পলিস্টিক ডিম্বাশয় সিন্ড্রোম (PCOS) এটি একটি অন্তঃস্রাব সম্পর্কিত রোগ। ১৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সি মহিলাদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি থাকে। এই রোগের কারণে মহিলাদের ডিম্বাশয়ের মধ্যে ছোট ছোট সিস্ট তৈরি হয় যেগুলি ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরনের উৎপাদনকে বাধা দেয়, এমনকি ঋতুচক্রও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
যেহেতু এই রোগের কারণে হরমোনগুলির ভারসাম্য ঘটে তাই সঠিক মাত্রায় খাবার খাওয়া উচিত। এ রোগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল একটি সুষম ডায়েট। এমন কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো এই রোগের বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাই পলিস্টিক ডিম্বাশয় সিন্ড্রোম দের কি খাওয়া উচিত এবং কি এড়ানো উচিত সে বিষয়ে রইল বিশেষজ্ঞদের মতামত।
□ PCOS রোগীদের যে খাবারগুলো খাওয়া উচিত:
১) ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার:
ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে তাই এই জাতীয় খাবার বেশি ডায়েটে রাখা উচিত। যেগুলি হল – স্ট্রবেরি, আপেল, পেঁপে, কমলালেবু, মরসুমী লেবু, তরমুজ, ডালিম, ব্রকলি, ফুলকপি, কুমড়ো, ক্যাপসিকাম, মটর শুটি, ব্রাউন রাইস, ছোলা শাক ইত্যাদি জাতীয় খাবার গুলোকে খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত।
২) ফ্যাটলেস প্রোটিন:
উচ্চমাত্রায় প্রোটিনযুক্ত খাবারগুলি শরীরে এন্ড্রোজেন ও টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমিয়ে আনতে সাহায্য করে। কিন্তু চর্বিযুক্ত খাবারগুলি আবার ইনসুলিনের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। সুতরাং এই রোগে আক্রান্ত মহিলাদের প্রোটিন জাতীয় খাদ্য গ্রহণের জন্য চর্বিহীন প্রোটিন এর উপর নির্ভর হতে হবে। সুতরাং তাদের ডায়েটে মুরগি, ডিম, স্যালমন ফিশ, টুনা ফিস ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
৩) অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি খাবার:
অন্তরীণ প্রদাহ বা জ্বালা সমস্যা এ রোগের একটি অঙ্গ। এই তালিকায় জ্বালা প্রতিরোধকারী খাবার গুলি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। যেমন গ্রিন টি, ব্ল্যাক টিতে শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান রয়েছে। এছাড়া আদা, কাঁচা হলুদ, গোল মরিচ, তেজপাতা, মৌরি, জিরা, ধনে, লবঙ্গ, দারুচিনি ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
৪) স্বাস্থ্যকর ফ্যাট:
এই রোগে আক্রান্ত মহিলাদের ডায়েটে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড খাবারগুলো নিয়মিত রাখা উচিত। উদাহরণস্বরূপ – ম্যাকারেল ফিস, টুনা ফিস, সার্ডাইন ফিশ, আখরোট, চিয়া সিডস, অ্যাভোকাডো, জলপাই তেল ইত্যাদি খাবারের তালিকায় রাখুন।
□ PCOS রোগীদের যে খাবারগুলো খাওয়া উচিত নয়:
১) চিনি:
মিষ্টি বা মিষ্টান্ন জাতীয় অথবা প্রক্রিয়াজাত খাবার গুলি যেমন চিপস ফ্রেঞ্চ ফ্রাই এ সবগুলিতেই উচ্চমাত্রায় চিনির পরিমাণ রয়েছে। বেশি পরিমাণে চিনি গ্রহণ করলে শরীরের রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং ইনসুলিন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলের রস পান করাও অনুচিত কারণ এটি ওজন বৃদ্ধি করে।
২) কার্বোহাইড্রেট:
যে সমস্ত কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারে ফাইবার থাকে না সেগুলি ইনসুলিনের মাত্রাকে বাড়িয়ে তোলে এবং অতিরিক্ত স্থূল ও ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। সাদা ভাত ও আলু জাতীয় খাবারে বেশি পরিমানে গ্লাইসেমিক সূচক থাকে; তাই এমন একটি ডায়েট তৈরি করা উচিত যেখানে গ্লাইসেমিক সূচক কম থাকে।
৩) ভাজা খাবার:
ভোজ্য জাতীয় খাবারে ফ্যাট এবং ক্যালরির পরিমাণ বেশি থাকে এর ফলে হঠাৎ ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে। সুতরাং এই জাতীয় খাবার গুলি পলিস্টিক ডিম্বাশয় সিন্ড্রোমকে আরো ক্ষতিগ্রস্ত করে তোলে তাই সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন।