সারাদিন হাড় ভাঙা পরিশ্রমের পর রাতে বিছানায় ঘুমোতে গেলেন৷ চোখের পাতা দু’টো এক হয়ে এসেছে৷ ঠিক এমন সময় কেঁপে উঠলেন৷ মনে হল এই বুঝি পড়ে যাচ্ছিলেন৷ আপনার কাছে এমন অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই নতুন নয়৷ একবার না, একাধিকবারই হয়তো স্বপ্নের মধ্যে এই পড়ে যাওয়ার অনুভূতি আপনার হয়েছে৷ সকলের সঙ্গে না হলেও বিশ্বের ৭০ শতাংশ মানুষের সঙ্গেই এই ঘটনা ঘটে৷ বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে হিপনিক জার্ক৷
ঘুমের একটি নির্দিষ্ট সময়ে সাধারণত এই হিপনিক জার্ক হয়ে থাকে৷ ঘুম আসা ও ঘুমিয়ে পড়ার সন্ধিক্ষণে হঠাৎ শরীরে ঝাঁকুনি অনুভূত হয়৷ একে বলে হিপনাগগিক স্টেজ৷ ছোট-বড় নির্বিশেষেই এই ঘটনা ঘটে থাকে৷ তবে হিপনিক জার্ক নিয়ে চিন্তার কোনও কারণ নেই৷ এটি আসলে কোনও রোগই নয়৷ বিশেষ কিছু কারণে মানুষের দেহে হিপনিক জার্ক হয়ে থাকে৷
১. সাধারণত ঘুম এসে গেলে হাত বা পা বা দেহের অন্য কোনও অঙ্গ নড়ে উঠলে শরীর এমন কেঁপে ওঠে৷ এছাড়া বাইরের কোনও শব্দ ও চড়া আলো চোখে পড়লেও জার্ক হয়ে থাকে৷
২. ঘুমের সময় হাত, পা অনেক বেশি শিথিল হয়ে যায়৷ মস্তিষ্ক তখন ভুল করে বার্তা দেয়, শরীর বোধহয় পড়ে যাচ্ছে৷ নিজেকে শক্ত করে ধরে রাখার চেষ্টাতেই হঠাৎ ঝাঁকুনি দিয়ে ওঠে শরীর৷
৩. দেহের কোনও অংশে, বিশেষ করে পায়ে ঝিঁঝি ধরে গেলে বা চুলকালে তার থেকে মুক্তি পেতে ঘুমের মধ্যেই পা ঝাঁকানোর চেষ্টা করে মানুষ৷ আর তখনই কেঁপে ওঠে সারা দেহ৷ ঘুম ভেঙে যায়৷ আর ঘুম ভাঙতেই মস্তিষ্ক জানান দেয়, আপনি হয়তো পড়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছিলেন৷ মদ্যপান করে ঘুমোলেও এমনটা হতে পারে৷
৪. অফিসের অতিরিক্ত চাপ মাথায় নিয়ে ঘুমোতে গেলেও এমন ঘটনা ঘটে৷ অতিরিক্ত উত্তেজনার জন্য ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে৷ ফলে চিন্তায় ঘুম ভেঙে যায়৷
৫. রাত জেগে টিভি দেখাও হিপনিক জার্কের অন্যতম কারণ৷ বিজ্ঞানের ভাষায় একে নারকোলেস্পি বলে৷ স্নায়ুর ক্রমাগত পরিবর্তনে শরীরে ঝাঁকুনি দিয়ে ওঠে৷
৬. শরীর অসুস্থ থাকলেও হতে পাকে হিপনিক জার্ক৷ ঘুমের মধ্যে শিথিল দেহ পড়ে যাওয়া আটকাতেই জোর ঝাঁকুনি হয়৷ আর খানিকক্ষণের জন্য ঘুম যায় উড়ে৷
প্রতিটি মানুষের জীবনেই ঘুমের প্রয়োজন অপরিসীম৷ সারাদিনের ক্লান্তির পর কয়েক ঘণ্টা শান্তির ঘুম না হলে পরের দিন কাজ করার এনার্জি পাওয়া যায় না৷ কিন্তু সমস্যা হল, হিপনিক জার্ক কোনও রোগ নয়৷ তাই এর কোনও চিকিৎসাও সম্ভব নয়৷ আর সেই কারণেই অনিচ্ছা সত্ত্বেও এই পড়ে যাওয়ার স্বপ্ন নিয়েই আপনাকে সারা জীবন কাটাতে হবে৷