রসুনের রয়েছে নানা পুষ্টিগুণ। শরীর ভাল রাখা ছাড়াও বিশেষ কিছু রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষেত্রে রসুন প্রায় বিকল্পহীন। তাই অনেকেই রসুন খেয়ে থাকেন। কেউ কেউ কাঁচা খান আবার কেউ রান্নাতে পরিমাণে বেশি দিয়ে খান। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মত হচ্ছে, রসুন খেতে হবে পরিমাণ মতো, আর রসুন রান্না করলে পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়।
অনেকের ধারণা, রসুন খেলে শরীর গরম হয়, যা আদতে খারাপ। তাই রসুন খাওয়া উচিত কি না, এ বিষয়ে অনেকে আছেন দ্বিধাদ্বন্ধে। তবে ডায়াটিশিয়ানরা বলছেন, রসুনের মধ্যে নানা অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট থাকায়, প্রতিদিন অল্প রসুন খাওয়া যেতেই পারে। কোলেস্টেরল ছাড়াও এটি নিয়ন্ত্রণে রাখে রক্তে সুগারের মাত্রা। এতে রয়েছে হাই সালফারও। তবে বেশি সময় নিয়ে রান্না করলে রসুনে থাকা অ্যালিসিন নষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়াও লোকের মধ্যে যে ভ্রান্ত ধারণা- রসুন খেলে পেট পরিষ্কার হয়ে যায় কিংবা শরীর গরম হলে যে তা ক্ষতিকর এর কোনও সত্যতা নেই।
এবার জেনে নিন রসুন কতটুকু খাওয়া যাবে এবং এর হরেক গুণ সম্পর্কে…
• রসুন রক্ত পরিষ্কার রাখার কাজ করে। তাই মুখে বা ত্বকে নানা র্যাশ, চুলকানি প্রায়শই হয়, তাহলে রোজ রসুন খেতেই পারেন। প্রতিদিন দু’কোয়া রসুনই এর জন্য যথেষ্ট। সকালে এই কাঁচা রসুনের সঙ্গে খেতে হবে প্রচুর পরিমাণে জল।
• শরীরের টক্সিন বার করতেও সাহায্য করে রসুন। এক গ্লাস উষ্ণ জলে অর্ধেক পাতিলেবুর রস আর দু’কোয়া রসুন কুঁচি গুলে খেলে শরীর থেকে বেরিয়ে যাবে ক্ষতিকর টক্সিন।
• যাদের ঠান্ডা লাগার প্রবণতা রয়েছে, তাদের জন্য রসুন খুবই উপকারী। এর জন্য গার্লিক টি বানিয়ে খেতে পারেন। গরম জলে থেঁতো করা রসুন ফুটিয়ে নিয়ে, তারপরে ছেঁকে পান করতে হবে। আবার গরম ভাতের সঙ্গে ঘিয়ে ভাজা রসুন খেতে পারেন। ঠাণ্ডা লাগা তো কমবেই, সাইনাসাইটিসের কষ্ট থেকেও রেহাই মিলবে। রোজ রসুন খেলে নাক বন্ধ হওয়ার সমস্যা যেমন নিয়ন্ত্রণে আসে, তেমনই পুরো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
• রসুন কাঁচা কিংবা হালকা সিদ্ধ করে খেলে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল পরিমাণ কমবে। ফলে হার্ট থাকবে ভাল।
• রসুনের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাকটিরিয়াল এবং অ্যান্টি প্যারাসাইটিক গুণাগুণ। শরীরে খারাপ ব্যাকটিরিয়া, ফাঙ্গাস আর প্যারাসাইটের মোকাবিলা করতে অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে রসুন খাওয়ার ইতিহাস বেশ পুরনো। এমনকি কৃমি থেকে রেহাই পেতেও খাওয়া যেতে পারে রসুন।
• ব্রণ বা বড় পিম্পলের মুখে রসুন কেটে খানিকক্ষণ ধরে রাখলে জ্বালা কমবে। আবার ত্বকের কোলাজেন রক্ষা করতে সাহায্য করে বলে রসুনকে বলা যেতে পারে অ্যান্টিএজিংয়ের অন্যতম উপাদান।
রসুন খেতে হলে কিছু বিধিনিষেধ মানা জরুরি। এবার তা জেনে নিন..
• রসুন খেলে তা কাঁচা কিংবা অল্প রোস্ট করে খাওয়াই ভাল। রান্নার মশলায় বেটে দেওয়া রসুনে খাবারের স্বাদ মিললেও তাতে পুষ্টিগুণ তেমন থাকে না বললেই চলে।
• রসুন খেতে হলে দিনে দু’-তিন কোয়ার বেশি না খাওয়াই ভাল। এর চেয়ে বেশি পরিমাণে রসুন খেতে হলে চিকিৎসক এবং ডায়াটিশিয়ানের পরামর্শ নেওয়া অবশ্যই জরুরি।
• যে কোন সার্জারি বা অপারেশনের আগে অনেক সময়ে চিকিৎসকেরা রসুন খেতে নিষেধ করেন। ফলে সে দিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
• রসুন শরীর গরম রেখে ঠান্ডা লাগার ধাত কমায় ঠিকই। তবে হাঁপানির সমস্যা থাকলে রসুন খাওয়ার ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। কারণ সে ক্ষেত্রে নানা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও হতে পারে।
তাই ঠাণ্ডার মওসুমে শরীর ভাল রাখতে অল্প পরিমাণে রসুন হতেই পারে আপনার নিত্যসঙ্গী।