মাথা থেকে রোজই কিছু না কিছু চুল ঝরে। আবার স্বাভাবিক নিয়মে তা পূরণ হয়ে যায়। কিন্তু সেটা একটু বাড়তি হলেই দুশ্চিন্তা ও হতাশার দিকে নিয়ে যেতে পারে। ত্বক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষের নিয়মিত উদ্বেগগুলোর একটি হচ্ছে এই অতিরিক্ত চুল পড়া। সমস্যাটি উত্তরণে বিশেষজ্ঞদের দ্বারস্থ হওয়ার মাত্রা গত কয়েক বছরে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে।
দিন দিন শরীরের সঙ্গে সঙ্গে চুলের স্বাস্থ্যের হালও খারাপ হচ্ছে। বিভিন্ন রকমের হেয়ার ট্রিটমেন্ট করেও কোনো লাভ পাচ্ছেন না অনেকে। বাজারে চলতি প্রোডাক্ট ব্যবহার করে চুল পরা বেড়ে যাচ্ছে তুলনামূলকভাবে বেশি। কিন্তু রান্নাঘরেই আছে সব সমস্যার সমাধান। খুবই সামান্য ও সহজলভ্য উপকরণ। তার মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে ঘন, কালো, স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুলের চাবিকাঠি।
ক্যাস্টর অয়েলেই ম্যাজিক:
ক্যাস্টর অয়েল ময়েশ্চারাইজার হিসাবে কাজ করে। মাথার স্ক্যাল্পে ও চুলের গভীরে ঢুকে আর্দ্রতা বজায় রাখে, যার ফলে চুল হয়ে ওঠে মসৃণ ও কোমল। চুলের রুক্ষতাকে দূর করতে আমন্ড তেল এবং অলিভ অয়েলের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা ক্যাস্টর অয়েল মিশিয়ে চুলে লাগালেই সুফল মিলবে। চুলের বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে ক্যাস্টর অয়েল। এর মধ্যে ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে যা মাথার তালুতে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে। অন্যদিকে চুলের ফলিকলে কোনো ক্ষতি হলে তাও মেরামত করে। এই কারণে দ্রুত বৃদ্ধি পায় চুল। চুলের কালো রঙকে ধরে রাখতে সক্ষম এই তেল।
শরীরের প্রোটিন চাই:
খাদ্যতালিকায় প্রোটিন থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০ গ্রাম প্রোটিন শরীরকে দিতেই হবে। ইদানীং প্রায় প্রত্যেকেই ডায়েট করেন। ফলে মেনু থেকে বাদ যায় প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার। তখনই চুল পরা, পাতলা হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যার সূত্রপাত ঘটে। তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় মসুর ডাল, ডিম এবং মাংসের পরিমাণ বাড়াতে হবে।
পেঁয়াজের রস:
চুলের যাবতীয় সমস্যার ৯০ শতাংশ কমিয়ে দিতে পারে পেঁয়াজ। এতে প্রচুর পরিমাণে জীবাণুনাশক উপাদান থাকে। এই জন্য বিষাক্ত পোকামাকড় কামড়ালেও অনেক সময়ই পেঁয়াজের রস ব্যবহার করা হয়। পেঁয়াজের এই গুণটাই চুলের সমস্যা সমাধানে সব থেকে বেশি সাহায্য করে। পেঁয়াজের রসের সঙ্গে সমপরিমাণ মধু মিশিয়ে চুলে লাগাতে হবে। মাসাজ করতে হবে মাথায়। তারপর আধ ঘণ্টা রেখে ধুয়ে ফেললেই হবে। পেঁয়াজের উগ্র গন্ধ ভালো না লাগলেও চুলের যত্নে এর জুড়ি নেই।
অ্যাপল সিডার ভিনেগার:
অ্যাপল সিডার ভিনেগার শ্যাম্পুর বদলে দিব্যি ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে মাথার তালুতে জমে থাকা সব ধুলোময়লা উঠে আসে। এতে রয়েছে ভিটামিন বি, ফলিক অ্যাসিড এবং ভিটামিন সি। প্রাণহীন চুলে জেল্লা ফেরানোর জন্য তাই এই ভিনেগার দারুণ কাজ দেয়। তবে চুলে সরাসরি না লাগানোই ভালো। ব্যবহার করার সময়ে জল মিশিয়ে নিতে হবে। তিন টেবিল চামচ অ্যাপল সিডার ভিনেগারের সঙ্গে অন্তত এক কাপ জল মিশিয়ে চুলে লাগালে সবচেয়ে ভালো ফল মিলবে।
মাথায় ম্যাসাজ:
একমাথা ঝলমলে উজ্জ্বল চুল পাওয়ার অন্যতম পথ হলো ভালো তেল দিয়ে চুল আর মাথায় মাসাজ করা। স্ক্যাল্পে তেল দিয়ে মাসাজ করলে রোমছিদ্রগুলো খুলে যায়, ফলে তেলের শোষণ ভালো হয়। নিয়মিত অয়েল মাসাজ রাসায়নিক ও অন্যান্য হেয়ার ট্রিটমেন্টজনিত যাবতীয় ক্ষতি নিরাময় করে, রক্ত সংবহন বাড়ায়, চুলের গোড়া মজবুত করে, এবং চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো উদ্বেগমুক্ত জীবনযাপন। চুল পড়ার অন্যতম কারণ দুশ্চিন্তা। তাই ভারহীন থাকার অভ্যাস করতে হবে। এটাই সুস্থ জীবনের অন্যতম চাবিকাঠি।