বাঁচতে কে না চায়? এই সুন্দর পৃথিবীর মায়া কেউই ছাড়তে চায় না। কেউ কেউ বলেন, সন্তানাদি বড় না হওয়া পর্যন্ত বেঁচে থাকতে চাই। এই বেঁচে থাকাটা তখনই আনন্দের যখন সুস্থতার সঙ্গে জীবন যাপন করা যায়।
যুক্তরাজ্যে অত্যন্ত সুপরিচিত একজন চিকিৎসক ড. ডন হারপার। তার চিকিৎসা সংক্রান্ত জ্ঞান বিশ্বের কাছে প্রশংসিত। সম্প্রতি তিনি স্বাস্থ্য বিষয়ে একটি বই লিখেছেন। বাইটির নাম দিয়েছেন ‘১০১ বছর সুস্থ হয়ে বাঁচুন’। তারই লেখা দীর্ঘ আয়ুর জন্য ৭ উপায় এখানে তুলে ধরা হলো:
ঠিক মতো ঘুমান : কতটুকু সময় ঘুমাচ্ছেন এবং সেই ঘুম কেমন হচ্ছে সেটা সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্যে খুব গুরুত্বপূর্ণ। খুব বেশি ঘুমানো যেমন খারাপ তেমনি অল্প ঘুমও স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ। ড. হারপার বলেন, দিনের বেলা অল্প কিছুক্ষণের জন্যে ঘুমিয়ে নেওয়াকে আমরা ক্যাটন্যাপ বলি। তবে এই ক্যাটন্যাপ যথোপযুক্ত পরিমাণে হতে হবে। যেমন একটা ব্যাটারিকে পুরোপুরি চার্জ দেওয়া হয় তেমনি। আমরা যদি শুধু ক্যাটন্যাপ দিয়ে চালিয়ে নেবার চেষ্টা করি তাহলে সেটা হবে অস্বাভাবিক। এটা ক্ষণিকের ব্যবস্থা। তবে রাতের ঘুমই আসল। আমাদেরকে রাতের ঘুমেই তলিয়ে যেতে হবে।
হাঁটাচলা করুন : আমরা অনেকেই প্রচুর সময় বসে বসে কাটাই। এই বসে থাকাটা স্বাস্থ্যের জন্যে একদমই ভালো নয়। এর জন্যে আমাদের ম্যারাথন রানার হতে হবে না। যেটা করতে হবে সেটা হলো শরীরটাকে একটু নাড়ানো- মানে হাঁটাচলা করা। ড. হারপার তার বই লিখতে গিয়ে অসংখ্য মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন। এদের মধ্যে অনেকেই এক শতাব্দী কাল ধরে বেঁচে আছেন। তিনি দেখেছেন, এদের সবার মধ্যেই একটি জিনিসের মিল আছে। সেটা হলো তারা কোন অ্যারোবিকসের (এক ধরনের কঠিন ব্যায়াম) ক্লাসে যায়নি, কিম্বা স্কোয়াশ খেলতেও যায়নি, কিন্তু তারা প্রচুর হেঁটেছেন।
লিভারকে বিশ্রাম দিন : লিভার শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। আনন্দ অনুভবের জন্য আপনার এই অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই রেড ওয়াইন খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। ড. হারপার বলছেন, অবশ্যই প্রত্যেক রাতে পান করা যাবে না। আপনার লিভারকে বিশ্রাম দিতে হবে অন্তত সপ্তাহে দু`দিন।
জিন সম্পর্কে জানুন : বিশেষ কোনো অসুখে পড়ার প্রবণতা হয়ত আপনার মধ্যে বেশি থাকতে পারে। আপনার পরিবারের বা বংশের অন্যান্য সদস্যদের অসুখ-বিসুখের ইতিহাস জানা থাকলে সেটা সুস্থ ও সুন্দর জীবন যাপনে সাহায্য করতে পারে। ড. হারপার বলেন, জিন যে শরীরে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে সেটা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। কোন কোন জিনের কারণে আমরা কি ধরনের রোগে আক্রান্ত হতে পারি, সেটা জানলে আমাদের সুবিধা হবে। আমি তো আর আমার জীবন নিয়ে যন্ত্রণায় ভুগতে চাই না। তাই জিন সংক্রান্ত রোগের জন্য আগে থেকেই সচেতন হতে পারি।
কার্বোহাইড্রেট সম্পর্কে সচেতন থাকুন : ভাত ও রুটির মতো কার্ব পরিহার করা আজকালকার দিনে হয়তো একটা ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যালেন্সড ডায়েটের জন্যে আমাদেরকে এসবও খেতে হবে। তবে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। ডা. হারপার বলছেন, আমি সব সময় রিফাইন বা মসৃণ কার্ব না খেয়ে বরং একটু জটিল ধরনের (মোটা আটার) কার্ব খাওয়ার কথা বলবো। যেমন বাদামী চাল, আস্ত শস্যদানা সমেত মোটা আটার রুটি।
প্রতিদিন হাসুন : সুস্থ হয়ে বেঁচে থাকা জন্য থাকতে হবে হাসিখুশি। এটা টনিকের মতো কাজ করে সুস্থতার ক্ষেত্রে। কষ্ট বয়ে বেড়ানোর কোনো মানে নেই, বরং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। মানসিকতায় পরিবর্তন এনে সামান্যতে হাসিখুশি থাকুন। ড. হারপার বলেন, এজন্যে ইতিবাচক মনোভাব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বইটি লিখতে গিয়ে গবেষণার সময় তিনি একজন বিজ্ঞানীর একটি গবেষণা খুঁজে পেয়েছেন, যেখানে তিনি দীর্ঘ আয়ুর সঙ্গে হাসিখুশির একটা সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন। তাই তিনি বলেছেন, এমন কিছু করুন যা প্রতিদিন আপনাকে হাসিখুশি রাখবে।
নিজেকে চাপমুক্ত রাখুন : আমাদের মধ্যে অনেকেই নানা রকমের স্ট্রেসের মধ্যে থাকি বা মানসিক চাপে ভুগি। এর একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ে আমাদের স্বাস্থ্যের উপর। সেটা শারীরিক ও মানসিক দু`ধরনের স্বাস্থ্যেরই ক্ষতি করে। ড. হারপার বলেন, নানা কারণে স্ট্রেসের সৃষ্টি হয়। সেটা কাজের কারণে হতে পারে, হতে পারে সম্পর্কের কারণেও, এমন কি পারিবারিক কারণেও। কিন্তু এসব চাপ থেকে কিভাবে মুক্ত থাকা যায় তার উপায় প্রত্যেককে আলাদা আলাদাভাবে খুঁজে নিতে হবে। কারণ একেকজনের বেলায় এটা একেকভাবে কাজ করে।
এজন্যে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কিম্বা এ সংক্রান্ত অন্যান্য পেশাজীবীদের কাছ থেকেও সাহায্য নেয়া যায়।