চাষ করতে প্রচুর জলের প্রয়োজন হয় এরকম খাবার বাদ দেওয়া দরকার, এর মধ্যে রয়েছে অ্যাভাকাডো।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘ক্লাইমেটোলজিস্ট’ ডোনা কলিন্সন তার খাদ্যাভ্যাস বদলে ফেলেছেন এক প্রামান্যচিত্র দেখে। তিনি একাধারে একজন স্থপতি এবং অনলাইন অন্দরসজ্জার সরঞ্জাম বিক্রির বিপণি-বিতান ‘ডোমো’য়ের কর্নধার।
টেলিগ্রাফ ডটকো ডটইউকে’তে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে তিনি বলেন, “আধুনিক কৃষি ব্যবস্থা বিভিন্ন দিক থেকে পরিবেশের জন্য যে মারাত্মক হুমকি বয়ে আনছে তা অনেকেরই নজরের অন্তরালে। একসময় যে অঞ্চলগুলোতে বিভিন্ন ধরনের গাছগাছালি থাকার সুবাদে উদ্ভিদ ও প্রাণী বৈচিত্র্য ছিল, সেখানে আজ সবুজ আছে ঠিকই কিন্তু বৈচিত্র্য নেই।”
পরবর্তী ছয় বছর তিনি মাংস খাওয়া বাদ দিয়েছেন পুরোপুরি। প্রাণিজ উৎস থেকে আসা খাবারগুলো বিকল্প উদ্ভিজ্জ বেছে নিয়েছেন। বাজার করার ক্ষেত্রে চেষ্টা করেছেন যথাসম্ভব ‘অর্গানিক’ খাবার কিনতে।
উদ্দেশ্য ছিল জমিতে কীটনাশকের ব্যবহার কমাতে অবদান রাখা। নিজের এই উদ্যোগ তাকে মানসিকভাবেও প্রশান্তি যুগিয়েছে।
খাদ্যাভ্যাস শুধু মানুষের সুস্বাস্থ রক্ষার মাঝেই সীমাবদ্ধ নয়, নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস পৃথিবীকেও বাঁচাতে পারে। আর পরিবেশবান্ধব খাদ্যাভ্যাস সম্প্রতি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাওয়ার সুবাদে স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ থেকে শুরু ‘ফাস্ট ফুড চেইন’গুলো এদিকে ঝুঁকছে।
এখন প্রশ্ন হলো পরিবেশবান্ধব খাদ্যাভ্যাস কী? আর তার সঙ্গে অ্যাভাকাডোর কী সম্পর্ক?
লাইফসাম নিউট্রিশন অ্যাপ’য়ের ডা. আলোনা পলডা পরিবশবান্ধব খাদ্যাভাস সম্পর্কে বলেন, “এই নামটি ‘ভিগান’ আর ‘ভেজিটেরিয়ান’য়ের সমার্থক নয় ঠিক। তবে এগুলোও পরিবেশবান্ধব খাদ্যাভ্যাসের অন্তুর্ভুক্ত।”
“একটি খাবার উৎপাদন করতে গিয়ে যে পরিমাণ কার্বন পরিবেশে ছড়ায় সেটার মাত্রা কমানোর কথা মাথায় রেখে যে খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা হয় তাকেই পরিবেশবান্ধব খাদ্যাভ্যাস বলা হয়। কার্বন ছড়ানোর হিসাব করার সময় ওই খাবার প্রক্রিয়াজাতকরণ, পরিবহন এবং বর্জ্য সবকিছুর হিসাব করতে হবে।”
তিনি আর বলেন, “পৃথিবীকে পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচাতে তাই আপনাকে বেছে নিতে হবে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত, মৌসুমভিত্তিক, অপ্রক্রিয়াজাত ও উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে আসা খাবার। বাদ পড়বে মাংস, দুগ্ধাজাত খাবার এবং চাষ করতে প্রচুর জলে খরচ করতে হয় এমন একটি ফল, অ্যাভাকাডো।”
‘সিটি ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডন’য়ের ‘ফুড পলিসি’ বিভাগের অবৈতনিক অধ্যাপক টিমোথি ল্যাঙ বলেন, “মানব সৃষ্ট ‘গ্রিনহাউস গ্যাস’য়ের প্রায় ৩৪ শতাংশই কোনো না কোনোভাবে খাবার তৈরির সঙ্গে সম্পর্কিত। এই বিষয় নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা সমালোচনা হয় না, যা একটা আশ্চর্যজনক বিষয়।”
তিনি আরও বলেন, “গ্লাসগো’তে অনুষ্ঠিত ‘গ্লোবাল ক্লাইমেট সামিট’য়ে, যা ‘সিওপি২৬’ নামেও পরিচিত, এই বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়নি বললেই চলে। সেখানে বলা হয়নি বন উজাড় এবং কাঠকয়লার ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ নয়, তবে বন উজাড় করার নেপথ্যের কারণটা কিন্তু অনেকাংশেই মানুষের খাদ্যশষ্যের চাহিদা মেটানো। আর পরিবেশ ও পৃথিবীকে বাঁচাতে ২০৫০ সালের মধ্যে ‘নেট জিরো’ লক্ষ্য পূরণ করার ক্ষেত্রে সমস্যাটা এখানেই। তাই এই সমস্যার সমাধান করতে হবে।”
একটি খাদ্যশষ্য কতটা পরিবেশবান্ধব তা বোঝা যায় কয়েকটি দিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে।
যেমন- তা উৎপাদন ও সংরক্ষণ করতে কতটুকু শক্তি খরচ হয় অথবা শষ্য ফলাতে কী পরিমাণ জল ব্যবহার হয়। মাংসের ক্ষেত্রে খাবারের উপযোগী হিসেবে পরিষ্কার করা, কারখানা বা খামার গণনা করতে হয়।bs