নিয়মিত এক বাটি করে দই খাওয়া শুরু করলে শরীরে ‘উপকারি’ ব্যাকটেরিয়ার মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, যে কারণে শরীর এবং মস্তিষ্কের ভিতরে বেশ কিছু পরিবর্তন হয়। আর এর প্রভাবে বাইপোলার ডিজঅর্ডারের মতো সমস্যার প্রকোপ কমতে সময় লাগে না। সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণা পত্রে এমনটা দাবি করা হয়েছে।
বাইপোলার ডিজঅর্ডার হল এমন রোগে যাতে রোগীর মুড হঠাৎ হঠাৎ করে বদলে যায়। এই অনন্দে, তো পরক্ষণেই মন খারাপ হয়ে যায়। এমনকি ডিপ্রেশন এবং অ্যাজাইটির মতো সমস্যার শিকার হতেও সময় লাগে না। প্রসঙ্গত, এমন বাইপোলার ডিজঅর্ডারের চিকিৎসা বলতে প্রথমে সাইকোথেরাপি করা হয়ে থাকে। তারপর নিয়ম মাফিক বিশেষ কিছু মেডিসিন খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় রোগীকে। এছাড়া আর কোনও চিকিৎসা নেই বললেই চলে। তাই এ কথা মানতেই হবে যে এমন পরিস্থিতিতে এই নতুন অবিষ্কার যে কিছুটা হলেও আশার আলো দেখাবে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই!
আমেরিকান গবেষকদের করা এই স্টাডিতে দেখা গেছে, নিয়মিত দই খেলে শরীরে প্রদাহের মাত্রা হ্রাস পেতে শুরু করে, যে কারণে বাইপোলার ডিজঅর্ডারের মতো রোগ ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না। শুধু তাই নয়, যারা ইতিমধ্যেই এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন তাদেরও কষ্ট কমে চোখে পরার মতো। প্রসঙ্গত, একাধিক গবেষণা অনুসারে নিয়মিত এক বাটি করে দই খেলে যে শুধু বাইপোলার ডিজঅর্ডারের মতো রোগ দূরে থাকে, এমন নয়। সেই সঙ্গে আরও একাধিক শারীরিক উপকার পাওয়া যায়। যেমন ধরুন-
এনার্জির ঘাটতি দূর হয়
আজকাল অল্পতেই কি ক্লান্ত হয়ে পরছেন? তাহলে রোজের ডায়েটে দইয়ের অন্তর্ভুক্তি মাস্ট! কারণ দুগ্ধজাত এই খাবারটিতে উপস্থিত একাধিক উপকারি উপদান শরীরে প্রবেশ করার পর এমন খেল দেখায় যে এনার্জির ঘাটতি মিটতে সময় লাগে না। সেই সঙ্গে দইয়ে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, দেহের ইতিউতি জমে থাকা ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানদেরও বের করে দেয়। ফলে সার্বিকভাবে শরীর চাঙ্গা হয়ে ওঠে।
ডায়ারিয়ার প্রকোপ কমে
এদিক-সেদিক খাওয়ার কারণে কি পেট ছেড়েছে? তাহলে ঝটপট দই খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন অল্প সময়েই চাঙ্গা হয়ে উঠছেন। আসলে দইয়ে উপস্থিত উপকারি ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ করার পর এমন খেল দেখায় যে পেট খারাপের মতো সমস্যা অল্প সময়েই কমে যায়। শুধু তাই নয়, রোজের ডায়েটে দইকে জায়গা করে দিলে নানাবিধ পেটের রোগ তো দূরে থাকেই, সেই সঙ্গে দেহের ভিতরে জলর ঘাটতি দূর হয়। ফলে শরীর দুর্বল হয়ে পরার আশঙ্কা যায় কমে।
স্ট্রেস কমে
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, দই খাওয়ার পর আমাদের মস্তিষ্কের ভিতরে এমন কিছু পরিবর্তন হয় যে মানসিক চাপ এবং অ্যাংজাইটি কমতে শুরু করে। প্রসঙ্গত, বর্তমান সময়ে যেসব মারণ রোগগুলোর কারণে সব থেকে বেশি সংখ্যক মানুষের প্রাণ যাচ্ছে, তার প্রায় সবকটির সঙ্গেই স্ট্রেসের যোগ রয়েছে। তাই তো নিয়মিত দই খাওয়ার প্রয়োজনয়ীতা যে বেড়েছে, সে বিষযে কোনও সন্দেহ নেই।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটে
