কারো দুগ্ধজাত খাবারে সমস্যা, কারো শরীরে গ্লুটেন পড়লেই বাঁধে বিপত্তি (গম, বার্লিতে গ্লুটেন থাকে), কেউবা খেতে পারেন না ফ্রুক্টোজ জাতীয় খাবার (যেমন কলা, আঙুর, আম, আনারস)। অনেকে ভোগেন ডাইভারটিকিউলার ডিজিজে। যার ফলে উল্টো-পাল্টা খেলেই বমিভাব, জ্বর, ডায়রিয়া কিংবা কোষ্টকাঠিন্য। আপনি যদি সব খেতে পারেন, তাহলে আপনি নিঃসন্দেহে ভাগ্যবান। কারণ অনেক মানুষেরই খাবারের তালিকা অনেকটাই সীমিত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বেশিরভাগ মানুষই বুঝতে পারে না যে, ঠিক কোন খাবারে তাদের অ্যালার্জি রয়েছে। সেই জন্য আগে জেনে নেওয়া দরকার খাবার থেকে অ্যালার্জি হলে কীভাবে তা বুঝবেন। বর্তমানে, লোকেদের মধ্যে ফুড অ্যালার্জি ও ফুড ইনটলারেন্সের মাত্রা অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। তবে সমীক্ষা দেখায়, যারা মনে করে তাদের ফুড অ্যালার্জি হয়েছে, তাদের মধ্যে খুব কম লোকই ডাক্তারের কাছে গিয়ে এই বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে।
মারাত্মক অ্যালার্জির মতো ফুড ইনটলারেন্সে সে-রকম কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। ফুড ইনটলারেন্সে পেটে ব্যথা করে, পেট ফুলে যায় ও গ্যাস হয়, পেট কামড়ায়, মাথাব্যথা করে, গায়ে র্যাশ বের হয়, দুর্বল লাগে কিংবা অস্বস্তি লাগে। বিভিন্ন খাদ্য খাওয়ার ফলে ফুড ইনটলারেন্স হতে পারে, যেমন: দুগ্ধজাত সামগ্রী, গম, ময়দা, মদ্যজাতীয় পানীয় ও ইস্ট।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, কোনও খাবার খাওয়ার মিনিট খানেক থেকে ১ ঘণ্টার মধ্যে যদি আপনার শরীরে কোনও অস্বাভাবিক সমস্যা দেখা দেয় তাহলে বুঝতে হবে, সেই খাবারে আপনার অ্যালার্জি রয়েছে। এছাড়াও তারা জানাচ্ছেন, ফুড অ্যালার্জির ক্ষেত্রে কোনও খাবার খাওয়ার পরই যদি শ্বাসকষ্ট, রক্তচাপ হঠাৎ কমে যাওয়া, ত্বকের সমস্যা, নাক থেকে জল পড়া, হাঁচি, চুলকানি, বমি, ডায়েরিয়া প্রভৃতি অসুস্থতা দেখা দেয়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা জরুরি। খাবারের মাধ্যমে অ্যালার্জি দেখা দিলে সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করালে কখনও কখনও তা বিপজ্জনক পর্যায়েও যেতে পারে। এমনকী মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে বলে তারা জানাচ্ছেন।
এলার্জি সমস্যা রক্তের গ্রূপ অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন খ্যাদের মাধ্যমে বেশি অনুভূত হয়। যাদের রক্তের গ্রূপ ‘ও’ তাদের ক্ষেত্রে রাজ হাঁস, মাগুর মাছ, শিঙমাছ, চীনাবাদাম, কাজুবাদাম, পোস্তদানা, এভাকাডো, বাঁধাকপি, ফুলকপি, জলপাই, লাল আলু, বেগুন, আইসক্রিম, দুধ, দই, নারকেল, তেতুল, স্ট্রবেরি, আপেল ইত্যাদি এলার্জি বাড়াতে পারে। যাদের রক্তের গ্রুপ ‘এ’ তাদের জন্য এলার্জি তৈরী করতে পারে খাবার গুলো হলো হাঁসের মাসংস, গরুর মাংস, কোয়েল পাখি, মাগুর মাছ, ডিম, সামুদ্রিক মাছ, মাখন, ঘন দুধ, পেস্তাবাদাম, কাজুবাদাম, মিষ্টি আলু, বেগুন, জলপাই, কমলা, পেপে, আম, টমেটো ইত্যাদি।