ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনী বা এসআইআর (SIR) প্রক্রিয়া শুরু হতেই রাজ্যের নাগরিকদের মধ্যে এক গভীর আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ল কলকাতা পুরসভা (Kolkata Municipality) অফিসে। শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ড অফিস এবং বার্থ অ্যান্ড ডেথ সার্টিফিকেট বিভাগে সকাল থেকেই উপচে পড়ছে মানুষের ভিড়। হাতে পুরনো নথি নিয়ে নতুন করে জন্ম শংসাপত্রের কপির জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন কাতারে কাতারে মানুষ।
📜 প্রমাণ থাকলেও কেন ভিড়?
অনেকেই জানিয়েছেন, তাঁদের কাছে বহু বছর আগের জন্ম সার্টিফিকেট রয়েছে। কিন্তু এসআইআর-এর প্রক্রিয়ায় নাগরিকত্ব ও নথি যাচাইয়ের বিষয়টি কেন্দ্রীয় আলোচনায় আসায় অনেকের মনেই ভয় তৈরি হয়েছে।
লাইনের দাঁড়িয়ে থাকা এক নাগরিক বলেন, “পুরনো সার্টিফিকেট আছে, তবু ভয় লাগছে যদি কোথাও নথি অগ্রাহ্য হয়! তাই নতুন করে নিচ্ছি।” এই আতঙ্কই ভিড়ের প্রধান কারণ। শনিবার দুপুর তিনটের পরও পুরসভা অফিসের সামনে ছিল নাগরিকদের ভিড়।
💻 পরিস্থিতি সামলাতে পুরসভার নয়া সফটওয়্যার উদ্যোগ
এই অস্বাভাবিক ভিড় এবং আতঙ্ক সামলাতে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে কলকাতা পুর প্রশাসন। মেয়র ফিরহাদ হাকিম এবং ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষের নির্দেশে পুরসভা জরুরি ভিত্তিতে নতুন সফটওয়্যার তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে।
উদ্দেশ্য: হাসপাতাল বা নার্সিংহোমের পুরনো নথি থাকলে যাতে সহজে এবং দ্রুত জন্ম বা মৃত্যুর শংসাপত্র পাওয়া যায়।
সমন্বয়: এই বিষয়ে স্বাস্থ্যভবনের সঙ্গেও আলোচনা চলছে। স্বাস্থ্যদপ্তরের এক কর্তা জানিয়েছেন, “যদি কোনও নাগরিক পুরসভায় আসেন এবং রেকর্ড রুম বা বরো অফিসে তাঁর জন্মের নথি মেলে, তবে বার্থ সার্টিফিকেট দেওয়া হবে।”
আচমকা বহু ব্যবহারকারী চ্যাটবট সিস্টেমে লগ ইন করায় সফটওয়্যার ক্র্যাশ করার অভিযোগ ওঠায় নতুন সফটওয়্যার তৈরির কাজ ত্বরান্বিত করা হয়েছে।
✅ মেয়র ফিরহাদ হাকিমের আশ্বাস ও নজরদারি
মেয়র ফিরহাদ হাকিম ইতিমধ্যেই নাগরিকদের আশ্বাস দিয়েছেন:
“যাঁদের প্রামাণ্য নথি আছে, স্বাস্থ্যভবনের সঙ্গে আলোচনা করে তাঁদের জন্ম শংসাপত্র দেওয়া হবে।”
পুরসভা এই ভিড়ের সুযোগে সক্রিয় দালালদের হাত থেকে নাগরিকদের রক্ষা করতে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। শনিবার সকালে শীর্ষ পুরকর্তারা পরিদর্শনে গিয়ে দেখেন, স্বাস্থ্য বিভাগের কম্পিউটারে স্ক্যান করে প্রতিটি নথির সত্যতা যাচাই করা হচ্ছে। পুরসভার এক বিভাগীয় আধিকারিক জানান, “প্রতিদিন ৩০০টি আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছে। নথি যাচাই করে পাঠানো হচ্ছে স্বাস্থ্য ভবনে। সেখান থেকে অনুমোদন পেলেই সার্টিফিকেট দেওয়া হবে।”
পুরসভার তরফ থেকে বারবার আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে যে, যাঁদের প্রামাণ্য নথি আছে, তাঁদের সমস্যা হবে না। প্রতিটি সার্টিফিকেটে পুরসভার বিশেষ জলছবি বা ওয়াটারমার্ক থাকায় জালিয়াতিও কার্যত অসম্ভব। তবুও সাধারণ মানুষের মধ্যে এসআইআর-এর প্রভাবজনিত আতঙ্ক কাটছে না।