চন্দননগরের বসু পরিবারের রুশ বউমা ভিক্টোরিয়া ঝিগালিনা তার সন্তান স্ট্যাভিওকে নিয়ে রাশিয়ায় পালিয়ে গেছেন বলে কেন্দ্রের দাবিকে ঘিরে এবার তীব্র রোষের মুখে পড়ল দিল্লি পুলিশ। শুক্রবার বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ পর্যবেক্ষণ করে জানিয়েছে যে, দিল্লি পুলিশের গাফিলতির কারণেই ভিক্টোরিয়া ও তার সন্তান ভারত ছাড়তে সক্ষম হয়েছেন। একই সঙ্গে শীর্ষ আদালত এবার এই মামলার তদন্ত রাশিয়ায় পরিচালনা করার নির্দেশ দিয়েছে।
আদালতের ক্ষোভ ও গাফিলতির অভিযোগ:
শুনানি চলাকালীন ডিভিশন বেঞ্চ স্পষ্ট জানায় যে, দিল্লি পুলিশকে শীর্ষ আদালত ভিক্টোরিয়া এবং তার সন্তানের ওপর কড়া নজরদারি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু দিল্লি পুলিশ সেই নির্দেশ মানেনি, যার জেরেই স্ট্যাভিওকে নিয়ে ভারত থেকে পালাতে পেরেছেন ভিক্টোরিয়া। আদালত দিল্লি পুলিশের এই নিষ্ক্রিয়তায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
তদন্তভার মস্কোয় ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের হাতে:
কেন্দ্রের মতে, ভিক্টোরিয়া প্রথমে দিল্লি থেকে ট্যাক্সিতে বিহার, সেখান থেকে নেপাল, পরে বিমানে শারজা এবং তার পরে সম্ভবত মস্কোয় চলে গেছেন। এই পরিস্থিতিতে শীর্ষ আদালতের পক্ষ থেকে মস্কোয় নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে এই ঘটনার তদন্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী বলেন, “তিনি (ভারতীয় রাষ্ট্রদূত) নিজে গোটা ঘটনার তদন্ত করবেন। সেখানকার প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলবেন।”
সুপ্রিম কোর্টের কড়া হুঁশিয়ারি:
আদালত ভিক্টোরিয়ার দেশ ছেড়ে পালানোর ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী কড়া ভাষায় বলেন, “আমরা কেন্দ্রীয় সরকারকে সাফ জানাতে চাই, ভুলে গেলে চলবে না বাচ্চাটি দেশের সুপ্রিম কোর্টের হেফাজতে ছিল। আমাদের হেফাজত থেকে বাচ্চাটিকে নিয়ে ফেরার হয়ে গিয়েছেন তাঁর মা। আমরা চুপ করে থাকব না। এর শেষ দেখব। এই মর্মে অত্যন্ত কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার আগে আমরা প্রশাসনকে বলব ইন্টারপোল, রাশিয়ার সঙ্গে কথা বলে শিশুটিকে কী ভাবে দেশে ফেরানো যায়, তার ব্যবস্থা করতে।”
এই মামলার পরবর্তী শুনানি দশ দিন পরে অনুষ্ঠিত হবে।
মামলার পটভূমি:
চিনে কাজ করার সময় সৈকত বসু এবং ভিক্টোরিয়া ঝিগালিনার আলাপ হয়। ২০১৭ সালে তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন এবং এরপর ভারতে চলে আসেন। ২০২০ সালে তাদের সন্তান স্ট্যাভিও-র জন্ম হয়। সৈকতের বাবা সমীর বসু, যিনি ভারতীয় নৌসেনার প্রাক্তন কর্তা, অভিযোগ করেছেন যে, ভিক্টোরিয়ার বাবা রুশ স্পাই এজেন্সি ‘FSB’-তে কাজ করতেন এবং ভিক্টোরিয়া নিজেও একজন রুশ গুপ্তচর। চলতি বছরের ৭ই জুলাই স্ট্যাভিওকে নিয়ে উধাও হয়ে যান ভিক্টোরিয়া। এর পরেই সৈকত বসু সুপ্রিম কোর্টে এই মামলা দায়ের করেন। এই ঘটনা আন্তর্জাতিক মহলে কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রশ্ন উত্থাপন করেছে।