কলকাতায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ১,১০৬, নিম্নমুখী হবে সংক্রমণের গ্রাফ, আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ পতঙ্গ বিশারদদের

শহর কলকাতায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,১০৬ জন। শেষ সপ্তাহে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১০০-র কাছাকাছি ছিল। তবে, এই পরিসংখ্যান নিয়ে আতঙ্কিত বা চিন্তিত হতে বারণ করছেন পতঙ্গ বিশারদ ও পৌর উপদেষ্টা চিকিৎসক দেবাশিস বিশ্বাস। তাঁর কথায়, এখন থেকে আক্রান্তের গ্রাফ নিম্নমুখী হবে। তাই আতঙ্কিত হওয়ার বদলে সচেতন থাকার প্রয়োজন।

আক্রান্তের হার ও তুলনামূলক চিত্র:

গত বছর মশাবাহিত রোগ আক্রান্তের সংখ্যা শুধু কলকাতা বা পশ্চিমবঙ্গে নয়, গোটা দেশেই আকস্মিকভাবে অত্যন্ত কম ছিল। তাই আক্রান্তের তুলনামূলক বিচার ২০২৪ সালের সঙ্গে না করে, দেশজুড়ে ২০২৩ সালের পরিস্থিতির সঙ্গে করা হচ্ছে। সেই হিসেবে তুলনা করলে, চলতি বছরে কলকাতায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ৯১ শতাংশ কম। যদিও পুজোর পরবর্তী সময়ে শহরে বিদ্যুৎ গতিতে মশাবাহিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছিল। মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য)-এর এলাকায় এক শিশুর ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়ালেও কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম স্পষ্ট জানিয়েছেন, “স্বাস্থ্য ভবনের তরফে এমন কিছু বলা হয়নি, অর্থাৎ ডেঙ্গি আক্রান্ত হওয়ার কারণেই মৃত্যু—তেমনটা নয়।”

কোন বরোয় ডেঙ্গির দাপট বেশি?

কলকাতা কর্পোরেশন সূত্রে জানা গিয়েছে, নভেম্বরের শুরুতে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা কলকাতায় ১,১০৬ জন। এক সপ্তাহে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৮৯ জন। শহরের ১৬টি বরো-র দিকে নজর দিলে, সবচেয়ে কম মাত্র ৭ জন ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়েছেন ২ নম্বর বরোতে। অন্যদিকে, পুর কর্তৃপক্ষের সব থেকে বড় মাথাব্যথার কারণ হয়েছে ১০ নম্বর বরো, যেখানে ইতিমধ্যেই ১৭০ জন আক্রান্ত হয়েছেন।

মশাবাহিত রোগের নতুন প্রবণতা:

মশাবাহিত রোগ নিয়ে শহরে এক নতুন প্রবণতা উঠে এসেছে। শহরের উত্তর অংশে ম্যালেরিয়ার আধিক্য বেশি, যেখানে দক্ষিণের ওয়ার্ডগুলিতে ডেঙ্গির আধিক্য বেশি। পৌর কর্তৃপক্ষের দাবি, এমন ছবি অতীতে কখনো দেখা যায়নি। বর্তমানে কলকাতার ম্যালেরিয়া আক্রান্তের ৮৫-৮৬ শতাংশ উত্তর কলকাতার (১ নম্বর থেকে ৮ নম্বর বোরো এলাকা) ওয়ার্ডগুলির বাসিন্দা। অন্যদিকে, মোট ডেঙ্গি আক্রান্তের ৬৮-৭০ শতাংশ দক্ষিণের (৯ নম্বর থেকে ১৬ নম্বর বোরো এলাকা) ওয়ার্ডগুলির বাসিন্দা।

কারণ ও মোকাবিলা:

কলকাতা কর্পোরেশনের পতঙ্গ বিশারদ চিকিৎসক দেবাশিস বিশ্বাস এই প্রবণতার কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, উত্তর কলকাতায় পরিযায়ী শ্রমিকের আনাগোনা প্রচুর পরিমাণে। বহু মানুষ রাতে রাস্তায় ঘুমান। তাঁদের মধ্যে একজনও ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হলে মুহূর্তে বাকিদের মধ্যে তা ছড়িয়ে যায়। দক্ষিণ কলকাতায় নির্মাণকাজ ও খালি জমি বেশি থাকায় সেখানে জমা জল ডেঙ্গির মশা জন্মানোর আদর্শ ক্ষেত্র তৈরি করে।

তবে তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন, “নাগরিকদের আক্রান্তের পারদ আর বেশি ঊর্ধ্বমুখী হবে না। ফলে চিন্তার বিষয় নেই। অতীতের তুলনায় এই বার অনেকটাই কম আক্রান্তের সংখ্যা।” তিনি আরও জানান, তাপমাত্রা কমছে এবং আবহাওয়ার এই বদল মশা ডিম পাড়া বা বংশ বৃদ্ধির জন্য প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি করছে। কর্পোরেশন আরও মাসখানেক নজরদারি চালাবে। তাঁর চূড়ান্ত পরামর্শ, আতঙ্কে নয়, সচেতন থাকলেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy