ভারতের রাস্তায় পথচারীর নিরাপত্তা একটি বড় উদ্বেগ। সিগন্যাল না মানা গাড়ির ভিড়েও আপনার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে দেশের আইন কিন্তু তৈরি! আপনি যদি সব সময় জেব্রা ক্রসিংয়ের উপর দিয়ে রাস্তা পারাপার করেন, তবে আপনি আপনার আইনি সুরক্ষা কবচটি ব্যবহার করছেন। কারণ, ভারতের মোটর ভেহিকল আইন পথচারীদের জন্য বিশেষ বিধান রেখেছে।
আইনি সুরক্ষা: জেব্রা ক্রসিংয়ে গাড়িকে থামতেই হবে
ভারতের মোটর ভেহিকল অ্যাক্ট, ১৯৮৮ পরিষ্কার বলছে, জেব্রা ক্রসিংয়ের আগে গাড়িকে থামতেই হবে। পথচারীর সুরক্ষা এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই সুরক্ষা লঙ্ঘিত হলে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার সম্পূর্ণ অধিকার আপনার আছে।
কীভাবে আইনি সুরক্ষা ও ক্ষতিপূরণ পাবেন?
দুর্ঘটনা ঘটলে প্রথম কাজ হলো এফআইআর (FIR) দায়ের করা। এরপর মেডিকেল রিপোর্ট, সাক্ষীর বক্তব্য এবং দুর্ঘটনার বিবরণ সংগ্রহ করতে হবে। এই সমস্ত নথি MACT (মোটর অ্যাক্সিডেন্ট ক্লেম ট্রাইবুনাল)-এ জমা দিতে হবে।
ক্ষতিপূরণের উৎস: ভারতে সমস্ত রেজিস্টার্ড গাড়ির থার্ড-পার্টি ইন্স্যুরেন্স থাকা বাধ্যতামূলক। এই ইন্স্যুরেন্স থেকেই আহত পথচারীর চিকিৎসার সব খরচ এবং দুর্ঘটনার ফলে হওয়া অন্য ক্ষতিও পুষিয়ে দেওয়া হয়।
দোষ প্রমাণ না হলেও টাকা! ‘নো-ফল্ট লাইবিলিটি’
আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ‘নো-ফল্ট লাইবিলিটি’।
মোটর ভেহিকল অ্যাক্টের সেকশন ১৪০ ও সেকশন ১৬৩এ বলছে, দুর্ঘটনার জন্য কার দোষ, তা প্রমাণ না হলেও আপনি প্রাথমিক ক্ষতিপূরণ পাবেন।
দুর্ঘটনায় ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ক্যাশলেস চিকিৎসা:
ভারতের প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরোর সাম্প্রতিক আপডেট অনুযায়ী:
দেশে যে কোনও মোটর গাড়ির সঙ্গে দুর্ঘটনায় আহত প্রত্যেক ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত চিকিৎসার খরচ পাবেন।
দুর্ঘটনার তারিখ থেকে ৭ দিনের মধ্যে এই টাকা পাওয়া যায়। এর ফলে দুর্ঘটনাগ্রস্ত ব্যক্তিদের দ্রুত সঠিক চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে।
‘হিট-অ্যান্ড-রান’ হলে কী হবে?
যদি কোনও ‘হিট-অ্যান্ড-রান’ হয়, অর্থাৎ গাড়ি শনাক্ত না করা যায়, সেক্ষেত্রে সরকার পরিচালিত সোলোটিয়াম স্কিম (Solatium Scheme) রয়েছে।
এই স্কিম অনুযায়ী, মৃত্যুতে ২ লক্ষ টাকা এবং স্থায়ী অক্ষমতার জন্য ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায়। এটি একটি কেন্দ্রীয় তহবিল থেকে দেওয়া হয়।
গুরুত্বপূর্ণ নোট: যদি তদন্তে দেখা যায় ওই ব্যক্তি নিজেও অসতর্ক ছিলেন, তাহলেও ক্ষতিপূরণ কমবে। তবে ক্ষতিপূরণ একেবারে বাতিল হবে না। মদ্যপ অবস্থায় বা বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালালে চালকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলাও হতে পারে।