একটি সম্পর্কে ভালোবাসা যেমন জরুরি, ঠিক তেমনি দরকার একে অপরকে বোঝার চেষ্টা। যদি কোনো কারণে আপনি আপনার সঙ্গীকে বুঝতে অক্ষম হন, তবে সংসারে সুখ ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।
নিশ্চয়ই জানেন, শারীরিক সম্পর্ক স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে পূর্ণতা এনে দেয়। তবে এখেত্রেও দুজন দুজনকে বোঝার দরকার হয়। শারীরিক সম্পর্কের পরিপূর্ণতা তখনই অনুভব করা সম্ভব যদি দুজনেই শুধু নিজের নয়, সঙ্গীর তৃপ্তির দিকেও নজর দেন।
আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন যারা কেবল নিজের তৃপ্তির কথাই ভেবে থাকেন। সঙ্গীর শারীরিক সুখ নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা থাকে না। তবে সঙ্গমের মাঝে আসলে ঠিক কে স্বার্থপর তা বুঝতে পারাও মুশকিল। হতে পারে আপনি নিজেই স্বার্থপর। যেমন- চূড়ান্ত মুহূর্তে প্র্রতিটি মানুষ নিজের তৃপ্তির কথাই ভাবে। তাই এমনটা হওয়া খুবই সম্ভব যে সঙ্গীকে পূর্ণ তৃপ্ত করতে যা প্রয়োজন তা আপনি দিচ্ছেন না।
তাহলে কে স্বার্থপর? সঙ্গী, নাকি আপনি নিজে? বোঝার জন্য ‘ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে জানানো হল বিস্তারিত-
সব দায়িত্ব একজনের ঘাড়ে
মিলনে তৃপ্তি আসে বিভিন্ন পদ্ধতির বরাত দিয়ে। এখন মিলনের সময় সঙ্গীর কাছ থেকে যে পদ্ধতিতে আপনি তৃপ্তি পাচ্ছেন, সঙ্গীকেও অনুরূপ তৃপ্তি দিতে যদি সচেষ্ট না হন তবে আপনাকে স্বার্থপর বলাই যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘সার্টিফাইড সেক্স থেরাপিস্ট অ্যান্ড সেক্সোলজিস্ট’ ড. জেনি স্কাইলার বলেন, মিলনের সময়ে একপক্ষ যদি আশা করে যে তাকে তৃপ্ত করাটাই অপরপক্ষের দায়িত্ব, পরিবেশ ও তৃপ্তি দেওয়া অপরপক্ষেরই কাজ তবে নিঃসন্দেহে সে স্বার্থপর।
সাধারণত এমন মানুষগুলো শুধু উপভোগই করে, নিজের অংশগ্রহণ থাকে খুবই সামান্য। অনেকসময় একপক্ষের অংশগ্রহণ না করার পেছনে কোনো দুঃসহ স্মৃতি থাকে, তবে অপরপক্ষের কাছে তা স্বার্থপরতা হিসেবেই ফুটে ওঠে। আবার কখনও তারা আসলেই স্বার্থপর।
এই মনোবিজ্ঞানি পরামর্শ দেন, দুই ক্ষেত্রেই সঙ্গীর সঙ্গে আলাপে যেতে হবে। আপনি কী চান এবং তা পাওয়া যে জরুরি সেটা স্বার্থপর সঙ্গীকে বোঝাতে হবে। যদি পুরানো কোনো স্মৃতি সঙ্গীর জন্য সঙ্গমকে ভীতিকর করে তোলে, তবে বিষয়টা গুরুতর, চাই পেশাগত সাহায্য।
পূর্বসুচনার বালাই নেই
ড. স্কাইলার বলেন, কিছু সময় থাকে যখন মিলনটা চটপট হয়ে যাওয়াটা ভিন্ন আনন্দ বা রোমাঞ্চ বয়ে আনে। তবে সেটা কালেভদ্রে। দম্পতির মধ্যকার মিলন সময়ের হিসাব করবে না এটাই স্বাভাবিক।
আর ‘ফোরপ্লে’ হল সেই পরিস্থিতি যেখানে সঙ্গীরা একে অপরের তৃপ্তির উৎসগুলো আবিষ্কার করবে এবং তা কাজে লাগাবে।
তিনি আরও বলেন, সঙ্গমের উদ্দেশ্য যদি শুধু তৃপ্ত হওয়ার বিষয় হয় তবে সেই ব্যাপারটা স্বাভাবিক নয়। আর একজন মানুষ যদি তার সঙ্গীর শরীর ও শারীরিক তৃপ্তির জায়গাগুলো খুঁজে বের করায় কৌতুহলি না হয়, তবে সেটা যে স্বার্থপরতা তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
চাহিদা প্রকাশ করেও অবহেলিত
ড. স্কাইলার বলেন, স্বার্থপর সঙ্গী আপনার চাহিদাগুলোকে অবহেলা করবে, বিরক্তও হতে পারে। অনেকসময় সেই আচরণের নেপথ্যের কারণ হয় তাদের নিজেদের দুর্বলতা কিংবা নিরাপত্তাহীনতা। তবে তার বহিঃপ্রকাশটা হয় স্বার্থপরতার মতো।
যুক্তরাষ্ট্রের আরেক ‘সেক্স থেরাপিস্ট’ জেনিফার লিটনার বলেন, সঙ্গীর চাহিদাগুলোকে অবহেলা করার মানুষটি যদি আপনি নিজেই হন, তবে চিন্তা করুন কেনো আপনি তা করছেন। সঙ্গীর চাহিদাকে গুরুত্ব না দেওয়ার পেছনে কারণটা হতে পারে আপনার দৃষ্টিতে ‘অদ্ভুত, মেনে নেয়া মতো নয়’। সেটা আলোচনার বিষয়।
আবার নিজের কোনো দুর্বলতা থাকলে সেটাও আলোচনা করা সম্ভব। হোক সেটা সঙ্গীর সঙ্গে কিংবা কোনো চিকিৎসকের সঙ্গে।
নিজের পছন্দগুলোতে সীমাবদ্ধ থাকা
শারীরিক মিলনের ব্যাপারে সবাই সমমাত্রায় রোমাঞ্চপ্রিয় নয়। তবে সঙ্গীকে যদি সত্যিই ভালোবাসেন, তার তৃপ্তি যদি আপনার কাম্য হয়, তবে নিজস্ব নিরাপত্তার মধ্যে থেকেও নতুন অনেক কিছু চেষ্টা করে দেখা সম্ভব। আর সেই নতুন বিষয়গুলো আপনাকেও তৃপ্তি দিতে পারে।
লিটনার বলেন, স্বামী-স্ত্র্রীর মধ্যে যৌনসুখের প্রধান মন্ত্র হল পারস্পারিক তৃপ্তি। সঙ্গীর প্রতি মনযোগ দিতে হবে, তার পছন্দগুলো বাস্তব করতে হবে।