় নানাভাবে তার মনভোলানোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়, যাতে সে অন্য কিছুতে মজে থাকার সময় বেশ তৎপরতার সঙ্গে কয়েক চামচ খাদ্য গেলানো যায়।
শিশু খেতে না চাইলে কী করবেন
● একই ধরনের খাবার শিশু প্রতি বেলা খেতে চায় না, খাবার উপাদানে পরিবর্তন আনা উচিত।
● প্রথম দিকে খাবারগুলো একটু চটকিয়ে দিন, পরে ঘন ও দানাদার খাবার পরিবেশন করতে হবে। এতে খাবারের ভিন্ন ভিন্ন স্বাদ তার স্বাদগ্রন্থিতে আবেদন সৃষ্টি করে।
● শিশু ক্ষুধার্ত হলেই তবে খেতে দিতে হবে। খিদে না পেলে জোর করে খাওয়ানো দরকার নেই।
● কখনো খেতে জোরাজুরি করতে নেই, বরং ধৈর্য ধরে খাওয়াতে হবে।
● শিশু যেসব পুষ্টিকর খাবার পছন্দ করছে, তাই খেতে দেওয়া ভালো।
● শিশু বয়সের পাকস্থলীর আকার ছোট, তাই এই ছোট পাকস্থলী যদি যখন-তখন জল, জুস, চিপস, চকলেট দিয়ে ভর্তি থাকে, তবে সে আর অন্য খাবার খেতে পারবে না।
● প্রতিবার শিশু মুখে গ্রাস নেওয়ার সময় তার প্রশংসা করুন। তার চোখে চোখ রেখে উৎসাহ জোগান। পুরস্কারের দরকার নেই।
● সময় দিয়ে, শিশুর পছন্দ–অপছন্দের তালিকা জেনে শিশুকে খাবার খাওয়াতে হয়
● শিশু যদি আন্ত্রিক অসুখে ভোগে, তবে তার খিদে কমে যায়। সে জন্য শিশুর খাবার পরিবেশন, খাবার তৈরি, খাবার সংরক্ষণ প্রতিটি পদক্ষেপে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা বা হাইজিন বজায় রাখতে হবে। শিশুর খাবার তৈরি ও খাবার পরিবেশনের আগে সাবান–জল দিয়ে হাত ধুয়ে নেওয়া জরুরি। কৃমি সংক্রমণ হলে তার চিকিৎসা করুন।
● শিশু যদি নিজে নিজেই খেতে চায়, তবে সেভাবে তাকে নিজের হাতে খাওয়ার জন্য সুযোগ দিতে হবে। প্রথম দিকে নষ্ট করবে, তবু নিজেকে খেতে দিন।
●খাওয়ানোর সময়ে শিশুকে টিভি দেখা, মোবাইলে কিছু দেখা বা খেলনা নিয়ে খেলতে দেওয়া উচিত নয়।bs