‘নির্বাচন কমিশন বিজেপির হয়ে কাজ করছে’, এসআইআর প্রক্রিয়াকে অসাংবিধানিক দাবি করে আদালতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের

তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ তথা আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার কলকাতায় এক সাংবাদিক বৈঠকে এসআইআর (SIR) প্রক্রিয়াকে ‘অসাংবিধানিক’ এবং ‘নির্বাচন আইন বহির্ভূত’ বলে তীব্র আক্রমণ করলেন। তিনি সরাসরি অভিযোগ করেন যে নির্বাচন কমিশন বিজেপির নির্দেশ মেনে চলছে এবং এই নিয়ে তাঁরা আদালতে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরবেন।

বিএলএ নিয়োগের নির্দেশিকা বদল নিয়ে অভিযোগ:

কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, বিজেপিকে সহায়তা করতেই নির্বাচন কমিশন রাতারাতি পুরনো নিয়ম পরিবর্তন করেছে।

  • পূর্বের কঠোর নিয়ম: আগে কমিশনের কঠোর নির্দেশিকা ছিল যে, বিএলএকে (Booth Level Agent) নিজের বুথেই নিয়োগ করতে হবে, কারণ তিনি ওই এলাকার ভোটারদের বাড়ি চেনেন।
  • নিয়ম বদল: কল্যাণের দাবি, “যেহেতু ৭৫ শতাংশ বুথে বিজেপি নির্দিষ্ট বুথ থেকে বিএলএ দিতে পারছে না, তাই নির্বাচন কমিশন বিজেপিকে খুশি করতে একটি নয়া নির্দেশিকা জারি করেছে। নয়া নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, কোনও দল প্রয়োজনে কোনও বুথে অন্য জায়গা থেকে বিএলএ নিয়োগ করতে পারে। শুধু বিএলএকে সেই বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটার হতে হবে।”
  • ‘সেট করা ছিল’: তিনি অভিযোগ করেন, কমিশন এই নয়া নির্দেশিকা ঘোষণার কয়েক মিনিটের মধ্যেই শুভেন্দু অধিকারী তা নিজের এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করেন, যা প্রমাণ করে যে পুরো বিষয়টি “সেট করা ছিল”

২০০২ সালের ভোটার তালিকা ধরে এসআইআর করার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন:

আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় নির্বাচন আইনের প্রসঙ্গ টেনে কমিশনের পদ্ধতির বিরুদ্ধে আইনি প্রশ্ন তুলেছেন।

  • আইন লঙ্ঘন: তিনি বলেন, বাংলায় ২০০৯ সালের পর সংসদীয় সীমানা পুনর্বিন্যাস (ডিলিমিটেশন) হয়েছে এবং নতুন ভোটার তালিকা এসেছে। ইলেক্টোরাল রুল ২৪ অনুযায়ী, ডিলিমিটেশনের পর পুরনো কোনো ভোটার তালিকা আর গ্রাহ্য নয়।
  • নির্বাচন আইনের পরিপন্থী: তাঁর বক্তব্য, এখন ২০০২ সালের ভোটার তালিকা ধরে যেভাবে এসআইআর করা হচ্ছে, তা নির্বাচন আইনের পরিপন্থী।
  • ভোটারের অধিকার খর্ব: সাংসদ বলেন, “ভোটার তালিকায় একবার নাম উঠলে ভোট দেওয়া আমার অধিকার। এখন যে এনুমারেশন ফর্ম দেওয়া হচ্ছে, তাতে সই না করলে আমার নাম থাকবে না। একবার তালিকায় নাম উঠে গেলে আমাকে আবার ভোটার হতে হবে কেন?” এই পদ্ধতিকে তিনি অসাংবিধানিক বলে দাবি করেন।

আদালতে মামলা:

তৃণমূলের সাংসদরা (দোলা সেন, ডেরেক ও’ব্রায়ান, মালা রায়) ইতিমধ্যে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছেন এবং সুপ্রিম কোর্ট দু’সপ্তাহের মধ্যে বিষয়টি শুনবে বলে জানিয়েছে।

শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে কটাক্ষ:

যে সময় কল্যাণ এই সাংবাদিক বৈঠক করছিলেন, ঠিক সেই সময় শুভেন্দু অধিকারী মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের দফতরে ১৩ লক্ষ ২৫ হাজার ভুয়ো ভোটারের তালিকা জমা দেন। এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কল্যাণের মন্তব্য, “এই পাঁচটি বিধানসভা কেন্দ্র আগে শুভেন্দু অধিকারী দেখত… এসব শুভেন্দু অধিকারীই করে গিয়েছে।” তিনি কটাক্ষ করে বলেন, “এ তলারও খাবে, উপরেরও খাবে। ভারতবর্ষ বোধহয় এমন নিকৃষ্ট রাজনৈতিক নেতা কখনও দেখেনি।”

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy