থাইরয়েডের সমস্যায় বর্তমানে অনেক নারী-পুরুষই ভুগছেন। বিভিন্ন সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রতি ১০০০ নারীর মধ্যে অন্তত ১৫ জন ও ১০০০ পুরুষের মধ্যে ১ করে থাইরয়েডের সমস্যায় আক্রান্ত।
থাইরয়েড শরীরের এক বিশেষ গ্রন্থি। এটি স্বরযন্ত্রের দু’পাশে থাকে। থাইরয়েড গ্রন্থি দেখতে প্রজাপতির মতো। থাইরয়েড গ্রন্থির কাজ হলো শরীরের কিছু অত্যাবশ্যকীয় হরমোন (থাইরয়েড হরমোন) উৎপাদন করা। শরীরের জন্য থাইরয়েড হরমোনের একটি নির্দিষ্ট মাত্রা আছে।
নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে কম বা বেশি হরমোন উৎপাদিত হলেই শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে শুরু করে। থাইরয়েড হরমোন কম উৎপন্ন হলে বলা হয় হাইপোথাইরয়েডিজম ও বেশি উৎপন্ন হলে বলা হয় হাইপারথাইরয়েডিজম।
থাইরয়েড গ্রন্থি শরীরের বিপাকীয় ফাংশনের জন্য দায়ী। তাই থাইরয়েডের সমস্যা দেখা দিলে পুরো শরীরে তার প্রভাব পড়ে। একজন থাইরয়েড রোগী বিষণ্নতা, ওজন বৃদ্ধি, ক্লান্তি, শরীরের তাপমাত্রা কম, চুল পড়া, দুর্বল আলোর সংবেদনশীলতা ও শক্তির অভাব অনুভব করতে পারেন।
হাইপোথাইরয়েডিজমের রোগীরাই অতিরিক্ত ওজনে ভোগেন। এই সমস্যা হলে বিপাকীয় হার কিছুটা কমে যায়। ফলে হজমের গন্ডগোলের মতো কিছু কারণে ওজন বাড়তে থাকে।
এক্ষেত্রে সঠিক জীবনধারা অনুসরণ করে সহজেই বশে রাখা যায় থাইরয়েড ও ওজন। চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক থাইরয়েডের রোগীরা কী কী কৌশল মেনে ওজন কমাতে পারবেন-
>> সান দিয়েগোতে প্রাইম ওয়েলনেস ক্লিনিকের পরিচালক ও রমোন ডিসঅর্ডারে বিশেষজ্ঞ ডা. কেলি অস্টিনের পরামর্শ অনুযায়ী, থাইরয়েড রোগীদের উচিত মাঝারি থেকে কম কার্বোহাইড্রেট ডায়েটে রাখতে হবে। থাইরয়েড রোগীরা ওজন কমাতে চাইলে অবশ্যই চিনি ও মিছরিজাতীয় মিষ্টি খাবার এড়িয়ে চলবেন।
>> ডা. অস্টিনের মতে, থাইরয়েডের রোগীদের উচিত অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি খাবার খাওয়া। এতে জয়েন্টে ব্যথার পাশাপাশি বিষণ্নতাও কমবে। অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরিজাতীয় খাবার ইমিউন সিস্টেমকে প্রশমিত করতে সাহায্য করে। যা হাইপোথাইরয়েডিজমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য সবচেয়ে উপযোগী।
অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ডায়েট ইমিউন সিস্টেম ও অত্যধিক প্রদাহ থেকে স্বস্তি দেয়। ম্যাগনেসিয়াম, বি ভিটামিন , জিঙ্ক, সেলেনিয়াম, আয়রন ও ভিটামিন সি থাইরয়েড ফাংশনের উন্নতি করে।
এর পাশাপাশি সবুজ শাকসবজি, টমেটো, চর্বিযুক্ত মাছ, বাদাম, ফল ও জলপাই তেল প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ভালো খাবার। সঠিক খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে সহজেই থাইরয়েডের মাত্রা ও ওজন দুটোই কমানো যায়।
>> থাইরয়েডের রোগীরা কখনো দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকবেন না। প্রয়োজন বারবার অল্প অল্প করে খাবার গ্রহণ করুন। তাহলে প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়ার আগ্রহ জন্মাবে না। অবশ্যই প্রতিবারের খাবার হতে হবে স্বাস্থ্যকর ও সুষম।
>> ওজন কমাতে গেলে অবশ্যই দৈনিক কতটুকু খাবার খাচ্ছেন সে হিসাব রাখতে হবে। এজন্য একটি ফুড ডায়েরিতে সব লিখে রাখুন। দিনের কোন সময়ে কী কী খাবার খাচ্ছেন, তা লিখে রাখুন। তাহলে কতটুকু ক্যালোরি আপনি দৈনিক গ্রহণ করছেন তার হিসাব পাবেন।
হাইপোথাইরয়েডিজমে আক্রান্ত ব্যক্তির ডায়েটে অবশ্যই স্বাস্থ্যকর চর্বি, মাঝারি প্রোটিন ও কম কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার থাকতে হবে। এগুলো থাইরয়েড ফাংশনের জন্য সেরা।
>> শরীরের অতিরিক্ত ক্যালোরি পোড়াতে ব্যায়াম করতে হবে নিয়মিত। হাইপোথাইরয়েডিজমে আক্রান্ত ব্যক্তিরা বেশিরভাগ সময় অতিরিক্ত ব্লান্ত বোধ করেন।
তবে তিনি যদি নিয়মিত শরীরচর্চা অভ্যাস গড়েন তাহলে ক্লান্তি ও বিষণ্নভাব অনেকটাই কেটে যাবে। আর শরীর ও মন দুটোই ফুরফুরে থাকবে।
>> সঠিক খাবার ও শরীরচর্চার পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রোগীকে অবশ্যই থাইরয়েডেরে ওষুধ গ্রহণ করতে হবে। থাইরয়েড হরমোনের ওষুধ সকালে খালি পেটে প্রচুর পরিমাণে জলের সঙ্গে খাওয়া উচিত। অন্য কোন ওষুধের সঙ্গে এটি গ্রহণ করবেন না।
সকালের খাবার অন্তত আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা আগে খেতে হবে এ ওষুধ। যদি আপনার থাইরয়েডের মাত্রা খুব বেশি না হয় তাহলে ওজন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আপনি তা বশে আনতে পারবেন।