দইয়ে উপস্থিত উপকারি ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ করার পর রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে এতটাই শক্তিশালী করে দেয় যে সংক্রমণ থেকে ভাইরাল ফিবার, কোনও কিছুই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না। ফলে সুস্থ জীবনের পথ প্রশস্ত হয়।
হাড় এবং দাঁতের স্বাস্থ্য়ের উন্নতি ঘটে
দুধের মতো দইয়েও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফসফরাস এবং ক্যালসিয়াম। এই দুটি উপাদান দাঁত এবং হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই বুড়ো বয়সে গিয়ে যদি অস্টিওআর্থ্রাইটিসের মতো রোগ আক্রান্ত হতে না চান, তাহলে এখন থেকেই নিয়মিত দই খাওয়া শুরু করুন। এমনটা করলে দেখবেন উপকার মিলবেই মিলবে।
নানাবিধ হার্টের রোগ দূরে থাকে
রক্তে খারাপ কোলেস্টরল বা এল ডি এল-এর মাত্রা কমানোর পাশাপাশি রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ ভূমিকা নেয় দই। তাই তো নিয়মিত এই দুগ্ধজাত খাবারটি খেলে হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রায় থাকে না বললেই চলে। তাই তো পরিবারে যদি কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজের ইতিহাস থাকলে দইকে সঙ্গ ছাড়ার ভুল কাজটি করবেন না যেন!
ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়
দইয়ে পরিমাণ মতো বেসন এবং অল্প করে লেবুর রস মিশিয়ে যদি মুখে লাগাতে পারেন তাহলে ত্বক নিয়ে আর কোনও চিন্তাই থাকে না। আসলে দইয়ে থাকা জিঙ্ক, ভিটামিন ই এবং ফসফরাস এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পলন করে থাকে। প্রসঙ্গত, এই ফেস প্যাকটি সপ্তাহে কম করে ২-৩ বার লাগালে দারুন উপকার মেলে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে
অতিরিক্তি ওজনের কারণে কি চিন্তায় রয়েছেন? তাহলে নিয়মিত এক বাটি করে দই খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন দারুন উপকার মিলবে। বিশেষত ভুঁড়ি কমাতে দইয়ের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। প্রসঙ্গত, ইউনিভার্সিটি অব টেনেসির গবেষকদের করা একটি পরীক্ষায় দেখা গেছে নিয়মিত দই খাওয়া শুরু করলে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে। সেই সঙ্গে কর্টিজল হরমোনের ক্ষরণও কমে যায়। ফলে ওজন হ্রাসের সম্ভাবনা প্রায় ২২ শতাংশ বেড়ে যায়।
ভিটামিনের ঘাটতি মেটে
নিয়মিত দই খাওয়া শুরু করলে শরীরে পটাশিয়াম, ফসফরাস, আয়োডিন এবং জিঙ্কের ঘাটতি দূর হতে শুরু করে। সেই সঙ্গে ভিটামিন বি৫ এবং বি১২-এর মাত্রাও বাড়তে থাকে। আর এই সবকটি উপাদানই যে নানাভাবে শরীরের উপকারে লেগে থাকে, তা কি আর বলে দিতে হবে! এই যেমন ধরুন ভিটামিন বি১২ লোহিত রক্ত কণিকার উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি নার্ভাস সিস্টেমের কর্মক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে
বেশি কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, দইয়ে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা পাকস্থলিতে হজমে সহায়ক ভাল ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা নেয়। সেই কারণেই তো বদ-হজম এবং গ্যাস-অম্বলের সমস্যা কমাতে দই খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। প্রসঙ্গত, পৃথক একটি গবেষণায় দেখা গেছে, পেপটিক আলসার হওয়ার পিছনে দায়ি এইচ পাইলোরি নামক ব্য়াকটেরিয়াকে মেরে ফলতেও দইয়ের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। সেই কারণেই তো পেপটিক আলসারের চিকিৎসায় দইয়ের অন্তর্ভুক্তির পিছনে সাওয়াল করে থাকেন বিশেষজ্ঞরা।