এ কথা তো ভুললে চলবে না যে ভারতবর্ষেই জন্ম নিয়েছিল শর্করা, অর্থাৎ চিনি। দুধ কাটিয়ে ছানা তৈরি করে যে উত্তম মানের মিষ্টদ্রব্য প্রস্তুত করা সম্ভব, তা প্রমাণ করেছিল বাঙালিরাই। বঙ্গদেশের উত্তরভাগের যে অংশটিকে ‘গৌড়’ বলা হত, সেই মালদা-মুর্শিদাবাদের গুড় ছিল আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন। আর আমাদের খেজুর গুড়ের স্বাদবিচারে বসলে তো আলোচনা শেষই হবে না!
তাই বাঙালিদের যে মিষ্টির প্রতি একটু বিশেষ পক্ষপাত থাকবে, তাতে আশ্চর্য হওয়ার কী আছে? পাড়ার মোড়ে মোড়ে মিষ্টির দোকান, সেখানে দিল্লির সোহন হালুয়া থেকে দক্ষিণের মাইসোর পাক পর্যন্ত সব মেলে – সঙ্গে দোসর লোভনীয় কেক-পেস্ট্রি। তাই মিষ্টি থেকে দূরে থাকাটা কঠিনই শুধু নয়, যাঁরা তা উপভোগ করেন, তাঁদের কাছে দারুণ কষ্টকরও বটে। তার চেয়েও বড়ো কথা হচ্ছে, এক-আধবার না হয় মিষ্টি দেখে উল্টোমুখে পাড়ি দিলেন, রোজ তার থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকবেন কীভাবে? পাকাপাকি একটা রাস্তা তো খুঁজে বের করা দরকার, নাকি?
প্রথমত যেটা করতে হবে, তা হচ্ছে মিষ্টি খাওয়ার জন্য সপ্তাহে একটি বা দু’টি নির্দিষ্ট দিন ঠিক করে রাখুন। সেই দিনগুলোয় সকাল থেকে নিয়ম করে প্রতিটি মিল খান, বেশি করে প্রোটিন খেতে হবে। কার্পণ্য করবেন না জল খাওয়ায়। পেট যদি ভরা থাকে, তা হলে ইচ্ছের বাইরে গিয়ে বেশি মিষ্টি আপনি চাইলেও খেতে পারবেন না। কতগুলো মিষ্টি খাচ্ছেন, তার চেয়েও বেশি জরুরি হচ্ছে কী মানের মিষ্টি খাচ্ছেন। খুব ভালো কোয়ালিটির জিনিস বাছুন, তাতে পকেটের উপর বেশি চাপ পড়লে সংখ্যাটা কমিয়ে দিন, কিন্তু আপোস করবেন না। আর ইচ্ছে হলেই মিষ্টি খাওয়া যাবে জানলে আপনার মনও নিয়ন্ত্রণে থাকবে নিশ্চিতভাবেই!
মিষ্টির মধ্যে কিন্তু কেক, কুকিজ়, বিস্কিট সব পড়বে। সারা সপ্তাহে সেগুলির উপরেও আপনাকে রেশনিং চালু করতে হবে। রান্নায় চিনি দেওয়া চলবে না, দূরে থাকতে হবে চাটনি বা কোল্ড ড্রিঙ্ক থেকেও। তবে মিষ্টি ফলে কিন্তু কোনও বাধা নেই। পেঁপে, আঙুর, বেদানা, আম, লিচু, সবেদা সব কিছুই চলতে পারে। খাওয়ার শেষে ঠান্ডা ফল আর জল ঝরানো বাড়িতে পাতা দই দিয়ে চমৎকার ডেজ়ার্ট তৈরি করে নিন।
খেতে পারেন মরশুমি গাজর, কড়াইশুঁটি, বিটের মতো সবজিও – তার মিষ্ট স্বাদও মন ভরিয়ে দেবে। এমন মিষ্টি খুঁজে বের করুন যা মোটেই উপর স্বাস্থ্যকর। যেমন মিষ্টি দই বা রসগোল্লা অথবা সন্দেশের মূল উপাদান কী? ছানা আর চিনি, তাই তো? উল্টোদিকে জিলিপি বা লাড্ডুতে বেসন থাকলেও তা প্রথমে তেলে ভাজা হয়, তার পর চিনির রসে ডোবানো হয়। অনেক সময় সস্তার রংও ব্যবহার হয়। কম দামি পেস্ট্রিতে মাখনের পরিবর্তনে মার্জারিন ও নিম্নমানের ক্রিম ব্যবহার হয় – তাই বুঝে-শুনে সিদ্ধান্ত নিন।
সম্ভব হলে নিজেই স্বাস্থ্যকর রেসিপি খুঁজে বের করে বাড়িতে মিষ্টি তৈরি করে নিন। বাড়িতে রান্না করার দুটো ভালো দিক আছে। এক, আপনি জানেন ঠিক কতটা মিষ্টি দিয়ে জিনিসটি তৈরি হয়েছে, খাওয়ার সময়েও সেটা ভুলতে পারবেন না তাই। দুই, পরিবারের জন্য রান্না করার সময় কেউই মানের দিক থেকে আপোস করার কথা ভাবেন না। তাই একেবারে সেরা মানের ব্রাউন সুগার, চকোলেট ইত্যাদি যোগ করুন রান্নায়। ডার্ক চকোলেটে কিন্তু প্রচুর অ্যান্টি অক্সিড্যান্টও থাকে, রোজ সামান্য পরিমাণে ডার্ক চকোলেট খাওয়ার অনেক উপকার আছে।