রক্তের গ্রুপ ‘এবি’ এর জন্য এলার্জি যুক্ত খাবারের তালিকা হলো হাঁসের মাসংস, কোয়েল পাখি, কাঁকড়া, চিংড়ি, লবস্টার, পারমিজান, ব্লু চিজ, ভুট্টা, তিলের তেল, পোস্তদানা, সূর্যমুখীর বীজ, কুমড়া বীজ, আইসক্রিম, জলপাই, মুলা, কলা, পেয়ারা, নারিকেল, কমলা, ডালিম, নারিকেল, কামরাঙ্গা ইত্যাদি।
দুধ এবং দুগ্ধজাত খাবার আমাদের শরীরের জন্য ক্যালসিয়ামের সবচেয়ে বড় উৎস। যদি আপনি এসব খেতে না পারেন তাহলে ক্যালসিয়াম গ্রহণ করতে হবে অন্য উৎস থেকে। পছন্দের ফল দিয়ে তৈরি করুন স্মুদি, সঙ্গে দুধের বদলে যোগ করতে পারেন সয়া মিল্ক। আজকাল বাজারে আমন্ড মিল্কও পাওয়া যায়। লাল আটার রুটি বা হোলগ্রেইন পাউরুটিতে লাগিয়ে নিন পিনাট বাটার, সঙ্গে দিন পাকা কলা কুচি। ল্যাকটোজ ফ্রি দুধ দিয়ে তৈরি করে নিন পরিজ। ব্যবহার করতে পারেন সয়া মিল্ক কিংবা আমন্ড মিল্কও।
গম, বার্লি, রাইজাতীয় শস্য থেকে তৈরি রুটিজাতীয় সব খাবারে থাকে গ্লুটন নামের পদার্থ। সিলিয়াক ডিজিজ আক্রান্ত রোগীদের গ্লুটন যুক্ত খাবার পরিহার করে চলতে হয়। প্রাকৃতিকভাবে গ্লুটনমুক্ত খাবার হল তাজা ফল, শাকসবজি, ডিম, মাছ, মাংস, বাদাম, ডাল এবং দুধ। আটা, ময়দা, সুজিতে যেহেতু সমস্যা, তাই এসব বাদ দিয়ে সবই খেতে পারেন আপনি। টমেটো, ধনে পাতা, পনির ইত্যাদি দিয়ে বানিয়ে ফেলুন মজার অমলেট। দুধ-কলা দিয়ে ভাত তো খাওয়াই হয়, সামান্য দারচিনি গুঁড়ো দিয়ে এবার যোগ করুন বাড়তি স্বাদ। সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে চিনির বদলে দিন মধু। আর সাদা ভাতের বদলে খেতে পারেন লাল চালের ভাত। রুটির বদলে সকালের খাবারে ভাতই হোক আপনার পেট ভরানোর উপায়। মিষ্টি স্বাদের কিছু ভাল না লাগলে মৌসুমি শাক-সবজি দিয়ে ভাত ভাজা করে নিতে পারেন। সঙ্গে টুকরো মাংসও থাকতে পারে।
ক্যাস্টর অয়েল শুধুমাত্র আপনার চুলের জন্য নয়, আপনার পাকস্থলী এবং এলার্জি জাতীয় কোন খাবার খাওয়ার ফলে শরীরে অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দিলেো ক্যাস্টর অয়েল দারুণ কাজ করে। অ্যালার্জির সমস্যা থেকে দূরে থাকতে চাইলে প্রতিদিন সকালে এক কাপ পরিমাণ জলে ৫-১০ ফোঁটা ক্যাস্টর অয়েল মিশিয়ে খেয়ে ফেলুন।
নিজের খেয়াল নিজেই রাখুন। সবার আগে যা করতে হবে তা হল লোভ সংবরণ করুন। দুধে সমস্যা এদিকে সবাই খাচ্ছে বলেই আপনিও রসমালাই খেয়ে ফেললেন এমন করবেন না। কিংবা খুব ইচ্ছে হলে চিংড়ির মালাইকারিও নয়। একবার শ্বাসকষ্ট হলে ভোগান্তি আপনার। এই সময়ে সঠিক চিকিৎসা বা অক্সিজেন পাবেন এমন কোনও নিশ্চয়তা নেই। তাই যদি আগেভাগে জেনে থাকেন যে অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে বা ওষুধ খান তাহলে নিজেই সাবধান হোন।