ক্যানসার শব্দটি শুনলেই যেন গলার কাছে দলা পাকিয়ে আসে। ঠোঁট শুকিয়ে যায়, থমকে যায় সময়ের কাঁটা। এই মরণব্যাধি কিন্তু মহামারির চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর দ্বিতীয় বৃহত্তম কারণ এই রোগ। তবে এই রোগের উপসর্গ সম্পর্কে এখনও সম্যক ধারণা সাধারণ মানুষের মধ্যে কম। বিশেষত, ক্যানসারের ধরন যদি বিরল প্রকৃতির হয়, তখন অনেক দিন পর্যন্ত মানুষ বুঝতেই পারে না। পেরিয়ে যায় চিকিৎসার সময়। রোগটি এতটাই ভয়াবহ যে, তা ছড়াতে খুব বেশি সময় লাগে না।
ক্যানসারের মূল কথা, শরীরে কোনো কোষের বৃদ্ধি। তাই ক্যানসার সাধারণ হোক বা বিরল, সব ক্ষেত্রেই এই ‘গ্রোথ অব সেল’ প্রযোজ্য। তবে অঙ্গভেদে ক্যানসারের উপসর্গ আলাদা আলাদা হয়। অনেকেই হয়তো জানেন না ক্যানসারের কারণে স্নায়ুগুলি সংকুচিত হয়ে যায়। এর থেকে পেশিতে টান ও খিঁচুনির মতো সমস্যা হয়।
যে ক্যানসারগুলির প্রকৃতি বিরল, তাদের লক্ষণগুলিও বিরল। তবে মনে রাখতে হবে, উপসর্গ আছে মানেই সেটা ক্যানসার নয়। সেটি অন্য কোনো রোগেরও লক্ষণ হতে পারে। কিন্তু এই উপসর্গগুলি থাকলে পরীক্ষানিরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই করিয়ে নেয়া উচিত যে, আসলে ক্যানসারের সম্ভাবনা আছে কিনা।
মস্তিষ্কের ক্যানসার: মাথাব্যথা, সকালে বমি হওয়া, দৃষ্টিশক্তির সমস্যা, চোখ ট্যারা হয়ে যাওয়া, কানে সর্বক্ষণ ভোঁ ভোঁ আওয়াজ হওয়া- মস্তিষ্কের ক্যানসারের প্রধান লক্ষণ। আরও গুরুতর সমস্যা হলে অঙ্গ বিকলও হয়ে যেতে পারে।
থাইরয়েড ক্যানসার: চোখ ঠেলে বেরিয়ে আসা, বুক ধড়ফড়ানি বাড়া, ওজন অনেকটা কমে যাওয়া থাইরয়েড গ্রন্থিতে ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে। ঘন ঘন বমি হওয়া, মাঝেমাঝেই সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলার মতো সমস্যায় ভোগেন রোগী। এ ক্ষেত্রে ঘাড়ের কাছে শক্ত মাংসপিণ্ডের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়।
ইনসুলিন প্রোডিউসিং টিউমার: প্যানক্রিয়াসে তৈরি হয় ইনসুলিন। কিন্তু কোনো রোগীর হঠাৎ অনেকটা সুগারের পরিমাণ কমে যাওয়ার নেপথ্যে এই টিউমার থাকতে পারে। যদি ওষুধ ও ইনসুলিন পর্যাপ্ত মাত্রায় প্রয়োগ করার পরেও রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তখন এই টিউমারের সম্ভাবনা খোঁজ করা হয়।
রক্তের ক্যানসার: এই ক্যানসারগুলিরও প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো লক্ষণ থাকে না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমতে থাকা, বার বার জ্বর, সংক্রমণ, শরীরজুড়ে কালশিটে পড়া- এগুলি রক্তের ক্যানসারের লক্ষণ।
হিস্টিয়োসাইটোসিস: এটি শিশুদের একটি বিরল প্রজাতির রক্তের ক্যানসার। হঠাৎ মাথার কোনো একটা জায়গা ফুলে ওঠা এর প্রধান লক্ষণ।
অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির ক্যানসার: এই গ্রন্থি থেকে তৈরি হয় অ্যাড্রিনোকর্টিকল হরমোন। ক্যানসারের সম্ভাবনা থাকলে এই হরমোনের উৎপাদন বেড়ে যায়। তার ফলে রক্তচাপ বেড়ে যায়। অনেকের দাড়ি-গোঁফ দেখা যায়।